টিলডার কাছে ঢাকা এক স্মৃতিময় শহর
টিলডার দাদার বাবা জর্জ সুইনটন ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল যিনি ছিলেন, তাঁর একান্ত সহকারীদের একজন ছিলেন জর্জ। তাই এই উপমহাদেশের সঙ্গে অস্কারজয়ী টিলডা সুইনটনের সম্পর্কটা আজকালের নয়, শত বছরের পুরোনোই বলা যায়। গতকাল শুক্রবার ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭-এর ‘পারফরম্যান্সেস অ্যাজ অথরশিপ’ সেশনে এসে টিলডাও স্বীকার করলেন শত বছরের পুরোনো এই সম্পর্কের কথা। শুধু এটাই না, টিলডার আরও অনেক পুরোনো সম্পর্কই নতুন করে ঝালাই হলো ঢাকার বাংলা একাডেমির মাঠে এসে।
টিলডার দূরসম্পর্কের ভাই স্কটিশ লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পালও এবারের ঢাকা লিট ফেস্টের গুরুত্বপূর্ণ একজন বক্তা। কয়েক বছর পর ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হলো ঢাকায় এসে। ছোটবেলার বন্ধু লেখক ইস্থার ফ্রয়েডের দেখাও টিলডা পেলেন বাংলা একাডেমির মাঠে, প্রায় ৩১ বছর পর। মঞ্চে এসব সুখস্মৃতির কথা বাংলাদেশের শ্রোতাদের শোনাচ্ছিলেন টিলডা।
গতকাল ঢাকা লিট ফেস্টে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয় টিলডা সুইনটনের সেশনটি। এটি সঞ্চালনা করেন লেখক আহসান আকবর। একাধারে অভিনেত্রী, পরিচালক, লেখক, শিল্পী—নানা পরিচয়ে পরিচিত টিলডা শোনান তাঁর পথচলার নানা ধাপের কথা। কথার ফাঁকে বলে রাখেন, ‘কেউ আমাকে হলিউডের অভিনেত্রী হিসেবে ডাকলে বড্ড অদ্ভুত লাগে! এই পরিচয়ে অস্বস্তি লাগে আমার।’ মিলনায়তনভর্তি দর্শকের মনে তখন ভর করে বিস্ময়। সেরা পার্শ্ব–অভিনেত্রী হিসেবে যে টিলডা ২০০৭ সালে মাইকেল ক্লেটন ছবির জন্য জিতেছেন অস্কার; যাঁর ঝুলিতে আছে অরল্যান্ডো, উই নিড টু টক অ্যাবাউট কেভিন, দ্য ক্রনিক্যালস অব নার্নিয়া, দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ-এর মতো ব্যবসাসফল ছবি, সেই টিলডাই কিনা গ্রহণ করতে চাইছেন না ‘অভিনেত্রী’র সম্বোধন? তাহলে কী পরিচয়ে তাঁকে তুলে ধরা যায়? জবাবটা টিলডাই দিলেন। বললেন, লেখালেখি করতে গিয়ে নিজেকে তিনি বুঝতে শিখেছেন, চিনতে শিখেছেন। তাই লেখক কিংবা শিল্পী পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্য টিলডার।
লেখালেখির প্রসঙ্গ উঠতেই লেখক টিলডা একটা অনুরোধ করেন, ‘তোমরা যারা লিখতে পারো, তারা কখনো লেখালেখিটা ছেড়ো না। আমি ভুল করেছিলাম। ১৫ বছর লেখালেখি করিনি। এখন বুঝি, কতটা সময় আমি হারিয়েছি।’ অভিজ্ঞতা জানানোর ফাঁকে টিলডা সুইনটন তাঁর বাবাকে নিয়ে লেখা ‘মাই ওল্ড ম্যান’ নামের একটি কবিতাও পড়ে শোনান। গল্প শোনান বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতি মেনে তৈরি করা তাঁর ‘ড্রামডুয়ান আপার স্কুল’-এর কথা। এই স্কুলে নেই কোনো পরীক্ষা, নেই কোনো বেঞ্চ, ব্যাগ ভরে নেওয়ার ঝক্কি কিংবা ‘হোমওয়ার্ক’-এর চাপ। সেখানে বছরজুড়ে শিক্ষার্থীরা হাতে–কলমে মাঠে ফসল ফলায়, নিজেরাই তা দিয়ে রান্না করে, বাড়ি বানায়, নৌকা বানায়। এরপর বছর শেষে সেই অভিজ্ঞাতগুলো জড়ো করে লেখে একটা বই। সেটা তাদের পুরো বছরের পড়াশোনার ফল। সেই স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন টিলডা সুইনটন। নিজের হলিউডি অভিনয়জীবনের অভিজ্ঞতার চেয়ে তিনি সেই স্কুলের গল্পই ঢাকায় এসে শোনালেন বেশি।