দরকার সঠিক চরিত্রায়ণ

কাপল টেলিছবির দৃশ্যে অপূর্ব ও মম
কাপল টেলিছবির দৃশ্যে অপূর্ব ও মম

৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো ‘মিউজিক স্টেশন’। অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন ইউসুফ আহমেদ ও দিঠি আনোয়ার। দুজন পালাক্রমে এবং দ্বৈত কণ্ঠে গান করেছেন একটানা দুই ঘণ্টার অধিক। দুজনের অধিকাংশ গানের নির্বাচন ছিল আকর্ষণীয়। গেয়েছেন পুরোনো দিনের জনপ্রিয় গান। যেমন দিঠি আনোয়ার গেয়েছেন ‘ইশারায় শিস দিয়ে আমাকে ডেকো না,’ ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর হলো না,’ ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি’সহ বেশ কিছু গান। ইউসুফ আহমেদ করেছেন ‘এই বাসর প্রদীপ ম্লান হলো যে’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘লোকে বলে রাগ নাকি অনুরাগের আয়না’, ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’ ইত্যাদি। গানের এই নির্বাচনের মাধ্যমে বোঝা গেল, দিঠি আনোয়ারের অনুরাগ হালকা চটুল সুরের গানে আর ইউসুফ আহমেদের আগ্রহ রাগাশ্রয়ী সুরের প্রতি।

অনুষ্ঠানে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল দুজনের দ্বৈত পরিবেশনা। যেমন ‘তুমি আমার কত চেনা, সেকি জানো না’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা’, ‘এই রাত ডাকে ওই চাঁদ ডাকে আজ তোমায় আমায়’ ইত্যাদি। এর মাঝে শেষ গানটি তাঁরা উৎসর্গ করেছেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পী শাম্মী আক্তারকে, ব্যাপারটি ভালো লেগেছে। দুজনের কণ্ঠই মিষ্টি এবং তাঁদের তাল–মিলও বেশ ভালো ছিল। যে কারণে তাঁদের পরিবেশিত দ্বৈত গানগুলো হয়েছে বেশ আকর্ষণীয়। শেষে একটি কথা বলতে চাই, অতীতের জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি শিল্পীর নিজের গানও গাওয়া উচিত। কেননা এ ধরনের অনুষ্ঠানে তো একজন শিল্পীর নিজেকে মেলে ধরারও একটা বড় সুযোগ। শিল্পীদ্বয় ভবিষ্যতে সেটা মনে রাখবেন আশা করি।

এবারে নাটক ও টেলিছবি। ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় জিটিভিতে প্রচারিত হলো বিশেষ নাটক আপনার অনুভূতি কী। কাহিনি ও পরিচালনা তানিম রহমান। অভিনয় করেছেন অপূর্ব, শার্লিন ফারজানা প্রমুখ।

নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছেন অপূর্ব ও ফারজানা। এরপর ফারজানার বাবা মফস্বল থেকে প্রথম এসেছেন তাঁদের বাসায়। অপূর্ব টিভি সাংবাদিক। সকালে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফারজানা বারবার তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁর বাবাকে নিয়ে আসতে। অফিসে গিয়ে একটি নিউজ স্টোরি বানানো নিয়ে নানা জটিলতায় তিনি ভুলে যান শ্বশুরকে আনার কথা। এর মধ্যে তাঁর শ্বশুরও মোবাইল হারিয়ে যোগাযোগ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তারপর বাসস্ট্যান্ডে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলোযোগ হয়। সেখানে বোমার আঘাতে লুটিয়ে পড়েন ফারজানার বাবা। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অপূর্ব অচেনা ফারজানার বাবাকে পানি খাওয়ান, তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। তারপর জানতে পারেন, লোকটি ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন। অপূর্ব বাসায় ফিরলে শোকাতুর ফারজানা তাঁকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘তুমি আমার বাবাকে আহত দেখে পানি খাইয়েছ, কিন্তু উদ্ধার করোনি। এখন বাবা মৃত, তোমার অনুভূতি কী?’ এখানেই নাটকের সমাপ্তি।

এককথায় বলা যায়, চমৎকার একটি নাটক। নাটকের গল্পে এবং পটভূমিতেও আছে অভিনবত্বের ছাপ। একটি সাধারণ গল্পকে নাটকীয় করে তোলায় সফল হয়েছেন নাট্যকার ও নির্মাতা। পাত্র-পাত্রীদের অভিনয়ও ছিল যথার্থ। তারপরেও কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে বেশ বিসদৃশ মনে হয়েছে। তা হলো ফারজানার বাবা আসছেন, ব্যস্ত অপূর্বকে কেন আনতে হবে, ফারজানা তো বাসায়ই ছিলেন। দুই. মেয়ের ফোন নম্বর কী বাবার কাছে ছিল না? এটাও অবাস্তব মনে হয়েছে। আরও বেশি অবাস্তব মনে হয়েছে, একজন আহত মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে অপূর্বর অনুভূতি জানতে চাওয়া ও সাক্ষাৎকার নেওয়া। আর শেষে এভাবে আকস্মিক দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর পর ফারজানার অভিব্যক্তিও গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আর নামকরণটি মনে হয়েছে আরও কাব্যিক হতে পারত।

১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মিজানুর আরিয়ানের রচনা ও পরিচালনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো টেলিছবি কাপল। অভিনয়ে অপূর্ব, মম, নাঈম প্রমুখ।

ছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম—পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয় ব্যবসায়ী নাঈম ও মমর, কিন্তু শুরুতেই দেখা দেয় দুজনের পছন্দ-অপছন্দ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক ফারাক। তখন নাঈম ঠিক করেন, তাঁরা তিন মাস সময় নেবেন পরস্পরকে জানা-বোঝার জন্য। এর মাঝে হঠাৎ মমর জীবনে আবির্ভাব ঘটে ফটোগ্রাফার অপূর্বর। দুজনের অনেক সুন্দর সময় কাটে। বন্ধুত্ব থেকে হয় আরও নিবিড় ঘনিষ্ঠতা। অপূর্ব যেদিন একটি ফুল নিয়ে দেখা করতে আসেন মমকে ভালোবাসার কথা বলতে, সে দিনই আবার সামনে এসে দাঁড়ান নাঈম। নাঈম জানান, তিনি মমকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। থমকে যায় অপূর্ব ও মমর মেলামেশা। শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। এর মাঝে আবার দেখা দেয় দুজনের মতবিরোধ ও মনের বিরোধ। এবার মমই সব খুলে বলেন এবং অপূর্বকে জানান তাঁর ভালোবাসার কথা। কিন্তু সেটি প্রত্যাখ্যান করেন অপূর্ব। এরপর শেষে দেখা যায়, এক দিন নাঈম মমকে বাসা থেকে টানতে টানতে এনে দাঁড় করান অপূর্বর সামনে। নাঈম জানান, মমর জন্য অপূর্বই ঠিক, তাঁর নিজের জন্য হয়তো আছে অন্য কেউ। এভাবে একটি সুখকর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয় টেলিছবি কাপল

প্রথমেই প্রশ্ন জাগে কাপল নামকরণটি কেন প্রয়োজন হলো, এর বিকল্প বাংলা শব্দ কি ছিল না? তা ছাড়া আরও কাব্যিক নামও তো হতে পারত। এবার বলব টেলিছবিটিতে অনেক ভালো দিক ছিল। যেমন সাধারণ একটি গল্পকে নাটকীয় করে তোলা। এ ছাড়া সুন্দর গল্প, সুন্দর চিত্রনাট্য ও চিত্রায়ণের কারণেও টেলিছবিটি অনেক পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় হয়েছে। কিন্তু চরিত্রায়ণ পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

প্রধান তিনটি চরিত্রের মধ্যে নাঈমের চরিত্রটিই মনে হয়েছে বিকশিত, সে তুলনায় অপূর্ব ও মম চরিত্র দুটি মনে হয়েছে আড়ষ্ট ও অবগুণ্ঠিত। যেমন, অপূর্ব মমর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে থেকেই মনে হয়েছে গদগদ বা অনুগত এক প্রেমিক সত্তা। যে কারণে অপূর্বকে একদমই আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়চেতা একজন যুবক মনে হয়নি। কখনো কখনো তাঁর অভিব্যক্তি হয়েছে বিরক্তিকর। আবার মমকেও এ যুগের পড়ালেখা জানা একটি মেয়ে মনে হয়নি। মনে হয়েছে তিনি সবার হাতের ক্রীড়নক। পেন্ডুলামের মতো দোল খাচ্ছেন একবার অপূর্বর দিকে, একবার নাঈমের দিকে। অবস্থা ও অবস্থান অনুযায়ী চরিত্রের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য যদি বিকশিত না হয়, তাহলে অভিনয় যত ভালোই হোক, তা হয় বিরক্তিকর। চরিত্রায়ণ যথার্থ না হলে একটি নাটক বা টেলিফিল্মের দৃশ্যকল্প-দ্রুম সবই মুখ থুবড়ে পড়ে।