'ক্রাইম পেট্রল' মানেই অনুপ সোনি

>
অনুপ সোনি
অনুপ সোনি

‘ক্রাইম পেট্রল’ মানেই অনুপ সোনি, আর অনুপ সোনি মানেই ‘ক্রাইম পেট্রল’। ছোট পর্দা, বড় পর্দা, মঞ্চের পর এবার ডিজিটাল দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন জনপ্রিয় এই সঞ্চালক। ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পাবে অনুপ সোনি অভিনীত এএলটি বালাজি প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য টেস্ট কেস’। মুম্বাইয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা অনুপ সোনি।

ছোট পর্দা, বড় পর্দা, মঞ্চের পর এবার ডিজিটাল দুনিয়ায়। কেমন লাগছে?
ওয়েব সিরিজ অভিনেতাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত। নতুন এই প্ল্যাটফর্মে অভিনেতাদের অভিনয় করার আরও সুযোগ বেড়ে গেছে। কিন্তু একজন অভিনেতা হিসেবে সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে অভিনয় করার ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য দেখতে পাই না। সিনেমার মতো করে ওয়েব সিরিজের শুটিং হয়। সিনেমার মতো ওয়েব সিরিজের গল্প আগেই লেখা হয়ে যায়। শুধু সিনেমা তিন ঘণ্টার হয়, আর ওয়েব সিরিজ পাঁচ ঘণ্টার। ওয়েব সিরিজ পর্ব অনুযায়ী হয়। তবে ছোট পর্দার সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। টেলিসোপে পাঁচ পর্ব শুটিংয়ের পর দর্শকের পছন্দ অনুযায়ী গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুনেছি, ‘দ্য টেস্ট কেস’-এ আপনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। আপনার অভিনীত চরিত্রটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
সিরিজটি খুব ইন্টেরেস্টিং। মহিলা কমান্ডোর ওপর আগে সিনেমা কখনো হয়নি। ‘দ্য টেস্ট কেস’ ওয়েব সিরিজ প্রথম একজন মহিলা কমান্ডোর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। চরিত্রটির নাম শিখা শর্মা। এই সিরিজে সুন্দর একটা সংলাপ আছে। শিখা শর্মার মা বলবেন, ‘আমাদের দেশে মেয়েরা আগে এগিয়ে যাওয়া শিখে গেছে, কিন্তু ছেলেরা এখনো শেখেনি।’ এখানে আমার চরিত্রের নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমতিয়াজ হোসেন। চরিত্রটি খুব রঙিন। আমি একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা, যে গল্পের ছলে তদন্ত করে। ইমতিয়াজের পোকার খেলার শখ। ও প্রতি সংলাপে পোকারের প্রসঙ্গ নিয়ে আসবে।

অনুপ সোনি
অনুপ সোনি


‘দ্য টেস্ট কেস’ ওয়েব সিরিজে নিমরাত কাউর, রাহুল দেব, অক্ষয় ওবেরয়, অতুল কুলকার্নিসহ আরও তারকা অভিনয় করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
দুর্দান্ত! অভিনেতা হিসেবে সবাই খুব দক্ষ। নিমরাতের সঙ্গে আমার ৮০ শতাংশ কাজ। তাঁর মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। আমার মনে হয়, মহিলা কমান্ডো শিখা শর্মা চরিত্রটির জন্য নিমরাত সঠিক নির্বাচন। আমার হেয়ার ড্রেসার, মেকআপ ম্যান সবাই অপেক্ষায় থাকত, কবে আবার ‘দ্য টেস্ট কেস’ ওয়েব সিরিজের শুটিং হবে।

টিভি সিরিজ নিয়ে বলুন।
পুরোদমে সিরিয়াল করছি। এখন আমার দুটো সিরিয়াল চলছে। দুটো সিরিয়াল ভিন্ন ধারার। একটা কমেডিভিত্তিক সিরিয়াল আর অন্যটি ‘বেগম জান’।

আপনাকে বলিউডের ছবিতে কম দেখা যায়। কেন?
বলতে পারেন, এটা ভাগ্যের খেলা। তবে আমি এক দিনও কাজ ছাড়া বাড়িতে বসে থাকি না। যখন মন চায়, তখন বাড়িতে থাকি। তবে আমি সম্মানজনক চরিত্র ছাড়া কোনো ছবিতে অভিনয় করতে চাই না। দু-তিনটে দৃশ্যে মুখ দেখানোর জন্য অভিনয় করতে চাই না। নাগেশ কুকনুরের ‘ইয়ে হোঁশলা’ ছবিতে দুর্দান্ত চরিত্রে অভিনয় করেছি। আট বছর আগে ছবিটির পুরো শুটিং হয়েছে। কিন্তু এখনো রিলিজ হয়নি। ‘তেজাব’ ছবির পরিচালক এন চন্দ্রার ‘কগার’ ছবিতে দারুণ এক চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই ছবিতে নন্দিতা দাস এবং ওম পুরি ছিলেন। ছবিটি কবে মুক্তি পেয়েছে, কেউ জানে না। প্রকাশ ঝাঁর ‘গঙ্গাজল’ এবং ‘অপহরণ’ ছবিতে অভিনয়ের পর আরও কয়েকটি ছবির প্রস্তাব পাই। কিন্তু সেগুলো একই চরিত্র বলে করিনি। এখন ওয়েব সিরিজ, ‘ক্রাইম পেট্রল’ আর সিরিয়াল নিয়েই খুশি।

আপনার জনপ্রিয়তার পেছনে আছে ‘ক্রাইম পেট্রল’। আর ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর জনপ্রিয়তার পেছনে আপনি।
আমার জনপ্রিয়তার পেছনে অবশ্যই ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর বিশাল অবদান আছে। আমার ক্যারিয়ারে ‘ক্রাইম পেট্রল’ অনেক কিছু দিয়েছে। আমি যেখানেই যাই, সবাই সুপারস্টারের মতো আমাকে স্বাগত জানান। আবার অনেকে বলেন, আমি ছাড়া ‘ক্রাইম পেট্রল’ নাকি অসম্পূর্ণ। ‘ক্রাইম পেট্রল’ মানেই অনুপ সোনি।

‘ক্রাইম পেট্রল’ অনুষ্ঠানে অনুপ সোনি
‘ক্রাইম পেট্রল’ অনুষ্ঠানে অনুপ সোনি


‘ক্রাইম পেট্রল’-এ আপনার সঞ্চালনা অন্যদের চেয়ে আলাদা। আর এটা এই শোর অন্যতম আকর্ষণ।
‘ক্রাইম পেট্রল’ সঞ্চালনা করার প্রস্তাব যখন আসে, তখনই সিদ্ধান্ত নিই, আমার সঞ্চালনার মধ্যে কোনো নাটক থাকবে না। আমার মনে হয়, আমি নাটকীয়ভাবে শোটি উপস্থাপনা করি না। আর তার জন্য সবাই এত পছন্দ করে। একটা অপরাধের শোতে নাটক আনার কোনো মানে হয় না। ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর সঞ্চালক হিসেবে আমি ১৬০০ পর্ব সঞ্চালনা করেছি।

‘ক্রাইম পেট্রল’-এর ফলে অপরাধ কমেছে?
নিশ্চয়ই কমেছে। আমাদের শো দর্শককে অনেক বেশি সচেতন করেছে। ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর জন্য অপরাধ প্রবণতা কমেছে।

আবার অপরাধ বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।
তারা তো অপরাধমনস্ক। তাই অপরাধ করার তথ্য জোগাড় যেকোনোভাবেই তারা করতে পারে। এর জন্য ‘ক্রাইম পেট্রল’-এর প্রয়োজন নেই। আর এই শো দেখে মানুষের মনে যদি অপরাধ করার ইচ্ছা তৈরি হয়, তাহলে তা সবচেয়ে বেশি আমার হওয়ার কথা।

সবাইকে সচেতন হতে বলেন। আপনি নিজে কতটা সচেতন?
আমি এবং আমার পরিবার খুবই সচেতন। আমি যত পর্ব করেছি, তা আমার জীবনের ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। আমি ‘ক্রাইম পেট্রল’ থেকে অনেক শিক্ষা নিয়েছি। আমি অনেক এপিসোডে বলেছি, আমাদের বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ তাঁরা আমাদের পরিবারের একজন। তাই বাড়িতে নিয়ম করেছি, বাড়ির কর্মচারীদের মাসে এক দিন বাইরের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার এনে খাওয়ানো হবে। দুই মাসে একবার মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার টাকা দেওয়া হবে। তাঁদের সবার মেডিকেল বিমা করিয়েছি। আমরা পার্টিতে গিয়ে টাকা ওড়াই। কিন্তু বাড়ির কাজের লোকের ৫০০ টাকা বাড়াতে চাই না। এসব বন্ধ করা উচিত। এসব ‘ক্রাইম পেট্রল’ থেকে শিখেছি। ছেলেকে আমিই স্কুলে দিতে যাই। স্কুলে দেখি ‘সিসিটিভি’ ঠিকভাবে বসানো হয়েছে কি না। নিজের বাড়িতেও ক্যামেরা বসিয়েছি।