'আমার ফিটনেস ছবি অনুযায়ী বদলাতে থাকে'

বলিউড সাম্রাজ্যে নিজের জায়গা বানালেও মুম্বাইয়ের বুকে এখনো পাকাপাকি থাকতে শুরু করেননি সিদ্ধার্থ মালহোত্রা। আজও তাঁর মন পড়ে থাকে নিজ শহর দিল্লিতে। সেখানেই আছেন এই বলিউড তারকার পরিবারের সবাই। আসছে ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে সিদ্ধার্থ মালহোত্রার অভিনীত ছবি আইয়ারি। নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত ছবিটি মুক্তির আগে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

এখনো দিল্লি মিস করেন?
হ্যাঁ, নিশ্চয় মিস করি। দিল্লিতে আমার পরিবার থাকে। তবে মুম্বাই এখন আমার অনেক বেশি আপন হয়ে উঠেছে। এখানে টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে ফিল্মি জগতের সবাই একটা পরিবারের মতো হয়ে উঠেছি। তবে দিল্লিতে আসা-যাওয়া চলতে থাকে। মুম্বাইতে আমি আর আমার কুকুর থাকি।
নিউ ইয়ার কীভাবে সেলিব্রেট করলেন?
বেশ ভালো কাটল। বন্ধুরা মিলে হইচই করে। চার দিনের ছুটি নিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম। বিচে নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করি।
শুধু ফ্রেন্ড! গার্লফ্রেন্ড ছিলেন না?
(সশব্দে হেসে) না, না! বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মজা হয়। আর আমাদের গ্রুপটাও বিশাল।
২০১৭ তো ভালোই কাটল। ২০১৮-এ কী কী ছবি উপহার দিতে চলেছেন?
২০১৮ শুরু হবে আইয়ারি দিয়ে। এই ছবিতে নীরজ পাণ্ডের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর আমি কারগিল যুদ্ধের একজন আর্মি অফিসারের বায়োপিকে কাজ করব। এ ছাড়া আরেকটা প্রেমের ছবিতেও অভিনয় করব। ছবির নাম এখনো ঠিক হয়নি।
একটার পর একটা সফল ছবির পরিচালক নীরজ পাণ্ডে। তাঁর মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমি নিজে চেয়েছিলাম নীরজের সঙ্গে কাজ করতে। দুই বছর আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি তখন বেবি ছবির কাজ করছেন। নীরজকে বলি, আমি তাঁর ছবিতে কাজ করতে ইচ্ছুক। কোনো ছবিতে যদি কাজের সুযোগ হয়, আমাকে যেন ডাকেন। ঠিক মাস ছয় পর নীরজের ফোন আসে। আইয়ারির কথা বলেন। নীরজ আমার প্রিয় পরিচালকদের মধ্যে একজন। ওয়েডনেস ডে, বেবি, স্পেশাল ছাব্বিশসহ আরও কয়েকটি ছবিতে তিনি কিছু না কিছু বার্তা দিয়েছেন। দর্শকদের চিন্তাভাবনার মধ্যেও কিছু পরিবর্তন এনেছেন। সব থেকে বড় কথা, নীরজ কখনো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবি বানান না। ছবির মধ্যে জোর করে মসলা ঢালেন না। গল্প অনুযায়ী চলেন। আইয়ারি ছবিটিও অন্য ধারার ছবি। এই ছবিতে নাসির স্যার (নাসিরুদ্দিন শাহ), অনুপম (খের) স্যার, মনোজজির (বাজপেয়ি) মতো তারকার সঙ্গে কাজ করাটা উপরি পাওনা।
আপনার বাবা চেয়েছিলেন আপনি আর্মিতে যান। আজ আর্মির পোশাকে আপনাকে দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন?
আর্মির ইউনিফর্মে আমাকে দেখে বাবা অত্যন্ত খুশি এবং রোমাঞ্চিত হন। আমার দাদু আর্মিতে ছিলেন। বাবা ছোটবেলা থেকে দাদুকে আর্মির পোশাকে দেখেছিলেন। তাই কোথাও ইচ্ছে ছিল, নিজের ছেলেকে এই পোশাকে দেখতে।
‘আইয়ারি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
আমার ফিটনেস ছবি অনুযায়ী বদলাতে থাকে। আইয়ারি ছবির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এই ছবিতে সে রকম অ্যাকশন নেই। পেশি দেখানোর ব্যাপারও নেই। এই ছবির জন্য আমি জওয়ানদের মতো করে ওয়ার্কআউট করেছি। বডি ল্যাংগুয়েজ যেন তাঁদের মতো হয়, তারই চেষ্টা করেছি। জিমের বদলে ফ্রি–হ্যান্ড এক্সারসাইজ করেছি। অ্যাথলেটদের মতো পাতলা শরীর বানানোর চেষ্টা করেছি। শক্তি বাড়িয়েছি। পিঠে ভারী বস্তা নিয়ে অথবা বন্দুক নিয়ে দৌড়াতাম। ডায়েটেও পরিবর্তন এনেছি।
এই ছবি করতে গিয়ে নাকি আপনার সঙ্গে মনোজ বাজপেয়ির একটা আলাদা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আইয়ারি ছবিতে মনোজ স্যার সামরিক ক্ষেত্রে আমার মেনটর। এই সিনেমায় আমাদের গুরু-শিষ্যর সম্পর্ক। এখন পর্দার বাইরেও আমাদের একই সম্পর্ক। তিনি আমার অভিনয়ের গুরু। মনোজ স্যার অভিনয়ের ক্লাস নেন। অভিনয়সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করান। তাঁকে বলি, আপনার কাছে অভিনয় শিখতে চাই। তিনি আমার জন্য আলাদা সময় বের করে হিন্দি কবিতা ও অভিনয়ের তালিম দেন।
ছবির জগতের বাইরে থেকে এসেও আপনি বলিউডে একটা জায়গা করে নিয়েছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু বলতে চান?
আমি যখন পেরেছি, তারাও পারবে নিশ্চয়। আর এখন তো নিজের প্রতিভা দেখানোর অনেক মাধ্যম। টিভিতে প্রচুর ট্যালেন্ট শো হচ্ছে। এই তো শুরু হতে চলেছে রোহিত (শেঠি) এবং করণের (জোহর) শো। ইন্টারনেটে ভিডিও পোস্ট করে নিজের প্রতিভা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এইভাবে অনেক গায়ক আজ প্রতিষ্ঠিত। সিক্রেট সুপারস্টার তো এই বিষয় নিয়েই। নিজের প্রতিভা দেখানোর জন্য এখন অনেক দরজা খোলা।
শেষ প্রশ্ন, এখন পর্যন্ত পাওয়া সেরা কমপ্লিমেন্ট কী?
এটা আমি ছোটবেলার হিরো অমিতাভ বচ্চনের কাছ থেকে পেয়েছি। এবার গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অমিতাভ স্যারের গানের ওপর নাচ করি। তিনি নাচ দেখে খুশি হন। পরে আমাকে বলেন, ‘আমার নাচ এত ভালো করে অনুকরণ করলে কীভাবে?’ তাঁর চোখে তখন আবেগ দেখেছি। আমি যেন মিস্টার বচ্চনকে সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেছি। আমার নাচ যেন তাঁর স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে। এর থেকে সেরা কমপ্লিমেন্ট আর কীই–বা হতে পারে! সে রাতে উত্তেজনায় ঘুমাতে পারিনি।