প্রোডাকশন বয়দের গল্প

>

চলচ্চিত্রের পেছনে এনামুল, রবিউল ও জুয়েলদের কাজও কম নয়
চলচ্চিত্রের পেছনে এনামুল, রবিউল ও জুয়েলদের কাজও কম নয়

দিন-রাত শুটিংয়ের মানুষের সেবা দিয়ে যান কিছু মানুষ। শুটিংয়ে প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পীসহ সবার বসার চেয়ার এগিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে খাবার পরিবেশন—সব কাজে তাঁদের হাত লাগাতে হয়। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁরা প্রোডাকশন বয় হিসেবে পরিচিত। তাঁদের সঙ্গে আছেন লাইট ও ক্রেনের কর্মীরা। মে দিবস উপলক্ষে পর্দার বাইরের এমন তিনজন—এনামুল, রবিউল ও জুয়েলকে নিয়ে লিখেছেন শফিক আল মামুন

সোমবার দুপুর। বিএফডিসিতে (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) গিয়ে দেখা গেল, সহকারী ব্যবস্থাপক সমিতির সামনে বসে গল্প করছেন প্রোডাকশন বয় রবিউল ইসলাম ও এনামুল হক এবং ক্রেনের কর্মী জুয়েল। প্রত্যেকেই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক দিন ধরে। শুরুতেই জানতে চাই, কেমন আছেন তাঁরা?

এনামুল বললেন, ‘পাঁচ বছর আগেও এফডিসিতে ছবির শুটিং দিয়ে জমজমাট থাকত। অনেকটা উৎসবের মতো। আমাদের মাসে আয় হতো ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন ৫-১০ হাজার হয়। আবার কোনো কোনো মাসে তা–ও হয় না।’

পাশ থেকে রবিউল বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলো যে কীভাবে পার করব, বুঝতে পারছি না।’

সবার চোখমুখেই হতাশা। সেটাকে খানিকটা পাশ কাটাতেই জানতে চাই, কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্প। বরিশালের ভুতুরদিয়া গ্রামের ছেলে এনামুল। প্রায় ২০ বছর আগে এফডিসিতে ছবির শুটিং দেখতে এসেই সিনেমার প্রোডাকশনে বয় হয়ে যান।

এনামুল বলেন, ‘এক পরিচিতজনের সঙ্গে শুটিং দেখতে ঢাকাতে এসেছিলাম। পরাধীন নামে একটি ছবির শুটিং হচ্ছিল। ভাবলাম, শুটিংয়ে থাকলে তো প্রিয় তারকাদের দেখা যাবে। কয়েক দিন পরই ওই পরিচিতজনের সহযোগিতায় কাজ শুরু করলাম। তার পর থেকে প্রায় চার শ ছবিতে প্রোডাকশন বয়ের কাজ করেছি আমি।’

ফাইটার জামানের হাত ধরে এফডিসিতে আসেন নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরের জুয়েল। তা–ও বছর পনেরো আগে। ফাইটের দৃশ্য ধারণের জন্য এখন ফোমের ব্যবহার হলেও আগে খড়ের বস্তার ব্যবহার হতো। জুয়েল বলেন, ‘আলমগীর, জসিম, শাবানার শুটিং দেখতে চাচার কাছে এসেছিলাম। কয়েক দিনের মাথায় শুটিংয়ে খড়ের বস্তা টানার কাজ শুরু করে দিলাম।’ জুয়েল প্রায় দুই শ ছবিতে কাজ করেছেন।

বড় ভাইয়ের হাত ধরে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন রবিউল। এনামুল বলেন, ‘সালমান শাহর ভক্ত ছিলাম। কাছে থেকে প্রিয় তারকাকে দেখতেই এ কাজে যুক্ত হই।’

নিজেদের কাজের সময় নিয়ে কথা বলেন তাঁরা। জানান, যতক্ষণ শুটিং চলে, ততক্ষণ এক নাগাড়ে কাজ করতে হয়। দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এনামুল বলেন, ‘কষ্ট হয় বটে, কিন্তু আনন্দটাও কম নয়! সিনেমার শুটিং একটা উৎসবের মতো। তা ছাড়া নায়ক-নায়িকাদের কাছাকাছি থেকে কাজ করি। তাঁরাও বেশ আদর করেন। আর শুটিংয়ের সুবাদে সারা দেশ ঘুরে বেড়াই, এটাও কম আনন্দ নয়।’

রবিউল বলেন, এই পেশায় শুটিংয়ের মানুষের মন যত জয় করা যাবে, ততই উন্নতি। মানুষের মন জয় করা মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে যায়।

তবে এত কিছুর বাইরে বাড়তি একটা আনন্দ হলো তাঁরা যখন গ্রামে বেড়াতে যান, তখন এলাকার মানুষের কাছে তাঁদের কদর বেড়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন সিনেমার নায়ক–নায়িকাদের গল্প শুনতে ছুটে আসেন তাঁদের কাছে।

জুয়েল বলেন, এলাকায় গেলে সবাই সম্মান করেন। অনেকেই বাড়িতে দেখা করতে আসেন। তাঁরা নায়ক–নায়িকাদের গল্প শুনতে চান। হাসতে হাসতে এনামুল বলেন, ‘বাড়িতে গেলে নায়ক–নায়িকাদের গল্প শুনতে দাওয়াত করে অনেকেই খাওয়াতে চান। যে কদিন থাকি, বাড়িতে লোকজনের ভিড় থাকেই। ভালো লাগে।’