ফিরছে রক গানের দিন

রক গানের এই আজকের চেহারা করে দিয়েছে দেশের বদলে যাওয়া গানের বাজার। একে তো বাজারটা ছোট, তার ওপর মানুষের বহু ঘরানার পছন্দ। ফলে তরুণদের কাছে যেই রক পছন্দের, সেটিকে ঠিক সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আর্বোভাইরাস
আর্বোভাইরাস

সে অনেক কাল আগের কথা। ‘আউল-বাউল-লালনের দেশে’ মাইকেল জ্যাকসন এসেছিলেন। সবার মাথা খেয়েছিলেন। তারপর? মাথা-খাওয়া সেই শিল্পীরা গেলেন কোথায়? তাঁরা কি সবাই ঘরে উঠেছেন? হঠাৎ করে কিন্তু বেজে উঠতে শোনা যায় কখনো-সখনো। কিন্তু সব সময়ের জন্য কেন নয়? গান ছাড়া বাঙালির কি চলে একটি মুহূর্ত? নাকি পপ বা রকের দিন ফুরিয়েছে?

মেকানিকস
মেকানিকস

দিন ফুরোক বা না ফুরোক, ভাটা যে খানিকটা পড়েছে, তা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেই করবে। খোলা ময়দানে আগের মতো কনসার্ট, বিশেষ করে রক গানের কনসার্ট খুব একটা হতে দেখা যায় না। হবেই বা কী করে? মাঠ কমে যাচ্ছে একের পর এক। অথচ সারা দুনিয়ায় কনসার্টের জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন সব ভেন্যু। বিশেষ করে রক-মেটাল গানের জন্য একটু বড়সড় জায়গা না হলে তো চলে না। রকের সঙ্গে একটু উত্তাল নৃত্যের যোগ আছে যে! আমাদের দেশ কেন থেমে থাকবে? রকের দিন ফেরাতে তাই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের বিনোদনমূলক মঞ্চানুষ্ঠানের আয়োজক ব্লুজ কমিউনিকেশনস। প্রায় সব শ্রেণির শিল্পীদের সঙ্গে সব শ্রেণির সংগীতপ্রেমীদের নিয়মিত মিলিয়ে দেওয়ার কাজটিকে ইতিমধ্যে শিল্পসৌন্দর্য দিয়েছে তারা। উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব, সুফি ফেস্ট, জ্যাজ অ্যান্ড ব্লুজ ফেস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির এবারের ভাবনা রক নিয়ে। ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম বলছিলেন, ঢাকায় বছরে অন্তত তিনটি রক গানের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। শিগগির হয়তো ভাবতে বসবেন, এগুলোকে ঢাকার বাইরে নেওয়া যায় কি না।

পাওয়ার সার্জ
পাওয়ার সার্জ

আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির এক্সপো জোনে শুরু হচ্ছে রক গানের বড় একটি আসর—‘বিগ রক ডে’ প্রথম পর্ব। হয়তো ছাইরঙা টিকিটগুলো ইতিমধ্যে বহু তরুণের পকেটে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়ারফেইজ, নেমেসিস, আর্টসেল, শূন্য, ভাইকিংস, আর্বোভাইরাস, মেকানিকস ও পাওয়ার সার্জের মতো বড় দলগুলো যে মঞ্চে একসঙ্গে মিলবে, সেই আয়োজন থেকে নিশ্চয়ই বঞ্চিত হতে চাইবেন না রকপ্রেমীরা। কিন্তু নিয়ম করে কেন তাঁদের দেখা মিলছে না? এ প্রসঙ্গে একধরনের মত পাওয়া গেছে ওয়ারফেইজের শেখ মনিরুল আলম টিপুর কাছ থেকে। তিনি মনে করেন, ভেন্যুর স্বল্পতা ও নিরাপত্তার কারণে অনুমতি পাওয়া যায় না বলেই কমে গেছে উন্মুক্ত কনসার্ট। এমনও হতে দেখা গেছে, সব প্রস্তুতির পর কনসার্ট বাতিল করতে হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতি মেনে বারবার কনসার্ট আয়োজন করা কঠিন। সে জন্যই হয়তো কমে গেছে কনসার্ট, কিন্তু বন্ধ হয়নি।

আর্বোভাইরাসের সুফি মনে করেন, রক গানের এই আজকের চেহারা করে দিয়েছে দেশের বদলে যাওয়া গানের বাজার। একে তো বাজারটা ছোট, তার ওপর মানুষের বহু ঘরানার পছন্দ। ফলে তরুণদের কাছে যেই রক পছন্দের, সেটিকে ঠিক সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে সংগীত প্রযোজকদের শক্ত ভূমিকা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

ভাইকিংস
ভাইকিংস

বাংলাদেশের রক গানের দল পাওয়ারসার্জের নাহিয়ান মনে করেন, প্রতিনিয়ত নিজেরা নিজেদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের মতো দলগুলো। কিন্তু হাজারো শ্রোতার সামনে গাইতে না পারলে রক শিল্পীদের স্বস্তি মেলে না। একটু পৃষ্ঠপোষকতা, প্রাতিষ্ঠানিক বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণের সুযোগ ও খোলা ময়দানে নিয়মিত কনসার্টের আয়োজন দেশে রক গানের চর্চাকে এগিয়ে নেবে।

শূন্য
শূন্য

হঠাৎ দু-একটি আয়োজন থেকে আঁচ করা যায়, তরুণেরা রক শুনতে চান। বাজাতে ও গাইতেও চান। দেশের হেভি মেটাল গানের দলগুলো প্রস্তুত। ভেন্যু, পরিবেশ, নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি কিন্তু অন্যদের।

ওয়ারফেইজ
ওয়ারফেইজ