'সাধারণের লালগালিচা' অনেকেরই শেষ ভরসা

কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেস কনফারেন্স হলের সামনের লালগালিচায় সাধারণ দর্শনার্থীরা ছবি তুলছেন। ছবি: লেখক
কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেস কনফারেন্স হলের সামনের লালগালিচায় সাধারণ দর্শনার্থীরা ছবি তুলছেন। ছবি: লেখক

কান উৎসবের সময় ফরাসি দেশের এই সাগর লাগোয়া শহরটাতে থাকাই এক বিশাল গৌরবের ব্যাপার। তাই এ সময়ে এই উৎসবে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সবাই। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। কিন্তু এসে কী করেন তাঁরা? নির্দিষ্ট ব্যাজ ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেন না উৎসবের মূল আসরে কিংবা প্রেক্ষাগৃহগুলোয়। তাই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য তাঁদের শেষ ভরসা হয় ‘সাধারণের লালগালিচা’!

গত কয়েক দিনে ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল কেন্দ্রস্থল পালে দো ফেস্তিভাল ঘুরে এমন দুটি জায়গা পাওয়া গেল, যেখানে গেলে চোখে পড়ে অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব কিছু দর্শনার্থী। এর মধ্যে একটি হলো কানের সালে দুবুসি প্রেক্ষাগৃহের লালগালিচা, অন্যটি কানের প্রেস কনফারেন্স রুমের বাইরের লালগালিচা।

এই দুটি জায়গা কিছু নির্দিষ্ট সময় বাদে দিনভরই খোলা থাকে সাধারণ মানুষের জন্য। সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্স রুমের বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারেন না। তবে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়ে গেলে ওই রুমের বাইরে দেখা যায় ঝকমকে গাউন কিংবা পরিপাটি স্যুট-কোট পরা দর্শনার্থীরা পেশাদার আলোকচিত্রী নিয়ে ছবি তুলে যাচ্ছেন অনবরত।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেখানে প্রেস কনফারেন্স রুমের পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় দেখা হলো জার্মানি থেকে আসা কেটির সঙ্গে। লালগালিচার ওপর দাঁড়িয়ে রুপালিরঙা গাউন পরা এই সুন্দরীকে আলোকচিত্রী কখনো বলছেন, ‘হেঁটে এসো।’ কখনো বলছেন, ‘ক্যামেরার দিকে নয়, অন্য দিকে তাকাও।’ ছবি তোলা শেষ হলে এগিয়ে যাই। কেটি নিজের পরিচয় দিলেন মডেল হিসেবে। পালে দো ফেস্তিভালের ভেতর আঁ সারতেঁ রিগার বিভাগের একটি ছবি দেখার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন তিনি। সেটাই সম্বল। এর জোরেই কেটি ঢুকতে পেরেছেন পালে দো ফেস্তিভালের ভেতর। ওই এক আমন্ত্রণপত্র দিয়ে নিজেকে জুড়ে দিয়েছেন কান চলচ্চিত্র উৎসব ও এর লালগালিচার সঙ্গে।

কয়েক দিন আগে একদল তরুণীকে দেখা গেল ওই একই লালগালিচার ওপর ছবি তুলতে। তাঁদের সঙ্গে ছিল একজন আলোকচিত্রী ও একজন নির্দেশক। এই পালে দো ফেস্তিভালে তাঁরা ঢুকেছেন তরুণ নির্মাতা হিসেবে। ছবি তোলার পাশাপাশি চলছিল ভিডিও ধারণও। সমস্বরে তাঁরা বলছিলেন, ‘ইয়েস উই ক্যান।’ একটি বিশেষ ওয়ার্কশপের অংশ হয়ে এই উৎসবের সঙ্গে জুড়েছেন তাঁরা। কান চলচ্চিত্র উৎসবের সত্যিকারের লালগালিচায় (রেড কার্পেট) হাঁটার তো সুযোগ নেই, তাই ভরসা এই সাধারণের গালিচাটাই।

সাধারণ মানুষের জন্য কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে পালে দো ফেস্তিভালের সালে দুবুসির প্রেক্ষাগৃহের বাইরের লালগালিচাটি। তবে এর জন্যও থাকতে হয় সেখানে প্রদর্শিত কোনো না কোনো ছবি দেখার আমন্ত্রণপত্র কিংবা ব্যাজ। গত রোববার আঁ সারতেঁ রিগার বিভাগে নির্বাচিত নন্দিতা দাসের মান্টো ছবিটি দেখতে গিয়ে লালগালিচায় পাওয়া গেল উৎসাহী কয়েকজন দর্শককে। যাঁরা মার্শে দ্যু ফিল্মে (ছবি বাজার) অংশ নিতে কানে এসেছেন। ভারতীয় হওয়ার সুবাদে এবং মার্শে ব্যাজের মাধ্যমে ঢুকেছেন সালে দুবুসিতে সিনেমা দেখতে। প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশমুখে তাঁদের ছবি তোলার ব্যস্ততা দেখে দিব্যি বোঝা গেল দুবুসিতে যেন লালগালিচায় পা ফেলতেই এসেছেন তাঁরা। দুবুসিতে প্রতিটি প্রদর্শনী শুরুর আগে এমন ছবি তোলার হিড়িক পড়ে লালগালিচার ওপর। কারণ এই প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশপথ অনেকটাই গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের মতো। এ কারণেই অনেকে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো মূল রেড কার্পেটে হাঁটার স্বাদ মেটায় এই ‘গণমানুষের লালগালিচা’য় হেঁটে।

তাই এর পরের বার থেকে লালগালিচার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কারও ছবি দেখলেই খুশিতে ফেটে পড়ার কারণ নেই। গালিচা লালরঙা হলেও এর উত্তাপ আর প্রভাব কতটা, সেটা বুঝে নিতে হবে আগে।