লাইকের চেয়ে ডিজলাইকের সংখ্যা বেশি!

নুসরাত ফারিয়া ও পড়শী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
নুসরাত ফারিয়া ও পড়শী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

চিত্রনায়িকা থেকে সংগীতশিল্পী হতে গিয়ে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন নুসরাত ফারিয়া। দিন দিন ফারিয়ার প্রতি ভক্ত-দর্শক-শ্রোতাদের অপছন্দের মাত্রা বেড়েই চলছে। নিজের গাওয়া ‘পটাকা’ গানটি প্রকাশের পর থেকেই উপস্থাপক থেকে নায়িকা বনে যাওয়া ফারিয়াকে নিয়ে অন্তর্জাল দুনিয়ায় সমালোচনা যেন থামছেই না। একই দিনে মুক্তি পাওয়া এ প্রজন্মের আরেক সংগীতশিল্পী পড়শী তাঁর গাওয়া গান ‘রাস্তা’ দিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন। এই গানটিও ইউটিউবের দর্শকের কাছে পছন্দের চেয়ে অপছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

২৬ এপ্রিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি ইউটিউবে নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’, একই দিনে ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউবে পড়শীর ‘রাস্তা’ গানের মিউজিক ভিডিও মুক্তি পায়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটা পর্যন্ত ইউটিউবে ‘পটাকা’ গানটি দেখা হয়েছে ১২ লাখ ৭৭ হাজার ১৯৭ বার। নুসরাত ফারিয়ার গাওয়া এই গানে ‘লাইক’ ছিল ১৩ হাজার আর ‘ডিজলাইক’ ১ লাখ ২ হাজার। এই গানে মন্তব্য ছিল ১০ হাজারেরও বেশি। ফারিয়ার গাওয়া এই গান একই দিনে ভারতের শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মেও মুক্তি পায়। সেই প্ল্যাটফর্মে গানটি দেখা হয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৫ বার। এখানে গানটির প্রতি দর্শকদের ‘ডিজলাইক’ ছিল বেশি, লাইকের তিন গুণ। অন্যদিকে পড়শীর গাওয়া ‘রাস্তা’ গানের ভিডিও দেখা হয়েছে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭০ বার। এই গানে ‘লাইক’ ছিল ৫ হাজার ৪০০ আর ‘ডিজলাইক’ ১২ হাজার।

নুসরাত ফারিয়ার গাওয়া গানটির কথা লিখেছেন রাকিব হাসান আর সংগীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম হাসান। গানের ভিডিও পরিচালনা করেছেন ভারতের বাবা যাদব। এদিকে রবিউল ইসলাম জীবনের লেখা পড়শীর গাওয়া ‘রাস্তা’ গানের সংগীত পরিচালনা করেছেন জুয়েল মোর্শেদ আর ভিডিওর পরিচালক শাহরিয়ার পলক।

নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’ গানের ভিডিওর দৃশ্য
নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’ গানের ভিডিওর দৃশ্য

সমালোচকদের দাবি, ‘পটাকা’ গানের শিরোনামের সঙ্গে কথা আর ভিডিওর কোনো মিল নেই। কেউ কেউ নুসরাত ফারিয়ার প্রতি এমন তির্যক মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, নুসরাত ফারিয়া একজন নায়িকা। তিনি মোটেও পেশাদার গায়িকা নন। তাই তাঁর এই গান গাওয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত নয়। তাঁর কাছ থেকে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর মতো আউটপুট মোটেও আশা করা উচিত নয়। বরং তাঁর গান গাওয়ার বিষয়টিকে প্রশংসা করা উচিত।

নুসরাত ফারিয়ার গানকে অনেকেই কুরুচিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। ফাহাদ বিন আজম লিখেছেন, এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো গান ডিজলাইকের রেকর্ড গড়ল। হাসিব নাহার লিখেছেন, ‘১০ বারের বেশি গানটি শুনলাম। ডিজলাইক দেওয়ার মতো কিছুই পেলাম না।’ তাশাদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আমার জীবনে ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড নষ্ট!’ ওয়াসিম আহমেদ লিখেছেন, অসাধারণ গান, নুসরাত ফারিয়া ইজ বেস্ট। সানজিদা মেঘলা লিখেছেন, গানটা গিনেস বুকে নাম লেখাবে শুধু আনলিমিটেড ডিজলাইকের জন্য! শাহজাহান সুমন লিখেছেন, ‘গানটার কোনো অর্থ আছে বলে মনে হচ্ছে না। গানের সঙ্গে লাফালাফির কোনো মিল পেলাম না।’ আবদুর রহিম লিখেছেন, ‘ঝড়ের মধ্যেও ফোনের টাকা রিচার্জ করে এলাম, শুধু একটা ডিজলাইক দেওয়ার জন্য।’

শুধু ডিজলাইক নয়, গান দুটির ভিডিওতে মন্তব্যের দিকে তাকালে নেতিবাচকের ভিড়ে ইতিবাচক মন্তব্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সংগীত-সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে অনেকেই প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছেন, গান আর ভিডিও অনেকের ভালো না-ও লাগতে পারে, তাই আপত্তিকর মন্তব্য করা মোটেও ঠিক নয়। গঠনমূলক সমালোচনা হলে শিল্পীরা পরবর্তী সময়ে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারেন। অন্তর্জাল দুনিয়ায় আবার আজকাল অনেকে কিছু না বুঝেই প্রতিক্রিয়া দেখান।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘আমরা সবাই কেন নেতিবাচক দিকটি দেখছি? আমরা কেন ইতিবাচক দিকটি দেখছি না? যাঁরা আমার গানের প্রশংসা করছেন, তাঁদের কথা কেন তুলে ধরছি না। যাঁরা খারাপ লিখছেন, তাঁরা লিখেই যাচ্ছেন। তাঁদের নিয়ে বলার কিছু নেই। আবার আরেকটা অংশ আমার হয়ে যুদ্ধ করছে! বিভিন্ন ব্লগ লিখছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসা করছে, সেটাকে কেন আমরা সামনে নিয়ে আসছি না?

পড়শীর ‘রাস্তা’ গানের ভিডিওর দৃশ্য
পড়শীর ‘রাস্তা’ গানের ভিডিওর দৃশ্য

আর পড়শী বলেন, ‘আমি দেখেছি, যখন একজন খারাপ কিছু বলা শুরু করে, তখন সবাই সেদিকে চলে। এটা হতেই পারে। সবকিছুই যে লাইকে পরিপূর্ণ হবে, এমনটা তো নয়। আমি ভিন্নধর্মী একটা কাজ করেছি। আমি যে কাজ করেছি, সামনাসামনি অনেকই ভালো বলেছেন। ইউটিউবে সবাই যেভাবে খারাপ মন্তব্য করেছে, সে রকম কিছু এই গানে হয়েছে বলে আমি মনে করি না। ভিন্নধর্মী কোনো কাজ করতে গেলে খারাপ-ভালো মন্তব্য নেওয়ার মানসিকতা আমাদের রাখতে হবে।’

এদিকে নয় মাস আগে মুক্তি পাওয়া কুসুম শিকদারের গাওয়া গান ‘নেশা’ নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। গানটিতে কুসুমকে উত্তেজক দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গেছে বলে অনেকে মত দেন। কুসুমের গাওয়া সেই গানটিতেও লাইকের চেয়ে ডিজলাইক ছিল বেশি।