যেখানে প্রতিবাদ, সেখানেই বৈষম্য!

সব বৈষম্য ছাপিয়েও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। তিনি এ পর্যন্ত ৩১ বার গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পেয়েছেন ও পুরস্কার জিতেছেন ৮ বার। মনোনয়ন ও জয় দিয়ে তাঁকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তিনি এই আসরের সবচেয়ে বড় সম্মাননা সেসিল ডিমিল পেয়েছেন গত বছর।
সব বৈষম্য ছাপিয়েও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। তিনি এ পর্যন্ত ৩১ বার গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পেয়েছেন ও পুরস্কার জিতেছেন ৮ বার। মনোনয়ন ও জয় দিয়ে তাঁকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তিনি এই আসরের সবচেয়ে বড় সম্মাননা সেসিল ডিমিল পেয়েছেন গত বছর।

হার্ভি ওয়াইনস্টিন-কাণ্ড ফাঁস হওয়ার পর থেকে তোলপাড় পড়ে গেছে হলিউডে। নারী অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন হলিউডের চেয়ে সোচ্চার ক্ষেত্র আর নেই। এরই মধ্যে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড আসরে প্রতিবাদস্বরূপ নায়িকাদের কালো পোশাক পরা নিয়ে তো হইচই সবখানে। টাইমস আপ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও যৌন হয়রানি ঠেকাতে নায়িকাদের এককাট্টা হওয়ার ঘটনা হলিউডের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে জানেন কি, যে গোল্ডেন গ্লোব আসর থেকে শুরু হলো নারীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা, সেখানেই কিন্তু নারী-পুরুষে দারুণ বৈষম্য। গত ২৫ বছরের বিজয়ী তালিকা ঘেঁটে দেখা গেল মাত্র ১২ শতাংশ নারী জয়ের স্বাদ পেয়েছেন এই গোল্ডেন গ্লোব আসরে।

সম্প্রতি ফ্যাশন সাময়িকী গ্ল্যামার একটি জরিপ করেছে। সেই জরিপটিই রীতিমতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে হলিউডে পুরুষ কলাকুশলীদের চেয়ে নারীরা কতটা পিছিয়ে। সেরা নির্মাতা, সেরা চিত্রনাট্যকার, সেরা আবহসংগীত ও সেরা গান—চারটি বিভাগকে বলা হয়ে থাকে ‘জেন্ডার নিউট্রাল’ বা ‘লিঙ্গ-নিরপেক্ষ’ বিভাগ। এই বিভাগগুলোতে নারী-পুরুষনির্বিশেষে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেখানে আদতে যুগের পর যুগ শুধু পুরুষেরই জয়জয়কার। গ্ল্যামার–এর গত ২৫ বছরের জরিপ তো তা-ই বলে।

গোল্ডেন গ্লোব জয়ী একমাত্র নারী নির্মাতা বারবারা স্ট্রেইসেন্ড
গোল্ডেন গ্লোব জয়ী একমাত্র নারী নির্মাতা বারবারা স্ট্রেইসেন্ড

গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে বারবারা স্ট্রেইসেন্ডই একমাত্র নারী, যিনি ১৯৮৪ সালে প্রথম ও শেষবারের মতো সেরা নির্মাতা হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন গ্লোব। এমনকি এ বছর সেরা নির্মাতা বিভাগে কোনো নারী মনোনয়নই পাননি। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাডবাউন্ড ছবির ডি রিস ও লেডিবার্ড ছবির গ্রেটা গারউইগ অনেকের চেয়ে এগিয়েছিলেন। আশার কথা হলো, গ্রেটাকে লেডিবার্ড ছবির জন্য অন্তত সেরা চিত্রনাট্যকারের মনোনয়নটি দেওয়া হয়েছে। তিনিসহ আরও দুজন নারী এ বছর পেয়েছেন চিত্রনাট্যকার বিভাগে মনোনয়ন, যেখানে গত বছর এই বিভাগে কোনো নারী চিত্রনাট্যকারের নাম ছিল না।

৭৫তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের অফিশিয়াল পোস্টারে এবারের সঞ্চালক সেথ মেয়ার্স
৭৫তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের অফিশিয়াল পোস্টারে এবারের সঞ্চালক সেথ মেয়ার্স

২০০৫ সালের কথা বলি। সে বছর তো সেরা অভিনেত্রী ও পার্শ্ব-অভিনেত্রীর বিভাগ ছাড়া নারীদের কোনো অস্তিত্বই ছিল না গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়নে। ওই বছর ‘জেন্ডার নিউট্রাল’ চারটি বিভাগের কোনোটাতেই কোনো নারী কুশলী মনোনয়ন পাননি। এ নিয়ে খুব সমালোচনা হয়েছিল সেবার। ফলাফলস্বরূপ পরের বছর সেরা চিত্রনাট্যকার বিভাগে একজন লেখিকা ও সেরা গান বিভাগে দুজন গায়িকা মনোনয়ন পান।

এবার এ বছরে আসি। এ বছর যৌন হয়রানি ঠেকাতে ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য সবাই গোল্ডেন গ্লোব আসরে কালো পোশাক পরে সংহতি প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই সংহতি প্রকাশটাই কি যথেষ্ট? যেখানে এবারের মনোনয়নের তালিকার লিঙ্গ-নিরপেক্ষ বিভাগে ২৮ জন মনোনীতের মধ্যে আছেন মাত্র ৬ জন নারী। সূত্র: গ্ল্যামার।