ইছামতীর তীরে সাধুসঙ্গের আসর

ইছামতীর তীরে লালনসংগীতের এটা ১৪তম আসর
ইছামতীর তীরে লালনসংগীতের এটা ১৪তম আসর

‘ছেড়ে দে তোর হিংসাবৃত্তি, ওরে মানুষ দেখবি যদি স্রষ্টাকে’মানবতার এমন বাণী প্রচারের মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার রাতে বাউলশিল্পীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের টেকেরহাট ইছামতীর তীর।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ওই ইউনিয়নের দোসরপাড়া গ্রামে পদ্মহেম ধাম লালন সাঁই বটতলায় শুরু হয় লালন সাঁই সাধুসঙ্গের আসর। শেষ হয় পরবর্তী দিন শনিবার দুপুরে।
পদ্মহেম ধাম লালন সাঁই বটতলার আয়োজক সূত্রে জানা যায়, পদ্মহেম ধামটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইছামতীর তীরে লালনসংগীতের এটা ১৪তম আসর।

‘কোথায় হে দয়াল কান্ডারি, এ ভবতরঙ্গে এসে কিনারায় লাগাও তরি’ সাঁইজির আগমনী এ গানের মধ্য দিয়ে পদ্মহেম ধামের সাধুসঙ্গের ১৪তম বার্ষিক অধিবাসন গত ২৭ এপ্রিল বিকেল ৪টায় শুরু হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় সন্ধ্যাভক্তি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে সাঁইজির বর্ণাঢ্য জীবনী আলোচনা করা হয়। এরপর বাদ্যযন্ত্র ছাড়া ধন্য গান। রাত ১০টায় লালনসংগীতের মূল আসর শুরু হয়ে পরদিন (শনিবার) ভোরে শেষ হয়। সকালে লালন শাহের গোষ্ঠ গান (প্রার্থনা) ও বাল্যসেবা (সকালের খাবার) দেওয়া হয়। শনিবার দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এবারের আসর শেষ হয়। আসরে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লালনসংগীতশিল্পী ও সাধুগুরুরা আসেন এবং সংগীত পরিবেশন করেন।

সাঁইজির জীবন, কর্ম ও মানবপ্রেমের বাণী পরিবেশন ছাড়াও বাংলার লোকসংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শুক্রবার সকাল থেকে ইছামতীর তীরে লালন সাঁই বটতলায় মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লালনসাধক ও ভক্ত-অনুসারীরা এসে জড়ো হতে থাকেন।

সাধুসঙ্গকে কেন্দ্র করে সবুজঘেরা ইছামতী নদীর তীরে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, শিশুদের খেলনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বসে। লালনসংগীত ও মেলাকে কেন্দ্র করে ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে সব বয়স, শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমন ঘটে পদ্মহেম ধামে।

সাধুসঙ্গের এবারের আসরে গান পরিবেশন করেন দরবেশ নহির উদ্দিন ফকির, সামছুল ফকির, মহরম শাহ, বুড়ি ফকিরানী, ফ্রান্সের নাগরিক দেবরা জান্নাত, ফকির রমিজ শাহ, ফকির আলাউল শাহ, আরিফ বাউল, শফি মন্ডল, হৃদয় শাহ ও আনন্দনগর ব্যান্ডের শিল্পীরা।

লালন সাঁই বটতলায় সাধুসঙ্গের আসরের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়ার হেমা শ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা দরবেশ নহির উদ্দিন ফকির। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন লতব্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সোহরাব উদ্দিন ও পদ্মহেম ধাম লালন সাঁই বটতলার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কবির হোসেন।

কবির হোসেন বলেন, ‘সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে পবিত্র ও সুন্দর মনের দরকার। সংগীতই পারে মানুষের মনকে পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ করতে। এ ক্ষেত্রে লালন ফকিরের মানবতার সংগীত মানুষকে শুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সাঁইজির আদর্শই আমাদের মূলশক্তি। “সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন” লালন সাঁইজির এই বাণীর ওপর ভিত্তি করেই আশ্রম ও লালনগীতি বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে।’