ভাড়া কম তবু মঞ্চ খালি

মঞ্চে নাটক কম, তবে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সময় বসে মেলা
মঞ্চে নাটক কম, তবে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সময় বসে মেলা

নতুন করে শুরু হওয়া মহিলা সমিতি মঞ্চে বাড়েনি নাটকের প্রদর্শনী। প্রথম দিকে নাটকের দলগুলো অভিযোগ করেছিল, এ মঞ্চের ভাড়া বেশি। এখন ভাড়া কমলেও খালি থাকছে মঞ্চ। নাট্যজনেরা বলছেন, দর্শক-সংকট একটি বড় সমস্যা। পাশাপাশি নাটক সরণিকে আগের রূপে ফিরিয়ে নিতে সমন্বিত উদ্যোগেরও অভাব আছে।

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে মঞ্চনাটকচর্চায় মহিলা সমিতি মঞ্চের বড় অবদান আছে। ২০১১ সালে মঞ্চটি আধুনিকায়নের জন্য ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত ভাঙা-গড়া নাট্যোৎসব দিয়ে নতুন ভবনে নিয়মিত প্রদর্শনী শুরু হয়।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি সূত্র থেকে দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১৫ হাজার টাকা। তখন গড়ে মাসে নাটকের প্রদর্শনী হয়েছে প্রায় পাঁচটি। নাটকের দলগুলো বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আনলে মহিলা সমিতি ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। তখন ভাড়া কমিয়ে ১০ হাজারে আনা হয়। এরপর ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ে মাসে প্রদর্শনী হয়েছে ১০ টির মতো। এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি অনুদানের মাধ্যমে ভাড়া কমিয়ে পাঁচ হাজার করা হয়। এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। কিন্তু ভাড়া কমলেও নাটকের হল বরাদ্দ তালিকা থেকে দেখা গেছে, প্রদর্শনী খুব একটা বাড়েনি। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসে গড়ে প্রদর্শনী হয়েছে ১৫টি।

অথচ নাটকের দলগুলোর একটি সাধারণ অভিযোগ ছিল, ঢাকায় মঞ্চের অভাবে তারা প্রদর্শনী করতে পারছে না। এখন মঞ্চ আছে, ভাড়াও কম। তারপরও কেন খালি পড়ে থাকছে মহিলা সমিতির মঞ্চ? বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনের বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ভাড়া কম ঠিক আছে। কিন্তু দর্শক হচ্ছে না। এটা একটা বড় সংকট।

একটা সময় ছিল, নাটক সরণি ও মহিলা সমিতিকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতিজনদের আড্ডা বসত। শিল্পকলা একাডেমি হওয়ায় নাটকের লোকদের মূল আড্ডা এখন সেখানে। তা ছাড়া নতুন করে আধুনিকায়নের জন্য বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকায় নাটক সরণির রমরমা ব্যাপারটি চলে যায়। মহিলা সমিতিকে আবার দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক বছর বন্ধ থাকার কারণে মনে হচ্ছে কোথাও যেন একটু অচেনা পরিবেশ। ভাড়াটা কমানো হয়েছে কিন্তু যানজটের কারণে ওখানে দর্শকের সংকট হয়। কিন্তু দলগুলোরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে উৎসবের আয়োজন করেছিলাম। জনপ্রিয় নাটকগুলো নিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করতে উৎসব করার পরিকল্পনা আছে। প্রচার চালিয়ে কীভাবে দর্শক বাড়ানো যায়, সে চিন্তা করছি। তবে আমার মনে হয়, প্রতিটি দল, নাটকের কর্মী সবাইকে সমন্বিতভাবে চেষ্টা করলে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব।’

শুধু দর্শক-সংকটই নয়, নাটকের লোকজনকে অবহেলাও মঞ্চ খালি থাকার জন্য কিছু অংশে দায়ী বলে মনে করছেন নাট্যজগতের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নাট্যদলের নেতৃস্থানীয় একজন নাট্যকর্মী বলেন, ‘হল নাই দাবি করছি, আবার মঞ্চ খালি পড়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। এটা বিপরীতমুখী কথাবার্তা। এখানে দল হোক, নাট্যজন হোক কিংবা ফেডারেশন হোক-সবার ব্যর্থতা আছে। এর দায়ভার একটি দলের সদস্য হিসেবে, নাট্যকর্মী হিসেবে আমাকেও নিতে হবে।’

অন্যদিকে সার্বিকভাবেই সংস্কৃতিচর্চার অভাবের কথাও উঠে এসেছে। সংলাপ গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম বলেন, আসলে যানজট, নগর ব্যস্ততা আর পারিপার্শ্বিক অবস্থা মিলে সার্বিকভাবে সংস্কৃতিচর্চার পরিধি কমে আসছে, যার প্রভাব পড়েছে নাটকেও।

তবে মহিলা সমিতির মঞ্চে দর্শক বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানালেন রামেন্দু মজুমদার। তাঁর কথায় উঠে আসে, আগামী বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা মাসখানেক যদি একটা উৎসব করা যায়, তবে দর্শক আবার ফিরে আসতে পারেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনও এমন উৎসবের কথা ভাবছে।