এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ভয়াবহ খবর: ফেরদৌস

ফেরদৌস
ফেরদৌস

এপ্রিলে নতুন দুটি ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সপ্তাহখানেক আগে ছবি দুটিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। অঞ্জন আইচের ‘রূপবতী’ ও আরিফুর জামানের ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবি দুটিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করবেন প্রভা ও পপি। নতুন ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে গত শনিবার বিকেলে যশোর থেকে কথা বলেন ফেরদৌস।

‘রূপবতী’ ও ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবি দুটি সম্পর্কে কিছু বলুন। 
‘রূপবতী’ নারীবাদী গল্পের ছবি। গ্রামীণ থ্রিলার ধাঁচের এই গল্প দর্শক ধরে রাখবে। ছবিতে আমার জুটি প্রভা, নাটকে অভিনয় করে সে দর্শকের ভালোবাসা অর্জন করেছে। কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র ছবিটি শরত্চন্দ্রের ‘গৃহদাহ’, ‘দেবদাস’, ‘শ্রীকান্ত’ ও ‘বড়দিদি’র চরিত্রগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে। আমি অভিনয় করব দেবদাস চরিত্রে, বিপরীতে পার্বতী চরিত্রে থাকছে পপি।

দেবদাস চরিত্রে অভিনয়ের কোনো স্বপ্ন ছিল? 
এই চরিত্রের প্রতি আমার লোভ ছিল। প্রথম যখন পড়ি, তখন থেকে দেবদাস আমার পছন্দের। বড় পর্দায় কাজ শুরুর পর যখন দেখলাম সহকর্মীদের কেউ এই চরিত্রে কাজ করল, লোভ আরও বেড়ে যায়। মনে হচ্ছিল, আর বোধ হয় এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব না। অবশেষে সুযোগ এল।

আপনার তো বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে? 
এখন আছি যশোরে। এখানে আসার আগে অনুদানের ছবি বিউটি সার্কাস-এর কাজ করেছি, কিছু শুটিং বাকি। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অন্য ছবিগুলো কালের পুতুল, পোস্টমাস্টার, মেঘকন্যা, শূন্য হৃদয়, পবিত্র ভালোবাসা ও গন্তব্য।

এখন তো ছবি নির্মাণ কমে গেছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন? 
নিঃসন্দেহে এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ভয়াবহ খবর। একধরনের জটিলতাও আছে।

জটিলতা কেমন? 
আমার অভিনীত ছবি পবিত্র ভালোবাসার কথাই যদি বলি, এই ছবির প্রযোজকেরা থাকেন দেশের বাইরে। তাঁদের ইচ্ছা ছিল গত বছর ছবিটি মুক্তি দিয়ে নতুন ছবির শুটিং শুরু করবেন। এখনো তা মুক্তি পায়নি। পুরো বিষয়টা একটা চক্রাকার প্রক্রিয়া। এই যেমন আমি একটি ছবিতে অভিনয় করব, কমপ্লিট হওয়ার পর মুক্তি পাবে, প্রেক্ষাগৃহ থেকে টাকা প্রযোজকের পকেটে যাবে। এরপর সেই টাকা দিয়ে প্রযোজক আরেকটি নতুন ছবি বানাবেন। চক্রাকার ব্যাপারটি পূর্ণ হচ্ছে না। মাঝপথে কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে।

সমস্যা কোথায়?
নির্মাতা দোষ দিচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহের, প্রেক্ষাগৃহের মালিক বলছেন, ছবিই হচ্ছে না। সরকার বছরে কয়েকটি ছবির পৃষ্ঠপোষকতা করছে, কিন্তু সেই ছবিগুলো ঠিক সময়ে শেষ হচ্ছে না। ছবি বানানোয় নির্মাতাদের মনোযোগের ঘাটতি আছে। ছবি তৈরির পদ্ধতি সঠিকভাবে না মানায় দায়সারা গোছের সব ছবি হচ্ছে। দেখা যায় শুটিং শুরু থেকে মুক্তির আগমুহূর্ত পর্যন্ত পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, ফেসবুকসহ সামাজিক সব যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যেই মুক্তি পেল, খবর পাই-মুখ থুবড়ে পড়ছে ছবিটি। নতুন পরিচালকেরা নতুন ভাবনা নিয়ে ঠিকই আসছেন, কিন্তু চিত্রনাট্যের জায়গায় মার খাচ্ছেন।

কবে থেকে এই সমস্যার শুরু?
আমার মনে হয় ৩৫ মিমি প্রযুক্তি থেকে ডিজিটাল-এর সঙ্গে আমরা খাপ খাওয়াতে পারিনি। প্রযুক্তিগত দিকে আমরা যখনই এগিয়ে গেলাম, তখনই ছবির ভেতর থেকে আস্তে আস্তে আবেগ চলে গেল।

শুধুই নতুনদের সমস্যা?
পুরোনো পরিচালকেরা তো সেই অর্থে এখন ছবি বানাচ্ছেন না। আমজাদ হোসেন, কাজী হায়াৎ, মনতাজুর রহমান আকবর, সোহানুর রহমানরা এখন ছবি বানাচ্ছেন না।

যাঁদের নাম বললেন, তাঁরা কিন্তু দু-একটা ছবি বানাচ্ছেন, তারপরও তো...
আমি অবশ্য ছবিগুলো দেখিনি। পুরোনো পরিচালকেরাও হয়তো নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তি খাপ খাওয়াতে পারছেন না।