সমুদ্রসৈকতে নাটকের শুটিংয়ের জন্য গুনতে হবে টাকা

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা

১০ হাজার নয়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শুটিংয়ের জন্য এখন থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য দুই হাজার টাকা গুনতে হবে শুটিং ইউনিটকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। রাতেই প্রথম আলোকে তা নিশ্চিত করেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শুটিং করতে এখন গুনতে হয় বাড়তি ফি, অনুমোদন নিয়েও থাকে নানা জটিলতা—এ নিয়ে কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিচালক, অভিনয়শিল্পী আর প্রযোজকদের একটা বড় অংশ। এরপর জটিলতা নিরসনে ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের আলোচনা হয়। সবার সম্মতিক্রমে নাটকের শুটিংয়ের জন্য এখন থেকে সমুদ্রসৈকত ব্যবহারে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বি, ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক, সহসভাপতি সৈয়দ শাকিল, প্রচার সম্পাদক পিকলু চৌধুরী এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য মোহন খান।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শুটিং করতে গেলে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়েই শুটিং করতে হয় নির্মাতাদের। সম্প্রতি এই ফির পরিমাণ ১০ হাজার টাকা করায় নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা প্রতিবাদ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে মন্তব্য করেন তারকারা।

নাটকের প্রযোজক-পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের দাবি, পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সমুদ্রসৈকতকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলতে ভূমিকা রাখছেন তাঁরা। অথচ সেই সৈকতে শুটিং করতে গিয়ে অনুমোদন নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁদের। শুধু তা-ই নয়, নাটকের বাজেটের বর্তমান পরিস্থিতিতে সৈকতে শুটিং ফি বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে গত বছর নভেম্বরে ডিরেক্টরস গিল্ড ও প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হলেও তাতে প্রশাসনের সাড়া মেলেনি। অবশেষ গতকাল বিকেলে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানান এস এ হক অলিক।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতের পাঁচটা পয়েন্টে হ্যালোজেন বাতি জ্বলে, ৮০ জনের বিচকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করে। এসবের জন্য খরচ আছে। কে দেবে? শুটিং থেকে যে টাকা আসবে, তা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির তহবিলে জমা হবে। তহবিল থেকে কমিটির সিদ্ধান্তে সৈকতের উন্নয়নের জন্য এই টাকা ব্যবহার করা হবে। যেকোনো দেশের সৈকতে শুটিং করতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতেই হয়। আমরাও আমাদের এত বড় সৈকত সুন্দর রাখতে চাই। এটাকে সবাই ইতিবাচকভাবে দেখলেই হয়।’

কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘এত বড় সমুদ্রসৈকতে একটা চেঞ্জিং রুম নেই, বাথরুম নেই, কোনো লকার নেই—আমাদের ইচ্ছা আছে কয়েকটা পয়েন্টে এসব করব। আমাদের সঙ্গে পরিচালক, প্রযোজকদের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধিদল দেখা করেছে। তাঁরা আমাদের প্রস্তাবে একমত হয়েছেন।’

সমুদ্রসৈকতে শুটিংয়ের বিষয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রতিনিধিদল আর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এস এ হক অলিক বলেন, ‘আগে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে শুটিংয়ের ব্যাপারে অনুমতি নিতে খুব ঝামেলা পোহাতে হতো। আশা করছি, আর এমনটা হবে না। এখন থেকে ঘরে বসেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শুটিংয়ের অনুমতির জন্য আবেদন করা যাবে, যা ১৫ মে থেকে কার্যকর হবে। আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে অনুমোদন দেবে। প্রতিদিন শুটিং ফি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ফি আবেদন ফরমে উল্লেখিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যে কোনো শাখায় জমা দেওয়া যাবে।’