বিটলসের ভারত সফরের ৫০ বছর

ভারতে বিটলস ব্যান্ডের সদস্যরা—রিংগো স্টার, জন লেনন ও পল ম্যাককার্টনি
ভারতে বিটলস ব্যান্ডের সদস্যরা—রিংগো স্টার, জন লেনন ও পল ম্যাককার্টনি

ভারতের হৃষিকেশে বিটলস ব্যান্ডের আধ্যাত্মিক সফর যেকোনো সিনেমার কাহিনিকেও হার মানাবে। তাঁরা মহাঋষি মহেশ যোগীর শিষ্য হয়ে আধ্যাত্মিক যোগের শিক্ষা নিতে এসেছিলেন চৌরাশি কুটিয়া আশ্রমে। বিশাল দলে বিটলসের চার সদস্য, তাঁদের স্ত্রী ও প্রেমিকা, ব্যবস্থাপক, সহকারী, শব্দ প্রকৌশলী, কয়েকজন সাংবাদিকসহ ছিলেন ব্রিটিশ ও মার্কিন কয়েকজন চলচ্চিত্রব্যক্তিত্বও। ধারণা করা হয়, একদম তরুণ বয়সেই দারুণ খ্যাতি পাওয়ায় বিভ্রান্ত জর্জ হ্যারিসন, জন লেনন, পল ম্যাককার্টনি ও রিংগো স্টার খুঁজছিলেন জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা। তখনই তাঁদের পরিচয় হয় ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু মহাঋষি মহেশ যোগীর সঙ্গে। ছোকরা চতুষ্টয় এতই প্রভাবিত হন যোগীর কথায় যে, তাঁর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা নিতে হিমালয়ের কোলঘেঁষা হৃষিকেশ পর্যন্ত ছুটে আসেন তাঁরা। রিংগো স্টার সেই আশ্রমে ছিলেন ১০ দিন, পল ম্যাককার্টনি এক মাস আর জন ও জর্জ হ্যারিসন আশ্রমে ছিলেন ছয় সপ্তাহ। বিটলসের সংগীতযাত্রায় এই ভারত সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কারণ, এই সফরে দলটি প্রায় ৩০টি নতুন গান বেঁধেছিল, যার বেশির ভাগই জায়গা করে নেয় বিটলসের হোয়াইট অ্যালবামে। ভারত সফরে কে কয়টি গান লিখেছেন, এ হিসাব এক সাক্ষাৎকারে দিয়েছিলেন জন লেনন। বলেছিলেন, ‘পল ডজনখানেক গান লিখেছে। জর্জ লিখেছে ৬টি আর আমি ১৫টি।’ কথিত আছে, বিটলসের সদস্যরা এলএসডি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই আধ্যাত্মিক সফর তাঁদের সেই আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনে। তবে আধ্যাত্মিক সফরের মাঝপথেই মহাঋষিকে জড়িয়ে কিছু বিতর্ক ছড়ায় গণমাধ্যমে। এর ফলে বেশ নাটকীয়ভাবেই হৃষিকেশ থেকে লন্ডনে ফিরে যান জন লেনন ও জর্জ হ্যারিসন। তবে এই যাত্রায় নাকি ভারতীয় মসলা ও ঝাল খাবারের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন রিংগো স্টার।

বিটলসের সেই সফরের পর মহাঋষির হৃষিকেশের আশ্রমটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে মারা যান মহাঋষি মহেশ যোগী। এরপর তাঁর ওই আশ্রমে কোনো লোকসমাগমই ছিল না। ১৪ একরের ওই বিশাল আশ্রম হয়ে পড়ে জনশূন্য। তবে বিটলস ব্যান্ডের পাগল কিছু ভক্ত জনশূন্য সেই আশ্রমকে ‘বিটলস আশ্রম’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিটলস-ভক্তরা সেই পরিত্যক্ত আশ্রমে গিয়ে জীর্ণ দেয়ালে এঁকেছেন অনেক রঙিন দেয়ালচিত্র (গ্রাফিতি)। কোনোটায় লেখা বিটলসের জনপ্রিয় গানের পঙ্‌ক্তি, কোনোটায় আবার শান্তির বার্তা। সেই পরিত্যক্ত আশ্রমটিকে আজ ৫০ বছর পর এসেও ভোলেননি বিটলস-ভক্তরা। তাই হৃষিকেশের স্থানীয় সরকারও সজাগ হয়েছে ওই চৌরাশি কুটিয়া আশ্রমটি নিয়ে। নতুন করে সেখানে সংস্কারের কাজ হয়েছে। অনেক বছর পরিত্যক্ত থাকার ফলে যে ঝোপঝাড় সৃষ্টি হয়েছিল, ছাঁটা হয়েছে সেসবও। তবে এখনো জানা যায়নি, আসছে ফেব্রুয়ারিতে এখানে কোনো বিশেষ আয়োজন কিংবা কর্মসূচির আয়োজন করা হবে কি না। হৃষিকেশের স্থানীয় লোকজন কোনো আয়োজন করুক বা না করুক, বিশ্বজোড়া বিটলস-ভক্তরা ঠিকই এই আশ্রমে যাচ্ছেন দল বেঁধে। ফেব্রুয়ারি এলেই বেড়ে যায় সেই আশ্রমে ভক্তদের যাওয়া-আসা। সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ডেইলি মেইল।