'আমি এখন সুখে আছি'

সোনম কাপুর। ছবি: সোনম কাপুরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ
সোনম কাপুর। ছবি: সোনম কাপুরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ

সোনম কাপুর, নামটি উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বলিউডের জনপ্রিয় এক ফ্যাশন-সচেতন মেয়ের ছবি। কেউ আবার সোনমকে বলেন, ইন্ডাস্ট্রির ঠোঁটকাটা স্বভাবের নায়িকা। কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেও সোনম নতুন করে আলোচনায় আসেন ‘নিরজা’ দিয়ে। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির জন্য সোনম পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর বলিউডে তিনি খুব সাবধানে পা রাখছেন। এ বছর মুক্তি পেয়েছে সোনম অভিনীত ‘প্যাডম্যান’ ছবিটি। শিক্ষামূলক এ ছবিতে সোনমের চরিত্রের ব্যাপ্তি কম হলেও তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছেন না তিনি। সামাজিক কল্যাণে নিজের মতো অবদান রাখতে পেরে তিনি খুশি। ইদানীং বিয়ের গুঞ্জন নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনায় আছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হয় ভারতের সাময়িকী ‘ফিল্মফেয়ার’। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন নাদিয়া মাহমুদ।

‘নিরজা’ আপনার জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে?
আমার সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টেছে ‘রানঝানা’ ছবির পর। তাই আমি ‘নিরজা’ ছবিতে কাজ করা সুযোগ পেয়েছি। নির্মাতারা মনে করেছেন, আমি ভিন্ন ধরনের চরিত্রেও অভিনয় করতে পারব। প্রতিটি চলচ্চিত্র একজন শিল্পীকে কিছু দেয়, আবার তাঁর থেকে কিছু নিয়ে নেয়। ‘নিরজা’ ছিল বছরের সবচেয়ে লাভজনক ছবি। এটি নির্মাতাদের এ ধরনের ছবি তৈরির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।

অভিনেত্রী হিসেবে আপনাকে কোন জিনিসটি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে?
গল্প, মানুষ...আমার চরিত্রে অবশ্যই কিছু দ্বন্দ্ব থাকতে হবে। চরিত্রে অবশ্যই উত্থান-পতন থাকতে হবে। আমি শুধু একজন ‘আকর্ষণীয় পুতুল’ হিসেবে পর্দায় থাকতে চাই না। এভাবে উপস্থাপন নারীদের অবমাননা করা হয়। এ ছাড়া আমাদের এই শিল্পে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকে বড় বৈষম্য রয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। মানুষ নায়িকাদের কম প্রাধান্য দিতে চায়। সেটা পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রেই হোক আর হোটেলে তাঁর জন্য একটি রুম বরাদ্দের ক্ষেত্রে। আশা করি, ভালোর জন্য একদিন এ অবস্থার পরিবর্তন আসবে।

সোনম মনে করেন, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোলে সবকিছু ভালো হয়
সোনম মনে করেন, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোলে সবকিছু ভালো হয়

নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় মুখের ওপর প্রকাশ করে দেন। এই নিয়ে কোনো সমস্যা হয়?
আমার এই অকপটতা আমার জনসংযোগকে ঝামেলার মুখে ফেলে। মনে যা আসে, তা-ই বলে ফেলি। এতে আমার কিন্তু কোনো সমস্যা হয় না। তবে আমি যা বলি, সেটা আমার জনসংযোগ আর গণমাধ্যমের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমি মনে করি, অন্যকে ভুল বোঝা মানুষের স্বভাব। আর ভুল বোঝাবুঝিতে কিন্তু ভালোবাসাও বেড়ে যায়।

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময় কখন পার করেছেন?
‘নিরজা’ আর ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবি করার আগে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হই। এরপর আবার টাইফয়েড হয়। দুই বছর ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ওটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় ছিল। তখন মন খুব খারাপ থাকত। এ ছাড়া সবকিছু ভালোই চলেছে।

অভিনয়শিল্পী হিসেবে কখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন?
একজন অভিনয়শিল্পীর কখনোই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা উচিত না। এই বোধ শিল্পীর কাজের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। আত্মবিশ্বাস একজন শিল্পীর সাফল্যের চাবিকাঠি।

নিজের কোন দিকটি প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে আপনাকে আলাদা করেছে?
আমি প্রতিযোগিতা করি না। আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ইন্ডাস্ট্রির কোন বিষয়টি আপনার ভালো লাগে কিংবা খারাপ লাগে?
কিছুই খারাপ না। সবকিছু এখানে শিক্ষণীয়...সৃজনশীলতা, ধৈর্য আর নম্রতার সঙ্গে এখানে সবকিছু শিখছি। আমি কোনো কিছু ভুল বা ঠিক, এভাবে দেখি না। আমি এখানে শুধু ভালো সুযোগগুলোই দেখতে চাই।

ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য বারবার সমালোচিত হন সোনম কাপুর
ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য বারবার সমালোচিত হন সোনম কাপুর

এখান থেকে সবচেয়ে ভালো কোন শিক্ষাটি পেয়েছেন?
ধৈর্য একটি গুণ। দয়াশীলতা একটি গুণ। সৃজনশীলতা একটি গুণ। কিন্তু সবচেয়ে বড় গুণ আদর্শবাদ।

পেছনে তাকালে কী আপনাকে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট করে?
আমি যেসব বন্ধু ও মানুষের সঙ্গে মিশেছি, আর এই দশ বছরে যেসব সম্পর্ক তৈরি করেছি, সেসব আমার সন্তুষ্টির বিষয়।

আপনার সম্পর্কে এমন কিছু বলুন, যা বেশির ভাগ মানুষ জানেন না।
আমি খুব আবেগপ্রবণ। আমার বাবা (অভিনেতা অনিল কাপুর) আমার নাম দিয়েছে ‘ট্যাপ’ (পানির ট্যাপ)। কারণ, আমি সহজেই কেঁদে ফেলি। অন্যদিকে, অসততা আর আপস আমার মন খারাপ করে দেয়।

জীবনে কী অর্জন করতে চান?
আমার নাম আছে, খ্যাতি আছে, অর্থবিত্ত আছে। তবে এসব আমার অর্জন না। এটি আমার প্রতি ঈশ্বরের করুণা ও উপহার। জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিদিন একজন ভালো মানুষ আর ভালো একজন শিল্পী হয়ে ওঠা।

চলচ্চিত্র ছাড়া আপনার জীবনের কোনো মানে আছে?
চলচ্চিত্র ছাড়াও জীবন থাকা উচিত। চলচ্চিত্রের বাইরে জীবন না থাকলে তো হতাশ হয়ে পড়তে হবে। এ জন্য আমি ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসি। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই, আমি বই পড়ি, ছবি দেখি, খাওয়াদাওয়া করি। সাধারণ মানুষের মতোই আমি অন্য সব সাধারণ কাজ করি।

সোনম কাপুর এমন হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসেন সব সময়
সোনম কাপুর এমন হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসেন সব সময়

অভিনয় ছাড়া আর কোন বিষয়টি আপনাকে উদ্দীপ্ত করে?
শিগগিরই আমি চলচ্চিত্র পরিচালনা করব।

আপনি ও আনন্দ আহুজা শিগগিরই বিয়ে করছেন?
আমার বিয়ে কেন সংবাদপত্রের শিরোনাম হবে? আমি বিয়ের ব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলব না। আমি সব সময় ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন আলাদা রাখতে চাই।

আপনি মনে করেন, এখন আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময়?
হ্যাঁ, আমার ব্যক্তিগত ও কর্মজীবন দুই ক্ষেত্রেই এখন আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় যাচ্ছে। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোলে সবকিছু ভালোই হওয়ার কথা। তবে উদ্দেশ্য অবশ্যই ভালো হতে হবে। আমি এখন সুখে আছি। আমার যাত্রা ধীরগতির হলেও অটল আছে। বরং এটি ঊর্ধ্বগামী, আর আমার জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।