২০১৮ সাল চলচ্চিত্রের বছর!

☼  নতুন বছর নিয়ে আশাবাদী চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

☼ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের প্যাকেজ ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের চেষ্টা হচ্ছে।
☼  ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হওয়া কিছু ছবি মুক্তির আগেই আলোচনায় এসেছে।
☼  সরকারের সহযোগিতায় ৬৪টি জেলায় প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে।

২০১৭ সালের ব্যবসাসফল ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির দৃশ্য
২০১৭ সালের ব্যবসাসফল ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির দৃশ্য

২০১৭ সাল চলচ্চিত্রের জন্য মোটেও ইতিবাচক ছিল না। গত বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৬০টি ছবি। মাত্র দুটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। ডজনখানেক ছবি আলোচনায় থাকলেও পুঁজি ঘরে ওঠেনি। একইভাবে ২০১৬ সালের চেয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যাও কমেছে। তারপরও নতুন বছর নিয়ে আশাবাদী চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ২০১৮ সাল হবে চলচ্চিত্রের বছর। নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে ঢাকার চলচ্চিত্র।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ২০১৮ সালে নামি অনেক পরিচালক নতুন করে কাজের পরিকল্পনা করছেন। বড় প্রযোজক, যাঁরা এত দিন হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন, তাঁরাও আবার চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বদিউল আলম বলেন, ‘সরকারিভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে এ বছর। তা ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ফ্লোর ভাড়া, কারিগরি ব্যবহারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ৬ লাখ ২০ হাজার টাকার প্যাকেজ কমিয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি। চলচ্চিত্রের এই মন্দা অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নানা দিক থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই কাজে ফেরার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

গত বছরের ব্যবসাসফল ছবি দুটি হলো ‘নবাব’ ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’। শাকিব খান ও শুভশ্রী অভিনীত ‘নবাব’ মুক্তি পায় গত বছরের ২৬ জুন। ৬ অক্টোবর মুক্তি পায় আরিফিন শুভ ও মাহি অভিনীত ‘ঢাকা অ্যাটাক’। বাকি ৫৮টির মধ্যে আলোচিত ডজনখানেক ছবি হলো ‘রংবাজ’, ‘অহংকার’, ‘রাজনীতি’, ‘সত্তা’, ‘ডুব’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘বস ২’, ‘ধ্যাততেরিকি’, ‘প্রেমী ও প্রেমী’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘আপন মানুষ’, ‘অন্তর জ্বালা’, ‘হালদা’ ও ‘গহীন বালুচর’।

এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নিবন্ধন খাতা থেকে নতুন বছরে একাধিক ছবির নাম নিবন্ধনের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হওয়া কিছু ছবি মুক্তির আগেই আলোচনায় চলে এসেছে। ছবিগুলো এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা আছে। কয়েকটি ছবির কাজ শেষ হয়েছে, কয়েকটি ছবির শুটিং চলছে। এর মধ্যে ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ (বিনিময় চুক্তি), ‘পাষাণ’, ‘নূরজাহান’ (যৌথ প্রযোজনা), ‘পোড়ামন ২’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘মাস্ক’ (যৌথ প্রযোজনা), ‘চালবাজ’ (যৌথ প্রযোজনা), ‘বিজলী’, ‘একটি সিনেমার গল্প’, ‘জান্নাত’ ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

‘নবাব’ ছবির দৃশ্য। এই ছবিও ব্যবসাসফল হয়েছে
‘নবাব’ ছবির দৃশ্য। এই ছবিও ব্যবসাসফল হয়েছে

যেসব ছবির কাজ এখনো শেষ হয়নি, তার মধ্যে রয়েছে ‘মনে রেখ’, ‘নোলক’, ‘দেবী’, ‘আদি’, ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘আমার মা আমার বেহেস্ত’, ‘প্রেমের বাঁধন’, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’, ‘আমি নেতা হব’, ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া, নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। তা ছাড়া শুটিং শুরু হওয়ার আগেই আলোচনায় এসেছে ‘শনিবারের বিকেল’, ‘প্রিয়তমা’, ‘সুপার হিরো’, ‘হামলা মামলা ঝামেলা’, ‘যদি একদিন’। এসব ছবির পাশাপাশি বড় বাজেটের নতুন নতুন ছবি তৈরির পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে চলচ্চিত্রপাড়ায়।

জানা গেছে, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি দেশের বাইরে ১৩টি শহরে ৭০টি প্রেক্ষাগৃহে সফল প্রদর্শনীর পর প্রবাসী বাঙালিদের অনেকেই নাকি এখন চলচ্চিত্রে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে “ঢাকা অ্যাটাক” ছবিটি যে আয় করেছে, তাতে প্রবাসীরা এখন চলচ্চিত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা মনে করছেন, বিনিয়োগের টাকা দেশের ভেতর এবং দেশের বাইরে থেকে সহজেই তুলে আনা সম্ভব। প্রবাসীরা বিনিয়োগে এগিয়ে এলে আমাদের চলচ্চিত্র নতুন মাত্রা পাবে।’

নতুন বছরের সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শুটিং চলছে কিংবা এখনো শুটিং শুরু হয়নি এমনি একাধিক ভালো ছবির খবর পেয়েছি। সরকারও চলচ্চিত্র নিয়ে খুব আন্তরিক। সরকারের সহযোগিতায় ৬৪টি জেলায় প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে। নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য ৬৪টি জেলায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো আমরা শিগগিরই ব্যবহার করার অনুমতি পাব। সব দিক থেকে বিবেচনা করলে ২০১৮ সাল হবে চলচ্চিত্রের বছর!’

এদিকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, যৌথ প্রযোজনার যে নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে, এই নীতিমালা সংশোধন করে শিথিল করা না হলে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণে কেউ এগিয়ে আসবেন না। বড় বাজেটের ভালো ছবি তৈরি সম্ভব হবে না। তাই ২০১৮ সালে যে প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে, তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দেশের অন্যতম চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেন, ‘এ বছর ছবি নির্মাণের সংখ্যা কতটা বাড়বে, তা এখনই বলতে পারব না। তবে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা শিথিল করা না হলে বড় বাজেটের যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে। বড় বাজেটের ছবি না থাকলে ব্যবসা হবে না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।’