'আমি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতাম'

>
অভয় দেওল
অভয় দেওল

প্রচার থেকে সব সময় নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করেন বলিউড তারকা অভয় দেওল। প্রায় তিন বছর অন্তর একটা করে ছবি করেন তিনি। কিন্তু পর্দায় যখনই আসেন, তখনই সাড়া ফেলে দেন অভয়। তাঁর ছবি বক্স অফিসে সাফল্য তো পায়ই, তাঁর অভিনয় সবার মন জয় করে। এবার মুক্তি পেল অভয় দেওল অভিনীত নানু কি জানু ছবিটি। হোটেল নভোটেলের এক আড্ডায় অভয় দেওল কথা বলেছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

প্রশ্ন: আপনাকে খুব কম ছবিতে দেখা যায়। ‘নানু কি জানু’ ছবিতে কাজ করার কারণ কী?

অভয় দেওল: আসলে আমার হাতে কাজ ছিল না তাই (সজোরে হেসে)। এই ছবি করার কারণ হলো এটা মেইনস্ট্রিম ফিল্ম। আর খুবই ইন্টারেস্টিং। ভৌতিক ও কমেডির একসঙ্গে পরিবেশন করা খুব শক্ত কাজ। এই ছবিতে তা–ই করা হয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার ফিল্মি গ্রাফ দেখে মনে হয় আপনি বেছে বেছে সিনেমা করেন। চিত্রনাট্যে কী দেখেন?

অভয় দেওল: সবার আগে চিত্রনাট্যে আমার চরিত্রটা দেখি। আর দেখি ওই চরিত্রটার সঙ্গে আমি নিজেকে কতটা যুক্ত করতে পারছি। ‘লার্জার দেন লাইফ’ টাইপের চরিত্র আমার খুব বোরিং লাগে। এই ধরনের চরিত্র আমি সাধারণত করি না। এ যুগের সঙ্গে চিত্রনাট্যটা কতটা প্রাসঙ্গিক, সেটা দেখি। গুড বয়, ব্যাড বয় আর একটা হিরোইন, এই ধরনের ছবিগুলো আমাকে আকর্ষণ করে না। আমার অভিনীত ছবি জিন্দেগি না মিলেগি দোবারার কথায় যদি আসেন, জোয়ার (আখতার) ছবিটি মেইনস্ট্রিম হলেও তাতে কোনো ভিলেন ছিল না। কিন্তু খুবই ভালো একটা ছবি। এখানে ভিলেন হলো মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকা ভয়।

প্রশ্ন: ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ এমন একটা ছবি, যা দর্শক বারবার দেখতে চাইবেন। এর সিক্যুয়েল এলে আপনি কি অভিনয় করবেন?

অভয় দেওল: নিশ্চয়ই করব। তবে এই ছবির সিক্যুয়েল করা খুবই শক্ত কাজ হবে। এর সিক্যুয়েলকে আরও উঁচুমানের হতে হবে।

প্রশ্ন: বলিউডের অনেকেরই ধারণা যে অভয়, হৃতিক ও নীল নিতিন মুকেশ—এই তিন অভিনেতার হলিউডে থাকা উচিত। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

অভয় দেওল: হলিউডের জন্য সবার আগে প্রয়োজন চামড়া সাদা হওয়া। আমি ভারতীয়দের নজরে ফরসা। কিন্তু বিশ্বের কাছে আমি কালো চামড়ার। ক্রিম লাগিয়ে আপনি যতই ফরসা হোন না কেন, আপনি ভারতীয়ই থাকবেন। তবে আমি একজন ভারতীয় হিসেবে গর্বিত। এখানের থেকে হলিউডে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আপনার চামড়া সাদা হলে হলিউডে আপনি হয়তো কাজ পাবেন। আর বলিউডে নায়ক হতে হলে পেশিবহুল শরীর হতে হবে। আর ভালো নাচ জানতে হবে। আর একটা জিনিস, বলিউড খুব সহজে ঢুকতে দেয়, আবার তাড়াতাড়ি ছুড়ে ফেলেও দেয়। কিন্তু হলিউডে ঢুকতে পারা খুব শক্ত কাজ।

প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তো এই প্রথা ভেঙে দিয়েছেন—

অভয় দেওল: হ্যাঁ, একদম তা–ই। তবে এটা সবে প্রথম পদক্ষেপ। আর একটা প্রোগ্রাম দিয়ে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না।

প্রশ্ন: আপনি প্রচার থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। আপনাকে নিয়ে কোনো গুঞ্জন শোনা যায় না। এমনকি বলিউডের পার্টিতেও আপনাকে দেখা যায় না। মনে হয় না এসব কিছু আপনার ক্যারিয়ারের কোথাও ক্ষতি করছে?

অভয় দেওল: হ্যাঁ, এসবের প্রভাব নিশ্চয়ই আমার ক্যারিয়ারে পড়ছে। এ জন্য আমার ক্যারিয়ারের গতি হয়তো কম। দেব ডি ছবির সময় আমি মিডিয়ার মুখোমুখি হব না বলে পালিয়ে যাই। আমি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতাম। ব্র্যান্ডের মাধ্যমে নিজের ইমেজ গড়া যায়। এখন অভিনেতারা ব্র্যান্ডকে হাতিয়ার করে স্টারডম কিনছেন। তবে এটা আগে থেকে চলে আসছে। আমি যখন বলিউডে আসি, তখন থেকে এসব দেখে আসছি। আমার নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে আমি একদম পছন্দ করি না। আসলে ফিল্মি পরিবারের হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকে অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছি। পেপারে, ম্যাগাজিনে পরিবার সম্পর্কে নানা কথা পড়তাম। তারপর যখন স্কুলে যেতাম—নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো আমাকে, তখন থেকে মিডিয়া সম্পর্কে আমার ভীতি তৈরি হয়। আসলে তখন আমি ছোট ছিলাম বলে কিছু বুঝতাম না। শুধু এটুকু বুঝতাম, আমার বাবা, কাকা, দাদা সম্পর্কে কেউ বাজে কিছু লিখেছে, তাই আমি রি–অ্যাক্ট করতাম। এখন আমি বুঝি এর প্রকৃত সত্যটা। মিডিয়া কীভাবে কাজ করে।

প্রশ্ন: তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবি আপনি কম করেন। কিন্তু পর্দায় যখনই এসেছেন দর্শক আপনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

অভয় দেওল: আমি আপনার সঙ্গে একমত। তবে আমি মনে করি, চলচ্চিত্রে খুব সক্রিয় থাকতে হয়। কথায় আছে না, ‘জো দিখতা হ্যায়, উও বিকতা হ্যায়’। আমাকে অনেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি মাঝে মাঝে কোথায় গায়েব হয়ে যান। তিন বছর পরপর আসেন। আবার ভালো বিক্রিও হন আপনি।’ টিভি খুললেই কোনো না কোনো চ্যানেলে দেখি আমার ছবি চলছে। যারা বলে আমাকে নাকি মাঝে মাঝে দেখা যায়, তাদের বলি, এই তো আমি আছি (সশব্দে হেসে)। তবে আমি এ ক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমাকে এই ইন্ডাস্ট্রির থেকে মানুষ বেশি গ্রহণ করেছে। আমার পাশে সব সময় দর্শককে পেয়েছি, ইন্ডাস্ট্রিকে পাইনি।

প্রশ্ন: এখন ছবি নিয়ে নানা নিরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আপনার অভিনীত ‘মনোরমা’-এর মতো ছবি এখন হচ্ছে না। এর কারণ কী?

অভয় দেওল: আমার অত্যন্ত প্রিয় এই ছবি। একদম আমার মনের কথা বলেছেন। এখন ছবি নিয়ে অনেক নিরীক্ষা হচ্ছে, কিন্তু সেই মানের ছবি হচ্ছে না। তবে এর পেছনে অনেক কারণ আছে। নভদীপের মতো পরিচালক এবং দেবিকার মতো লেখিকা ছিলেন বলেই মনোরমার মতো ছবি জন্ম নিয়েছে। সব পরিচালক নভদীপ হতে পারবেন না। কয়েক দশক ধরে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে লেখককে খুব বাজেভাবে ব্যবহার করা হয়। লেখককে বলা হয় হলিউডের ছবি কপি করতে। আর তাঁর নিজস্ব গল্প থাকলে তা এমনভাবে পরিবেশন করা হয় যে তাঁর নিজস্বতা হারিয়ে যায়। আর একটা সমস্যা, এখানে লেখকদের খুব কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। আমি ছোটবেলায় অনেক সময় সেটে গিয়ে দেখেছি, শুটিংয়ের সময় সংলাপ লেখা হচ্ছে। তাই শুরু থেকেই লেখককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। তবে এখন কিছুটা বদল এসেছে।