সংবাদ সম্মেলনে এসে ট্রাম্পকে ধুয়ে দিলেন স্পাইক লি

ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান ছবির দুই প্রধান চরিত্র জন ডেভিড ওয়াশিংটন ও অ্যাডাম ড্রাইভারের মাঝখানে মার্কিন নির্মাতা স্পাইক লি। গত সোমবার, কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলে।  ছবি: এএফপি
ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান ছবির দুই প্রধান চরিত্র জন ডেভিড ওয়াশিংটন ও অ্যাডাম ড্রাইভারের মাঝখানে মার্কিন নির্মাতা স্পাইক লি। গত সোমবার, কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলে। ছবি: এএফপি

‘আমি আশাবাদী, তবে অন্ধ নই’, বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, রেষারেষি আর বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মার্কিন চিত্রনির্মাতা স্পাইক লি। ২৭ বছর পর তিনি ফিরেছেন কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে, তাঁর ছবি ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ দিয়ে। ফিরেই উৎসবের আবহকে তাতিয়ে তুললেন। গত মঙ্গলবার তাঁর ছবির সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তুলাধুনা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

সোমবার রাতে কানের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে হয় ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ছবিটি রন স্টলওয়ার্থের একই নামের বই থেকে বানানো। এতে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জন ডেভিড ওয়াশিংটন, অ্যাডাম ড্রাইভার, লরা হ্যারিয়ের, টোর গ্রেস। সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন সবাই।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে স্পাইক লি আর ছবির শিল্পীরা অংশ নেন কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলে। সেখানেই এক সাক্ষাৎকারে স্পাইক লি তাঁর চারটি ছবির অভিনেতা এবং বন্ধু ডেনজেল ওয়াশিংটনের ছেলে ডেভিডের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘কোনো গাছের ফল কখনো গাছটি থেকে দূরে গিয়ে পড়ে না। গাছের ছায়াতলেই থাকে। সেই গুণগুলোই পায়।’

ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন জ্যামেইকান বংশোদ্ভূত কিংবদন্তি মার্কিন গায়ক ও অভিনেতা হ্যারি বেলাফন্টে।

‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ ছবিটি ১৯৭০-এর দশকের পটভূমিতে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদীদের গোপন সংগঠন ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যানের একটি অভিযান নিয়ে তৈরি। তাতে অংশ নেন কলরাডোর দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জন ডেভিড ওয়াশিংটন ও অ্যাডাম ড্রাইভার।

কৃষ্ণাঙ্গ নিধনের জন্য উগ্র শ্বেতাঙ্গরা গঠন করেছিল ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যান (কেকেকে বা ক্ল্যান নামেও পরিচিত)। যুক্তরাষ্ট্রের এ সংগঠনটি এখনো সহিংসতা ও অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে। স্পাইক লি তাঁর ছবিটিতে তুলে ধরেছেন সংগঠনটির অরাজকতার তেমনই এক ছবি। আর ছবির শেষে জুড়ে দিয়েছেন গত বছরই ঘটে যাওয়া তাদের বর্ণবাদী সহিংসতার চিত্র।

গত বছর শার্লটসভিল নাৎসি মার্চ নামে একটি আন্দোলন করেছিল উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গরা। সে আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট হয় নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। প্রতিবাদী সে সমাবেশে উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গরা গাড়ি তুলে দেয়। মারা যান হিথার হায়ার নামের এক ব্যক্তি। ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান ছবিতে আছে সহিংসতার সেই দৃশ্যটিও।

সে ঘটনা গভীরভাবে প্রভাবিত করে সম্মানসূচক অস্কারজয়ী নির্মাতা স্পাইক লিকে। সংবাদ সম্মেলনে হামলাটির প্রসঙ্গ টেনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাপান্ত করে ছাড়েন তিনি। বলেন, ‘আমাদের হোয়াইট হাউসে একজন আছেন, যাঁর নাম আমি মুখেও আনতে চাই না। ন্যক্কারজনক ঘটনাটি তিনি আমলেই নেননি। তিনি নাকি ঘৃণা নয়, ভালোবাসা ছড়াতে এসেছেন। এই নির্বোধ প্রেসিডেন্ট ক্ল্যান কিংবা নাৎসিদের বিরুদ্ধে কিছুই বললেন না। তিনি তখন কঠোর ভাষায় এর বিরোধিতা করলে হয়তো বিশ্বের সামনে নিজেদের আমরা সভ্য বলে তুলে ধরতে পারতাম।’

চারদিকের ঘৃণা, বৈষম্য আর সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের কি কোনো উপায়ই নেই? সংবাদ সম্মেলনে স্পাইক লির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন এক সাংবাদিক। জবাবে ৬১ বছর বয়সী এ নির্মাতা বলেন, ‘আমি আশাবাদী, তবে অন্ধ নই। এমন হানাহানি ও সহিংসতা যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ঘটছে, তা নয়। এ সংকট বিশ্বজোড়া। ডানপন্থীদের উত্থান শুধু আমেরিকাকে নয়, পুরো দুনিয়াকেই ভোগাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ায় আছেন একজন, আরেকজন আছেন রাশিয়ায়। কী যে হচ্ছে এসব! আমাদের এখনই সজাগ হতে হবে। তাই আমার এই ছবিকে একটি ওয়েক আপ কল বলতে পারেন।’