কান উৎসবের তীর্থের কাক!

শুধু একটি টিকিটের জন্য এভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন সিনেমাপ্রেমীরা। ছবি: প্রথম আলো
শুধু একটি টিকিটের জন্য এভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন সিনেমাপ্রেমীরা। ছবি: প্রথম আলো

৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্র ও তারকারা মূল আকর্ষণ। তবে উৎসবের বাইরে কিছু, সিনেমার বাইরেও কানের রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিছু চরিত্র থাকে, যাদের চোখ থেকে সিনেমা দেখার স্বাদ আলাদা।

সুদর্শন ছেলে আর সুন্দরী স্বর্ণকেশীরা সামনে এসে মিষ্টি হেসে বলবেন, ‘বঝু’। তাঁদের হাসি দেখলে মনে হবে মনপ্রাণ সব উজাড় করে দিয়ে দিই। কিন্তু তাঁরা মনপ্রাণ কিংবা অর্থকড়ি কিছুই চান না। তাঁরা শুধু একটা সিনেমা দেখতে চান। এ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্যুট-কোট বা আঁটসাঁট গাউন-হাই হিল পরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা!

কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিবোর্ডের প্রধান অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। ছবি: এএফপি
কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিবোর্ডের প্রধান অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। ছবি: এএফপি

গত মঙ্গলবার ছিল ৭১তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী দিন। ফ্রান্সের কানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত সাড়ে আটটায় দেখানো হয় উৎসবের উদ্বোধনী ছবি এভরিবডি নোজ। অস্কারজয়ী ইরানের নির্মাতা আসগর ফরহাদির প্রথম স্প্যানিশ ছবি। তাই দর্শকের উত্তেজনা ছবিটি নিয়ে খানিকটা বেশি। তার ওপর ছবির মূল পাত্রপাত্রী তারকা শিল্পী-পেনেলোপে ক্রুজ ও হাভিয়ের বারদেম। এ জন্যই বিকেল পাঁচটা থেকেই ভিড় জমতে থাকে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের বাইরে।

তারকাবহুল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তো ছিল। গত মঙ্গলবার যখন তারকারা উদ্বোধনের জাঁকজমক আয়োজন মন দিয়ে উপভোগ করছিলেন, পিনপতন নীরবতায়, তখন গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের বাইরে সে কী হট্টগোল। কার আগে কে লাইনে দাঁড়াবেন, কে কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন, এই একটা ছবি দেখার জন্য তাঁর ফিরিস্তি মুখে মুখে। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপের চেষ্টা করার পর ফরাসি দেশে একজনকে পাওয়া গেল, যিনি ইংরেজি বলতে পারেন। তাঁকে টিকিটের অপেক্ষার গল্প শোনানোর অনুরোধ জানালে শুরুতেই প্রশ্ন করেন, ‘তুমি কি একটা আমন্ত্রণপত্র দিতে পারবে আমাকে?’ নিজের অপারগতা স্বীকার করে তাঁর পুরো পরিচয় জানতে চাই। প্যারিস থেকে আসা সেবাস্তিয়ান জানান, তনি পড়াশোনা করছেন সিনেমা নিয়ে। নিজেও টুকটাক স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানান। ইরানি নির্মাতা আসগর ফরহাদির ভক্ত তিনি। তাই স্যুট-কোট-টাই পরে বেলা তিনটা থেকে খুঁজছেন টিকিট। বললেন, সামনে আরও কিছু ছবি আছে, যা দেখার জন্য আবারও এভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামবেন তিনি।

কান উৎসবে ছবির টিকিট আর আমন্ত্রণপত্র পাওয়া খুব সহজ নয়। কান উৎসবের বাছাই করা মূল ছবিগুলো দেখার জন্য অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হয়, থাকতে হয় উৎসব আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যাজ কিংবা নির্দিষ্ট সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা আমন্ত্রণপত্র। নিছক সিনেমাপ্রেমী চাইলেই উৎসবের নির্বাচিত ছবিগুলো দেখতে পারেন না, সে যতই পয়সাওয়ালা ব্যক্তি হোন না কেন। তাই তো ব্যাজহীন পয়সাওয়ালা ব্যক্তিরা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন, শুধু একটি টিকিটের জন্য। যদি আমন্ত্রণপত্র পাওয়া কোনো ব্যাজধারীর মনে মায়া হয় আর তিনি যদি ব্যস্ততার কারণে সিনেমা দেখতে না পারেন, তাহলে সেটা দিয়ে কানের তীর্থের কাকদের দান করে দেওয়া যায়।