হাওয়া বইছে, বইবে...
সংগীতশিল্পী নতুন গান করেছেন। বেরিয়েছে সেই গানের ভিডিও। এরপর সেই ভিডিও দেখা হচ্ছে। গানের জগতে এখন এমন গতানুগতিক খবরের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই ধারার হাওয়া কয়েক বছর আগে বদলাতে শুরু করে। হাওয়াবদলের ডাক আসে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর মধ্য দিয়ে। ভিন্ন ধারার এ অনুষ্ঠান ২০১৭ সালেও গানের জগতে প্রভাব ফেলেছে। ২ বছরের প্রি-সিজনের (প্রাক্-মৌসুম) ধাপ পেরিয়ে গত বছরই অনুষ্ঠানটি তাদের প্রথম সিজন শুরু করল। তাই আজ বদলের ডাক দেওয়া ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর গত বছর আর সামনের দিনগুলোর হিসাব মেলাব।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ অনুষ্ঠানটির যাত্রা। শুরু থেকেই বাংলা গানের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের নানা দেশের মিউজিশিয়ানদের এ অনুষ্ঠান এক মঞ্চে এনেছে। গড়েছে সুরের মেলবন্ধন। গান বাংলা চ্যানেলের এ অনুষ্ঠান যেমন টিভি সেটের সামনে থাকা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে, তেমনটি ইউটিউব প্রজন্মকেও ফিরিয়ে এনেছে শিকড়ের সুরে। শুধু নানা দেশ নয়, এক করেছে নানা প্রজন্মের শিল্পীকেও। বারী সিদ্দিকীর সঙ্গে বাজিয়েছেন এ প্রজন্মের জালাল। রবীন্দ্রসংগীত কিংবদন্তি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন রাশিয়ার সোপরানো শিল্পী এমিলিয়া অ্যানা। এমন আরও কত উদাহরণ।
ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, সুবীর নন্দী, খুরশিদ আলম, অদিতি মহসীন, এন্ড্রু কিশোর, ফকির আলমগীর, জানে আলম, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরীর মতো গুণী শিল্পীরা তাঁদের গায়কিকে আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে কালজয়ী গানে প্রাণ দিয়েছেন নতুন করে। এমনকি আমাদের শিকড়ের গানকে এ আসরের মধ্য দিয়েই পুরো পৃথিবীর সামনে আধুনিক রূপে তুলে ধরেছেন চিশতি বাউল, কালা মিয়া, কুদ্দুস বয়াতির মতো শিকড়সন্ধানী শিল্পীরা। পিছিয়ে ছিলেন না তরুণ প্রজন্মের প্রিয় বাপ্পা মজুমদার, হাবিব ওয়াহিদ, হৃদয় খান, অদিত, মিলা, কনা, এলিটা, ঐশী, তাশফি, প্রতীক, প্রীতমেরাও। তবে গান বাংলা চ্যানেলের প্রধান শিল্পী কৌশিক হোসেন তাপসের বার্তাটি হলো, শুধু কণ্ঠশিল্পী নয়, তাঁদের গড়া এ প্ল্যাটফর্মটি মূলত সংগীতশিল্পীদের, অর্থাৎ গায়ক ও বাজিয়ে সবার। গানের পাশাপাশি একজন মিউজিশিয়ান বা বাজিয়েও প্রতিটি পরিবেশনার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ, সমান সম্মান প্রাপ্য। তাই তো এ অনুষ্ঠানটি যেমন শ্রোতাদের কাছ থেকে পাচ্ছে ভালোবাসা, তেমনি সংগীতাঙ্গনেও কুড়িয়েছে প্রশংসা।
গত বছরটা ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর জন্য ছিল বিশেষ। কারণ টিভি ও ইউটিউবে পাওয়া সাফল্যের জের ধরেই ওয়ান মোর জিরো গ্রুপের এ প্রচেষ্টা তাদের প্রথম সিজন শুরু করার সাহস পায়। তাই তো গত বছরের জুন মাসে প্রচারিত হয় এর প্রথম সিজন। এতে দেশের গুণী ও জনপ্রিয় শিল্পীদের সঙ্গে অংশ নেন প্রায় ২০ জন ভিনদেশি মিউজিশিয়ান। যুক্তরাষ্ট্র, লাটভিয়া, ভারত, রাশিয়া থেকে একেকজন উড়ে এসেছেন শুধু এই ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর টানে। কারণ এর আগের দুই প্রাক্-মৌসুম দিয়ে ভিনদেশি শিল্পীদের মনে প্রভাব ফেলেছিল বাংলা গানের এ আয়োজনটি। একই বছর সফলভাবে এর দ্বিতীয় মৌসুমও প্রচারিত হয়। আর বছরের শেষ নাগাদ দেশে-বিদেশে সবখানে ছড়িয়ে পড়ে গানের এ আয়োজনটির নাম।
নতুন বছরে আসি। গানের হওয়াবদল নিয়ে জানতে কিছুদিন আগে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব দেওয়া শিল্পী কৌশিক হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বদলের হাওয়া যেমন বইছিল, নতুন বছরে সেই বদলের হাওয়ায় জোর আরও বাড়বে। কারণ, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অনুষ্ঠান তো আগে সীমারেখা ছাড়িয়েছিল, এখন সব সীমারেখাকে মুছে ফেলতে যাচ্ছে অনুষ্ঠানটি। তৃতীয় মৌসুমে গিয়ে শ্রোতাদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় বড় চমক। কী সেই চমক? তার একটু আঁচ দিতে বললে কৌশিক হোসেন একটু আভাস দেন। জানান, কিছুদিন আগে গিয়েছিলেন ভারতের কলকাতায়। সেখানকার সংগীতশিল্পীরা দারুণ আগ্রহ প্রকাশ করছেন যে তাঁরা বাংলাদেশে এসে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’-এর মঞ্চে গাইতে চান। তাই এই মঞ্চ তাঁদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে কি না, এ নিয়ে চলছে চিন্তাভাবনা।
ভাবনার চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে কবে নাগাদ? এ প্রশ্নের জবাবে জানা যায়, তৃতীয় মৌসুমে। যদি ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ আগের প্রকৃতিতেই থাকে, তাহলে ভিনদেশি শিল্পীদের জন্য হয়তো সামনে নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম তৈরির স্বপ্ন দেখছেন এ শিল্পী।
সামনে আসছে আরও কিছু চমক। যার মধ্যে একটির কথা বললেন অনুষ্ঠানের শিল্পী নির্দেশক ও আলো-মঞ্চসজ্জার পেছনে থাকা ব্যক্তিটি। তিনি গান বাংলা চ্যানেলের চেয়ারপারসন ফারজানা মুন্নী। তিনি বলেন, শুধু গানেই নয়, ভিন্নতা থাকে গানের পরিবেশনেও। গত দুই মৌসুম ও এর আগের প্রাক্-মৌসুমগুলোয় যেমনভাবে দেখা গেছে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’, তা বদলে যাবে তৃতীয় ধাপে এসে। তাই ইন্দ্রিয়গুলোকে আরও ঝালিয়ে নিন, কারণ বদলের যে হাওয়া শুরু হয়েছিল গত বছর, সেই হাওয়া এ বছরও বইবে।