বিটিভিতে এখনো যে ভালো নাটক হয়, তার দৃষ্টান্ত ডাউনলোড

ডাউনলোড নাটকের দৃশ্যে নওশাবা ও শিল্পী সরকার
ডাউনলোড নাটকের দৃশ্যে নওশাবা ও শিল্পী সরকার

অনুষ্ঠানের নাম ‘তোমায় গান শোনাব’। কৌশিক শংকর দাশের উপস্থাপনায় এটি প্রচারিত হলো ১০ মে রাত ১১টায় মাছরাঙা টিভিতে। এবারে শিল্পী ছিলেন সালমা আকবর ও সাজেদ আকবর। দুজনই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী এবং স্বামী-স্ত্রী হওয়ায় অনুষ্ঠানটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল।

দুজন পালাক্রমে একটানা দুই ঘণ্টা গান করেছেন। সবই রবীন্দ্রসংগীত। তাঁরা জুটি হিসেবে যেমন সুন্দর, তাঁদের পরিবেশনাও ছিল সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। শিল্পী সাজেদ আকবর গেয়েছেন ‘এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে’, ‘চোখ যে ওদের ছুটে চলে গো—’, ‘তিমিরময় নিবিড় নিশা’ ইত্যাদি। অন্যদিকে সালমা আকবর গেয়েছেন ‘ওই মালতীলতা দোলে’, ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’ ইত্যাদি।

শিল্পী সাজেদ আকবর রবীন্দ্রনাথের পরিচিত গানগুলোর পাশাপাশি দু-একটি অপরিচিত গান গেয়ে দর্শকের কৌতূহল নিবারণের চেষ্টা করেছেন। তাঁর কণ্ঠ বেশ সুরেলা এবং রাবীন্দ্রিক ঘরানার। তবে মাঝে মাঝে নিচু পর্দায় তাঁর কণ্ঠ সাবলীল মনে হয়নি। অন্যদিকে সালমা আকবরের ক্ষেত্রে হয়েছে বিপরীত, মাঝে মাঝে উঁচু পর্দায় তার কণ্ঠ স্বচ্ছন্দে ওঠানামা করতে পারেনি। আর উচ্চারণ দুয়েকটি জায়গায় অস্পষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা ছিল, দ্বৈত কণ্ঠে ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’ এটির তাল মিল আরেকটু ভালো হলে শুনতে ভালো লাগত।

 চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার উপস্থাপনায় ‘এবং পূর্ণিমা’ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলো ১২ মে রাত ১০টায় আরটিভিতে। এবারে অতিথি ছিলেন নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা এবং সংগীতশিল্পী শাকিলা জাফর। বলার অপেক্ষা রাখে না তাঁরা দুজনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুপরিচিত। উপস্থাপক পূর্ণিমা শুরুতেই শিল্পী হিসেবে তাঁদের আবির্ভাব ও বেড়ে ওঠা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। তাতে জানা যায় দুজনেরই বেড়ে ওঠা পারিবারিক শৈল্পিক আবহের মাঝে। শাকিলা শৈশবে মামার গান শুনে রবীন্দ্রসংগীতে অনুরক্ত হয়েছিলেন। আর নীপা চেয়েছিলেন চিত্রশিল্পী হতে। অতঃপর দুজনই শিল্পী হয়েছেন, তবে একজন আধুনিক সংগীতে আর একজন নৃত্যে। এরপর দুজন কীভাবে শিল্পের আঙিনায় জড়িয়ে পড়লেন, দেশে-বিদেশে ব্যস্ত হয়ে গেলেন, একে একে তাঁদের মুখ থেকেই সব জানতে পারলেন দর্শক-শ্রোতারা। এ ছাড়া দুজনের মাঝে কীভাবে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল এবং সে বন্ধুত্ব আজও কতটা সক্রিয় ও সচল, এ অনুষ্ঠানে তা-ও তাঁরা বলেছেন অকপটে। আমরা এও জানতে পারলাম যে গ্লামারের কারণে দুজনই বিভিন্ন সময়ে নাটকে এবং চলচ্চিত্রেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন।

শেষে বলব, উপস্থাপক পূর্ণিমার কথা। পূর্ণিমার লাইভ অনুষ্ঠান উপস্থাপনাই মনে হয় অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এ অনুষ্ঠানেও তিনি যখন অতিথিদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত কথা বলেছেন, তখন অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কিন্তু যখন হাতের কার্ড দেখে প্রশ্ন করেছেন, তখন মনে হয়েছে গতানুগতিক। কাজেই আমাদের ধারণা, উপস্থাপক পূর্ণিমা হাতে কার্ড না নিয়ে যদি অতিথিদ্বয়ের সঙ্গে কথা বলতেন, তাহলে অনুষ্ঠানটি হতো আরও উপভোগ্য ও আকর্ষণীয়।

এবারে নাটক। দীর্ঘদিন পর এ সপ্তাহে বিটিভিতে একটি ভালো নাটক দেখলাম। ১২ মে রাত ৯টায় বিটিভিতে প্রচারিত হলো এ সপ্তাহের নাটক ডাউনলোড। রচনা আল মনসুরের। প্রযোজনা করেছেন আফরোজা সুলতানা। অভিনয় করেছেন আল মনসুর, শিল্পী সরকার অপু, কাজী নওশাবা আহমেদ, শাহেদ শরীফ খান প্রমুখ।

সংক্ষেপে নাটকের গল্পটি হলো, ক্যানসার আক্রান্ত মাকে নিয়ে নওশাবার জীবনসংগ্রাম। সংসারে মা আর মেয়ে ছাড়া তাঁদের কেউ নেই। কাজেই নওশাবা ভার্সিটিতে যাওয়া বাদ দিয়ে মায়ের সেবা করে আর টিউশনি করে মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগান। তাঁর বড় একটি অবলম্বন হলো ল্যাপটপ। এতেই তিনি ডাউনলোড করে পড়ালেখা করেন। অসুস্থ মায়ের আবদারে উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা ডাউনলোড করে মাকে দেখান। মেয়ের শখ-আহ্লাদের কথা ভেবে মা নওশাবাকে বার্গার ডাউনলোড করতে অনুরোধ করেন এবং তিনি সত্যি সত্যি বার্গার পেয়েও যান। এভাবে ডাউনলোড খেলায় পেয়ে বসে নওশাবাকে। তাঁর পছন্দের ছেলেদের ডাউনলোড করে তিনি তাঁদের সঙ্গে গল্প করেন, সময় কাটান। শেষে একদিন অসুস্থ মা হারিয়ে যান তাঁর জীবন থেকে। নওশাবা শোকের ধাক্কা সামলে উঠে বারবার মাকে ডাউনলোড করার চেষ্টা করেন, কিন্তু মা আর ডাউনলোড হয় না। এই হলো গল্প।

শুরুতে নাটকের নামকরণ দেখে ভেবেছিলাম বাংলা নাটকের ইংরেজি নাম, কী আর হবে, হয়তো গতানুগতিক কিছুই হবে। কিন্তু অল্পক্ষণেই বুঝলাম, নাটকের গল্পটি অভিনব। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাউনলোড বিষয়টিকে নিয়ে নাট্যকার ব্যতিক্রম একটি গল্প উপহার দিয়েছেন এ নাটকটিতে। কাজেই বলা যায়, আধুনিক ও মৌলিক চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে এ নাটকের গল্পে। অতীতে নাটক-সিনেমায় চরিত্রের মনোজগৎকে যেমন দেখানো হতো কল্পনা বা স্বপ্নের মাধ্যমে, এখানে নাট্যকার তা দেখিয়েছেন ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডের মাধ্যমে। নাটকের সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং অভিনয়—সবই ছিল উপভোগ্য ও বাস্তবানুগ। গতানুগতিক বিটিভি সেটের বাইরে লোকেশন নির্বাচন ও চিত্রায়ণে নাটকটি হয়েছে আকর্ষণীয়। আর নওশাবার অনবদ্য অভিনয় দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তবে দুটি বিষয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। এক. সংসারে শুধুই মা ও মেয়ে, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কি কোনো সংগ্রাম নেই? সামান্য টিউশনির টাকাতেই সংসার এবং ক্যানসার চিকিৎসা কি সম্ভব? এবং দুই. ডাউনলোড নামের পরিবর্তে বিষয়বস্তু-সংলগ্ন কোনো বাংলা কাব্যিক নাম হলেই বোধ হয় বেশি ভালো লাগত। শেষে বলব, চেষ্টা করলে বিটিভিতে যে এখনো ভালো নাটক সম্ভব, এই নাটকটি তার দৃষ্টান্ত।