সে আমার বড় আদরের ছোট বোন

অর্জুন কাপুর-অংশুলা কাপুর ও জাহ্নবী কাপুর-খুশি কাপুর
অর্জুন কাপুর-অংশুলা কাপুর ও জাহ্নবী কাপুর-খুশি কাপুর

মৃত্যু নাকি মানুষকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়। শুধু মৃত মানুষটিকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় মৃত্যু? তার রেখে যাওয়া স্বজনদের মধ্যেও অনেক সময় ঘুচিয়ে দেয় শত বিভেদ। এই একটি ঘটনায় দূর হয়ে যায় কত দ্বন্দ্ব, যোজন যোজন দূরত্ব। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বলিউডের বরেণ্য অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর এ ঘটনার নজির দেখেছে মানুষ। বনি কাপুরের দুই পক্ষের সন্তানদের মধ্যে গত দুই মাসে যে হৃদ্যতা তৈরি হয়েছে, তা তাঁদের গত দুই দশকের পারিবারিক চিত্রের পুরো বিপরীত। এমনকি এ মাসে অর্জুন কাপুর, জাহ্নবী, খুশি ও অংশুলা মিলে নাকি দেশের বাইরে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। বনি কাপুর জীবনে শ্রীদেবীকে হারিয়ে পেলেন আরেক নতুন জীবন।

প্রয়াত সাংবাদিক মোনা ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা বনি কাপুরের প্রথম স্ত্রী। তার মাঝেই শ্রীদেবীর প্রেমে পড়েন বনি। ১৯৯৬ সালে দুই সন্তান অর্জুন আর অংশুলাকে সাবেক স্ত্রীর কাছে রেখে শ্রীদেবীকে বিয়ে করেন বনি। সেই সংসারে তাঁর দুই মেয়ে—জাহ্নবী ও খুশি। অর্জুন ও অংশুলার সঙ্গে বনির যোগাযোগ থাকলেও শ্রীদেবী আর তাঁর দুই সন্তানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কখনোই স্বাভাবিক ছিল না। নিজের মায়ের মৃত্যুর পরও শ্রীদেবীকে কখনো মা বলে মেনে নেননি অর্জুন। একবার এক সাক্ষাৎকারে এই নায়ক বলেছিলেন, ‘তিনি (শ্রীদেবী) আমার কাছে শুধু আমার বাবার স্ত্রী। তাঁর সন্তানদের সঙ্গেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের শুধু একটা জায়গাতেই মিল। আমরা সবাই একজন লোককে (বনি কাপুরকে) ভালোবাসি।’

শোনা যায়, স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তানদের শ্রীদেবী নিজেও কখনো কাছে টানেননি। বরং মোনার মৃত্যুর পর বনি কাপুরের সব আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাঁকা চোখেই দেখেছিলেন এই প্রয়াত অভিনেত্রী। অবশ্য শ্রীদেবী তাঁর শেষ ছবি ‘মম’-এর এক প্রচারণা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমি অংশুলাকে আমার মেয়ের মতো দেখি। আর সেও আমাকে মায়ের মতো দেখে।’

দুবাইয়ে যে আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের পর শ্রীদেবী মারা যান, সেখানেও জাহ্নবী, খুশির থেকে অর্জুন আর অংশুলা ছিলেন দূরে দূরে। তাঁদের মধ্যে আগে কখনো ভালোমতো কথা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু দুবাইয়ে শ্রীদেবীর হঠাৎ মৃত্যুর পর বদলে যায় দৃশ্যপট। ওই সময় মুম্বাইয়ে থাকা দুই সৎবোন জাহ্নবী ও খুশিকে সহানুভূতি জানাতে ছুটে যান বড় বোন অংশুলা। নির্ভরতার কাঁধ বাড়িয়ে দেন অর্জুন কাপুর। দুবাই থেকে শ্রীদেবীর মরদেহ আনার সব আনুষ্ঠানিকতা আর শেষকৃত্যের কাজ করেন অর্জুন কাপুর।

মৃত্যুর দুই দিন আগেও তিনি শ্রীদেবীকে ‘সেই নারী’ বলে সম্বোধন করতেন। অথচ একটি মৃত্যুর পর নিমেষেই সব পালটে গেছে। অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় কাপুর পরিবারের এই নতুন সদস্যরা। কারণ, মা হারানোর বেদনা যে অর্জুন, অংশুলাও জানেন। মার্চ মাসে ভাইবোনেরা মিলে জাহ্নবীর জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছেন। ইদানীং প্রায়ই তাঁদের একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে বা খেতে দেখা যায়। কিছুদিন আগে বাবার সঙ্গে অর্জুনের বাসায়ও ঘুরে এসেছেন জাহ্নবী ও খুশি। ছোট বোন জাহ্নবীকে নিয়ে মন্দ কথা বলায় ইনস্টাগ্রামে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছিলেন অংশুলা। কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বোনদের নিয়ে কেউ যেন একটিও আপত্তিকর মন্তব্য না করেন।

নিজেদের বন্ধনকে এবার অন্য মাত্রা দিতে যাচ্ছেন বনি কাপুরের চার সন্তান। ভাই অর্জুনের ‘নমস্তে ইংল্যান্ড’ ছবির শুটিং লোকেশন লন্ডনে ছুটি কাটাতে যাবেন অংশুলা, জাহ্নবী ও খুশি। জাহ্নবী এখন ঈশান খাট্টারের বিপরীতে ‘ধড়ক’ ছবির কাজ করছেন। ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী জুলাই মাসে। মায়ের মৃত্যু আর তার কয়েক দিন পরই শুটিংয়ে যোগদান—সব মিলিয়ে জাহ্নবীর এখন একটু বিরতি দরকার। বোনকে মানসিক প্রশান্তি দিতেই বুঝি এই ছুটির পরিকল্পনা করেছেন অংশুলা ও অর্জুন। ফিল্ম ফেয়ার, হিন্দুস্তান টাইমস