আড্ডাটি হয়ে উঠেছিল জমজমাট

নববর্ষের বিশেষ আড্ডা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস, গায়ক শফি মণ্ডল, উপস্থাপক তানিয়া হোসাইন, লেখক ইমদাদুল হক মিলন ও অভিনেত্রী পূর্ণিমা
নববর্ষের বিশেষ আড্ডা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস, গায়ক শফি মণ্ডল, উপস্থাপক তানিয়া হোসাইন, লেখক ইমদাদুল হক মিলন ও অভিনেত্রী পূর্ণিমা

এ সপ্তাহে সারা দেশে উদ্‌যাপিত হলো নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার নানা ধরনের অনুষ্ঠান। টিভি চ্যানেলগুলোতেও লেগেছিল তার দোলা। সারা দিন সব চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান, সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠান, নাটক, টেলিছবি। পয়লা বৈশাখ ১৪২৫ ও ১৪ এপ্রিল দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে অভিনেত্রী তানিয়ার উপস্থাপনায় নাগরিক টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো সেলিব্রেটিদের নিয়ে নববর্ষের বিশেষ আড্ডা ‘বর্ষবরণ’। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন, গায়ক শফি মণ্ডল, অভিনেতা ফেরদৌস ও অভিনেত্রী পূর্ণিমা। 

অনুষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল আড্ডার আমেজ। সবাই তুলে ধরছিলেন তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি। একেকজনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মাঝে অন্যরা রং ছড়াচ্ছিলেন নানা হাস্যকৌতুক সংযোজনের মাধ্যমে। আর প্রাণবন্ত এই আড্ডায় মাঝে মাঝেই দরাজকণ্ঠে লোকসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাণসঞ্চার করছিলেন বাউল শফি মণ্ডল। অতিথিরা এবং উপস্থাপক সবাই চৌকস ও বাগ্মী। ফলে সত্যিই আড্ডাটি হয়ে উঠেছিল জমজমাট। নববর্ষে এমন সুন্দর একটি আড্ডার আয়োজন করার জন্য নাগরিক টিভিকে জানাই আন্তরিক অভিবাদন।
রাত ৯টা ১০ মিনিটে বাংলাভিশনে প্রচারিত হয় বিশেষ নাটক এবং মেঘের আকাশ। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন শামীমা শাম্মী। অভিনয়ে সৈয়দ হাসান ইমাম, তিশা, আফরান নিশো প্রমুখ।
নাটকের গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম-তিশা চিত্রশিল্পী। সে একটি সবুজ প্রান্তরে স্ট্যান্ডে ক্যানভাস টাঙিয়ে ছবি আঁকছে, আফরান দূর থেকে বল ছুড়ে তার ছবি নষ্ট করে দেয়। এরপর সে নানা ছুতোয় পিছু নেয় তিশার। তিশা বিরক্ত হয়, আবার কিছুটা প্রশ্রয়ও দেয়। এদিকে বাসায় তিশার দাদু হাসান ইমাম তাকে ইঙ্গিতপূর্ণ রসিকতার মাধ্যমে কিছুটা দুর্বল করে ফেলে। একপর্যায়ে আফরান তিশাকে জানায়, সে তাকে ভালোবাসে এবং সে তার দাদুর অফিসের কর্মচারী, দাদুর প্ররোচনাতেই সে এ পথে অগ্রসর হয়েছে। সব শুনে তিশা আফরানের উপহারের আংটি ফিরিয়ে দেয়। অতঃপর তার বাবা-মায়ের মৃত্যু, তার বিয়ের আসরে আগত হবু স্বামীর মৃত্যু-এসব নিয়ে দাদুর সঙ্গে আবেগপূর্ণ সংলাপের পর তিশা নির্জন স্থানে দেখা করে আফরানের সঙ্গে। গ্রহণ করে আফরানের উপহারের আংটি।
এক কথায় বললে বলতে হয়, নাটকটিতে নাটকীয়তা আছে, আবার যুক্তি বা বাস্তবতার যথেষ্ট অভাবও আছে। যেমন-সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ছেলে যেভাবে তিশার ছবি নষ্ট করেছে, কথা বলেছে। আবার হ্যাংলামোও করেছে, একজন আত্মপ্রত্যয়ী শিল্পী হিসেবে তিশার তা মেনে নেওয়ার কোনো কারণ ছিল না। আফরান তিশার দুর্বল জায়গাটিও স্পর্শ করতে পারেনি। আবার তিশা বিয়ে করবে না কেন, তারও খুব শক্ত যুক্তি দাঁড় করাতে পারেননি লেখক ও নির্মাতা। বাবা-মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে দাদু তিশাকে যেভাবে আবেগাপ্লুত করতে চেয়েছে, একজন পরিণত মানুষ ও শিল্পী তিশার কাছে সেটাও কিছুটা আরোপিতই মনে হয়েছে। আর তিন চরিত্র নিয়ে নাটক বানাতে গিয়ে পরিবারকে যেভাবে সংকুচিত করা হয়েছে, তা বাস্তব। তবে অভিনয়, সংলাপ ও চিত্রায়ণের গুণে নাটকটি উৎরে গেছে বলা চলে।
আমাদের শেষ আলোচ্য আরটিভির সাপ্তাহিক নাটক পরিচয়। প্রচারিত হলো ১২ এপ্রিল রাত ৮টা ১৫ মিনিটে। রচনা ও পরিচালনা ইমরাউল রাফাত। অভিনয় করেছেন মেহ্জাবীন চৌধুরী, তৌসিফ মাহবুব প্রমুখ।
নাটকের গল্প হলো-একই বাসে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে মেহ্জাবীন আর বাড়ি যাচ্ছে তৌসিফ। দুজনের পাশাপাশি সিট। শুরু থেকেই তৌসিফের কথা ও আচরণ ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। প্রচণ্ড বিরক্ত মেহ্জাবীন একসময় তার পাশ থেকে উঠেও যায়। তারপর মাঝরাতে মাঝপথে নষ্ট হয় বাস। কাছাকাছি তৌসিফের এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেয় দুজন। তারপর সকালে তৌসিফ নায়কোচিত স্বভাবে একটি মোটরসাইকেল জোগাড় করে মেহ্জাবীনকে পৌঁছে দেয় পরীক্ষার হলে। পরীক্ষা শেষে বের হয়ে মেহ্জাবীন তৌসিফকে খোঁজে, কিন্তু পায় না। মেহ্জাবীনের বাস ছেড়ে দিলে তৌসিফ বীরের মতো মোটরসাইকেল নিয়ে বাসের সামনে এসে দাঁড়ায়। মেহ্জাবীন নেমে এলে তার ফোন নম্বর চায় তৌসিফ। মেহ্জাবীন তার ফোন নম্বর লিখে দেয় তৌসিফের হাতে।
নাটকে নাটকীয়তা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য, কিন্তু অযৌক্তিক নাটকীয়তা কখনো দর্শক-হৃদয় স্পর্শ করে না। নাটকটিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল সেই অযৌক্তিক নাটকীয়তার ছড়াছড়ি। একা একটি মেয়ে দূরের বাসে পরীক্ষা দিতে যাওয়া, তৌসিফের অভদ্রতা মেনে নেওয়া, বাস খারাপ হলো বলে পাশের গ্রামে গিয়ে একজন অপরিচিত মেয়ে সেই অভদ্র ছেলেটির সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া-এ সবই ছিল অযৌক্তিক এবং অবাস্তব।