মঞ্চে 'হাছনজানের রাজা'

হাছনজানের রাজার কারিগরি প্রদর্শনীর একটি দৃশ্য। জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে।  ছবি: প্রথম আলো
হাছনজানের রাজার কারিগরি প্রদর্শনীর একটি দৃশ্য। জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে। ছবি: প্রথম আলো

হাসন রাজার কত কত গান! কত গল্প তাঁকে নিয়ে। বর্ণিল, বৈচিত্র্যময় ঘটনাবহুল তাঁর জীবন। ছিলেন সামন্তপ্রভু। সব ছেড়ে-ছুড়ে শেষ বয়সে হয়ে গেলেন মরমি সাধক, গীতিকবি।

অনেক কিংবদন্তি গানের স্রষ্টা হাসন রাজা আজ মূর্ত হবেন ঢাকার মঞ্চে। তাঁর জীবন নিয়ে ঢাকার নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর আজ মঞ্চে আনছে ‘হাছনজানের রাজা’। শাকুর মজিদের লেখা, অনন্ত হিরার নির্দেশনায় নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে।

গতকাল জাতীয় নাট্যশালায় ছিল নাটকের কারিগরি মঞ্চায়ন। নির্দেশক জানালেন, একালের মানস সরোবরের ভাবনায়, কল্পনায়, মোহে এক শ বছর আগের হাসন রাজাকে দেখাতে চেয়েছেন তাঁরা। গানে আর সংলাপে এগিয়ে যাবে গল্প। দর্শকেরা দেখবেন যৌবনে জমিদার হাসনের বেপরোয়া জীবন এবং মায়ের মৃত্যুর পর জীবন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি, মরমি সাধক হয়ে ওঠার গল্প। তিনি বলেন, ‘একালে আমাদের অনেকের ভেতরে একজন ত্যাগী ও ভোগী, সংগীতপ্রিয় ও মাতৃভক্ত, আত্মানুসন্ধানী ও উদাসী বাউলা হাসন রাজা দুর্দান্ত প্রতাপ নিয়ে বসত করে।’

কারিগরি প্রদর্শনী দেখে মনে হলো, গতানুগতিক ধারায় হাসন রাজার জীবনী তুলে ধরা হচ্ছে না; বরং হাসন রাজা এসেছেন এই প্রজন্মের তারুণ্যের আড্ডায়, ফেসবুকে। তরুণেরা নৌকায় ভ্রমণে বের হন ভরা পূর্ণিমা রাতে। একসময় তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় হাসন রাজার। তরুণদের সেই আড্ডায় সঙ্গিনীদের নিয়ে মিশে যান হাসন রাজা। কখনো তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলেন, তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে লিখছেনও তরুণেরা! কখনো বাস্তবে, কখনো কল্পনায়।

হাসন রাজার ভূমিকায় রামিজ রাজু
হাসন রাজার ভূমিকায় রামিজ রাজু

গান-সংলাপ-আলো-ছায়ায় বাংলাদেশে ভাটি অঞ্চল হয়ে উঠবে মঞ্চ। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, লক্ষ্মণছিড়ি আর রামপাশা মিলিয়ে যে বিশাল ভাটি বা হাওর অঞ্চল, সেখানকার পাঁচ লাখ বিঘায় জমিদারি ছিল যাঁর, মঞ্চে দেখা যাবে সেই দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী জমিদারের বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় জীবন। সেই জীবনের এক প্রান্তে হাসন রাজা অত্যাচারী প্রেমিক, স্বেচ্ছাচারী, বেখেয়ালি। অন্য প্রান্তে হাসন ত্যাগী, মানবদরদি। বিশাল জমিদারি ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে জনহিতকর কাজের জন্য ওয়াক্ফ করে পিয়ারীর সন্ধানে ভাওয়ালি নৌকায় উঠে বসা। যাঁর যাত্রার অন্তিম উপলব্ধি পিয়ারীর মাঝে নিজেকে এবং সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকের শেষে দেখা যাবে, আলো নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকেন হাসন রাজা। বাস্তবে ফিরে আসেন তরুণেরা।

এর আগে সুনামগঞ্জের আরেক বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবনী নিয়ে নাটক লিখেছিলেন শাকুর মজিদ। হাসন রাজাকে নিয়ে লেখা নাটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে মহাজনের নাও লেখার পর হাসন রাজা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। চেষ্টা করেছি যাতে কোথাও কোনো পুনরাবৃত্তি না হয়। যদিও এই দুজনের সাধনার লক্ষ্য একই ছিল। তবে উভয়ের বেড়ে ওঠা এবং বোধোদয়ের প্রেক্ষাপট আলাদা। জীবন সম্পর্কে একজন ভোগবাদী সামন্তপ্রভুর ধারণা পাল্টানোর সম্ভাব্য কারণ বের করতে বেশ খাটাখাটনি করতে হয়েছে।’ তিনি আরও বললেন, ‘ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে লেখার সময় নায়ককে সর্বগুণে গুণান্বিত এক মহাপুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমি চেষ্টা করেছি এক সাধারণ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করে তাঁর ভেতরের মহাপুরুষের বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে।’

‘হাছনজানের রাজা’ প্রাঙ্গণেমোরের ১৩ তম প্রযোজনা। নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। সংগীত পরামর্শক শিল্পী সেলিম চৌধুরী, পরিকল্পনা রামিজ রাজু। আলোক পরামর্শক বাংলাদেশের প্রবীণ আলোক পরিকল্পক ঠান্ডু রায়হান। আলোক পরিকল্পনা তৌফিক আজীম এবং পোশাক পরিকল্পনা করেছেন নূনা আফরোজ।

‘হাছনজানের রাজা’ নাটকে অভিনয় করেছেন রামিজ রাজু, আউয়াল রেজা, মাইনুল তাওহীদ, সাগর রায়, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা প্রমুখ। কাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে।