কড়াকড়ি নিয়মের মাঝেই লালগালিচায় বনমানুষ!

কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলে সোলো: আ স্টার ওয়ারস স্টোরি ছবির ‘হান সোলো’ অলডেন এরেনরাইক, ‘বনমানুষ চিউবাকা’ জোনাস সুতামো ও ‘কিরা’ এমিলিয়া ক্লার্ক। ছবি: সংগৃহীত
কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলে সোলো: আ স্টার ওয়ারস স্টোরি ছবির ‘হান সোলো’ অলডেন এরেনরাইক, ‘বনমানুষ চিউবাকা’ জোনাস সুতামো ও ‘কিরা’ এমিলিয়া ক্লার্ক। ছবি: সংগৃহীত

কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কড়াকড়ি নিয়ম-যে কোনো ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে অতিথি পুরুষ দর্শককে আসতে হবে টাক্সিডো, বো টাই, ফরমাল জুতো পরে আর মেয়েদের পরিপাটি পোশাকের জন্য পরে আসতে হবে হাই হিল। এই নিয়মের বাইরে গেলে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের লালগালিচায় কারও পা ফেলার সুযোগ নেই।

তবে গত মঙ্গলবার রাতে এই নিয়ম ভাঙলেন একজন। টাক্সিডো-বো টাই তো দূরে থাক, সেই দর্শক প্যান্টও পরেননি; চলে এসেছেন লালগালিচায়। আর উৎসব কর্তৃপক্ষও তাঁকে এসবের পরও স্বাগত জানাল! এ কেমন বিচার?

না, উৎসব কর্তৃপক্ষ কোনো বৈষম্য করেনি। নিয়ম ভাঙার পরও তারা যাকে লালগালিচায় সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেটি হলো এক বনমানুষ, চিউবাকা। মহাজগতের জনপ্রিয় ডাকাত হান সোলোর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের দুটো চরিত্র তারা।

গতকাল লালগালিচাকে মাতিয়ে তুলল কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী চিউবাকা। নিজের লোমশ শরীর নিয়ে শুধু লালগালিচায় নয়, কানের আনুষ্ঠানিক ফটোকলেও চিউবাকা হাজির।

রোমাঞ্চভরা সিরিজের আগের দুটি ছবি কান উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল। সে-ও অনেককাল আগের কথা। এর মধ্যে একটি দেখানো হয়েছিল ২০০২ সালে (স্টার ওয়ারস এপিসোড টু: অ্যাটাক অব দ্য ক্লোনস), অন্যটি দেখানো হয় ২০০৫ সালে (স্টার ওয়ারস: রিভেঞ্জ অব দ্য সিথ)।

এবারের ছবিটি ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের ভক্তদের জন্য খুবই বিশেষ। কারণ, এবারের সোলো: আ স্টার ওয়ারস স্টোরিতে দেখা যাবে প্রিয় চরিত্র হান সোলোর জন্মকথা। অর্থাৎ কী করে কোরেলিয়া গ্রহের এক তরুণ হয়ে উঠলেন মহাবিশ্বের সুদর্শন ডাকাত! সেই সঙ্গে হান সোলোর কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের পেছনের ইতিহাসও এ ছবি থেকে জানা যাবে।

গতকাল ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় প্রথম আলোর। প্রতিযোগিতার বাইরে হওয়া সত্ত্বেও ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের ছবি হওয়ার কারণে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার প্রদর্শনীতে অংশ নিতে অতিথি দর্শকেরা লাইন ধরতে শুরু করেন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের ও সালে দুবুসির সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কেউ পরে এসেছে হান সোলোর ছবিওয়ালা টি-শার্ট, কারও চুল আবার প্রিন্সেস লিয়ার (আরেকটি চরিত্র) মতো করে বাঁধা। অনেকে আবার শীতের মধ্যে গায়ে জড়িয়ে এসেছেন ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের দুর্ধর্ষ ভিলেন ডার্থ ভেডরের মতো কেইপ।

লালগালিচায় লোমশ ‘চিউবাকা’ চরিত্রের অভিনেতা জোনাস সুতামো ছাড়া আরও হাঁটেন ছবির পরিচালক রন হাওয়ার্ড, তরুণ ‘হান সোলো’ অলডেন এরেনরাইক, তাঁর প্রেমিকা ‘কিরা’, অর্থাৎ এমিলিয়া ক্লার্ক, সোলোর গুরু ‘টবাইস বেকেট’ অর্থাৎ উডি হ্যারেলসনসহ অনেকে।

উদ্বোধনী প্রদর্শনী শেষে এর পরিচালককে প্রায় তিন মিনিট দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান দর্শক। কারণ, হ্যারিসন ফোর্ডের করা কালজয়ী এ চরিত্রের ইতিহাস একটি ছবির মধ্য দিয়ে এমনভাবে গুছিয়ে আনা খুব সহজ কাজ ছিল না। এর আগে নির্মাতা ফিল লর্ড ও ক্রিস্টোফার মিলারের ছবিটি পরিচালনার কথা ছিল। পরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিচালকের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে অসাধ্যকে সাধন করে দেখিয়েছেন রন হাওয়ার্ড। তাই কানজুড়ে তাঁর এই সাফল্য উদ্যাপন করা হলো তিন মিনিটের দাঁড়িয়ে অভিবাদন, জাঁকজমক বিচ পার্টি এবং আট মিনিটের জমকালো আতশবাজির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে।