আশ্রয়হীনদের বয়ান যেন

‘পাঁজরে চন্দ্রবান’ নাটকের মহড়ার দৃশ্য
‘পাঁজরে চন্দ্রবান’ নাটকের মহড়ার দৃশ্য
• নাট্যকার আগেই বলেছিলেন, এই নাটকে কোনো গল্প নেই।
• খণ্ড খণ্ড দৃশ্য তৈরি করেছেন।
• সেখান থেকেই উঠে এসেছে নানা গল্প।

নাট্যকার আগেই বলেছিলেন, এই নাটকে কোনো গল্প নেই। খণ্ড খণ্ড দৃশ্য তৈরি করেছেন। সেখান থেকেই উঠে এসেছে নানা গল্প। এই গল্প মানুষের অস্তিত্বের লড়াইয়ের-বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ঘূর্ণিপাকে পড়া উদ্বাস্তু মানুষের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলের আঙিনায় তখন সন্ধ্যা। অভিনয়শিল্পীরা তৈরি হচ্ছেন মহড়ার জন্য। একটু পরে বেল পড়ে। একেক করে পাদপ্রদীপের আলোয় দাঁড়ান কুশীলবেরা।

নতুন করে ঘর বাঁধে আশ্রয়হীন এক পরিবার। এক পাশে বিলাপ করে কাঁদছে এক তরুণী। আকস্মিক সেখানে এক দার্শনিক হাজির। কিন্তু দার্শনিকের স্ববিরোধী নানা কথায় পরিবারের লোকেরা তার ওপর হামলা করতে উদ্যত হয়। রুখে দাঁড়ায় কান্নারত ওই তরুণী। তার কথায় উঠে আসে, মেরে ফেলাই আসল কথা নয়। হঠাৎ সেখানে আক্রমণ করে লুটেরার দল। তারা সব তছনছ করে। ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় তরুণীকে। তরুণী চিৎকার করে বলে, ‘এই দেশ আমাদের। আমাদের সবার থাকার অধিকার আছে।’ আক্রমণকারীরা বলে, ‘না, এ দেশ আমাদের। তোমাদের চেহারার সঙ্গে আমাদের মিল নেই।’ মেয়েটি উত্তর বলে, ‘যেখানে পা ফেলা হয়, সেটাই দেশ হয়ে ওঠে।’

এমন খণ্ড খণ্ড অঙ্কে রচিত হয়েছে নাটক ‘পাঁজরে চন্দ্রবান’। লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক শাহমান মৈশান। নাটকের প্রতিটি অঙ্ক থেকে নানা গল্প বেরিয়ে আসে। সেই গল্প রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের উদ্বাস্তু সমস্যাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। উঠে আসে ঘরহারা মানুষের জীবনের নানা দিক। নাটকটি হয়ে ওঠে বিশ্বজুড়ে আশ্রয়হীনদের বয়ান। নির্দেশক বিভাগীয় অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন বলেন, সাধারণত যেভাবে নাটক তৈরি হয়, এটি তেমন নয়। অভিনয়শিল্পীদের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের সঙ্গে মিশে তাদের জীবনকে ধারণ করে তৈরি করা হয়েছে চরিত্রগুলো।

নাটকের তরুণী চরিত্রে অভিনয়কারী উম্মে সুমাইয়াও তা-ই বললেন। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে ধর্ষিতা নারীদের গল্প আর তাদের অনুভূতিগুলো ধারণ করে তৈরি করেছেন তাঁর চরিত্রটি। নাটকের বৃদ্ধ চরিত্রে অভিনয় করা শংকর কুমারের কথাও একই।

নাটকটিতে অভিনয় করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এমএ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনায় বিভাগীয় শিক্ষক আশিক রহমান এবং পোশাক ও সংগীতে বিভাগীয় শিক্ষক কাজী তামান্না হক। আগামীকাল ৫ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় নাটমণ্ডলে এবং ৬ থেকে ৯ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে দেখা যাবে নাটকটি। ভারতের পাটনা ও দিল্লিতেও প্রদর্শিত হবে।