তাঁদের কাছে পৃথিবী একটা পরিবার

তিন দিনব্যাপী তৃতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই উৎসব শেষ হবে আজ। গতকাল সংগীত পরিবেশন করেন নেপালের গানের দল কুটুম্বা পরিবেশনার আগে প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন তাঁরা।

কুটুম্বার সদস্যরা l ছবি: কবির হোসেন
কুটুম্বার সদস্যরা l ছবি: কবির হোসেন

কুটুম্বা মানে পরিবার। পুরো পৃথিবীকে তাঁরা একটা পরিবার মনে করেন। তাই নিজেদের শিকড়ের গান নিয়ে ছুটে বেড়ান এই স্বজনের বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে। নেপালের গানের দল ‘কুটুম্বা’ এভাবেই নিজেদের দলের চরিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমাদের। দলের পক্ষ থেকে সারেঙ্গিবাদক কিরণ নেপালি বলছিলেন কুটুম্বা নিয়ে এই কথাগুলো। গতকাল দুপুরে কুটুম্বা দলের ছয় সদস্য প্রথম আলোর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে।

আড্ডায় কুটুম্বা দলের জন্মকাহিনি শোনা হয়। দলের পারকাশনবাদক পাভিত মহারাজন বলেন, আজ থেকে বছর ১৩ আগের গল্প। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলেন ভারতীয় আর পশ্চিমা সংগীতের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে শুধু নিজেদের গান গাইবেন তাঁরা। নেপালের নানা অংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোকগানের ধারাকে তুলে আনবেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা কুটুম্বা শুরু করেন। কিন্তু বছরখানেক প্রস্তুতির পর যখন সময় আসে নেপালি ফোক গান নিয়ে মঞ্চে ওঠার, তখনই সবচেয়ে বড় বাধার মুখে পড়ে কুটুম্বা। নেপালে জারি হয় জরুরি অবস্থা। ২০০৫ সালের কথা এটা। শুরুতেই বিপত্তি। তবে এরপর ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করে দলটি। নেপালের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তুলে আনতে শুরু করে হারিয়ে যাওয়া লোকগানের সুর।

কুটুম্বা তাদের নিজেদের মাটির সুর দিয়ে এখন পৌঁছে গেছে নানা দেশে। বছরে দেশ ও দেশের বাইরে দলটি শ–দেড়েক অনুষ্ঠান করে। বাংলাদেশের আনুশেহ আনাদিলের সঙ্গে একবার একই মঞ্চে গান পরিবেশনের সুযোগ হয়েছিল কুটুম্বার। তখনই বাংলাদেশের লোকগানের ব্যাপারে প্রথম ধারণা হয় তাদের। দলের সদস্য অরুণ মননধর বলেন, ‘তখন বুঝতে পারি আসলেই এই পুরো পৃথিবীটা একটা পরিবার। আমাদের লোকগানের ভেতর যে অদ্ভুত সামঞ্জস্য আছে, তাতে এটা স্পষ্ট।’ কুটুম্বার সদস্যরা এভাবেই বলতে থাকেন তাঁদের গল্প, পৃথিবীকে একটা গ্রাম বানিয়ে ফেলার গল্প।