গির্জার পাথরের দেয়ালে বিবি রাসেলের ছবি

ভোজসভায় উপস্থিত হলেন প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকেরা—রবের গেদিগিও, কাজা নিন, চ্যাং চেন, লিয়া সেদু, কেট ব্ল্যানচেট, আন্দ্রেই জ্ভুয়াগিনৎসেভ, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, ডেনি ভিলনভ, অ্যাভা দুভার্নে। সঙ্গে কানের মেয়র দেভিদ লিসনার (বাঁ থেকে পঞ্চম)। গত     বুধবার, কানে।  ছবি: সংগৃহীত
ভোজসভায় উপস্থিত হলেন প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকেরা—রবের গেদিগিও, কাজা নিন, চ্যাং চেন, লিয়া সেদু, কেট ব্ল্যানচেট, আন্দ্রেই জ্ভুয়াগিনৎসেভ, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, ডেনি ভিলনভ, অ্যাভা দুভার্নে। সঙ্গে কানের মেয়র দেভিদ লিসনার (বাঁ থেকে পঞ্চম)। গত বুধবার, কানে। ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ের গা কেটে বানানো পাথরের সিঁড়ি মাড়িয়ে উঠলে কান শহরের সবচেয়ে বড় গির্জায় পৌঁছানো যায়। তার পাশেই মুজে এ পালে দো লা কাস্ত্রেতে কানের মেয়র দেভিদ লিসনার গত বুধবার ৭১তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যাহ্নভোজে নেমন্তন্ন করেছিলেন।

গির্জার খোলা আঙিনায় দাঁড়াতেই চোখ আটকে যায় একটি চেনা মুখে। গির্জার পাথরের দেয়ালে সাঁটা বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের ছবি। তাঁর পাশেই হলিউড অভিনেতা ফরেস্ট হুইটেকার ও অভিনেত্রী শ্যারন স্টোনের মুখ।

জানা গেল, এখানে চলছে ইন্টারন্যাশনাল ডে অব লিভিংয়ের বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘হ্যান্ডস অব পিস’। ১৬ মে প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ডে অব লিভিং। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ ১৬ মেতে দিবসটি উদ্যাপনের অনুমোদন দেয়। এ উপলক্ষে কান শহরকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আন্তর্জাতিক শহর হিসেবে তুলে ধরতে প্রদর্শনীটির আয়োজন।

প্রদর্শনীর সব ছবিরই আলোকচিত্রী সেভেরিন দেসমারেস। ২০১৩ সালে তিনি তুলেছিলেন বিবি রাসেলের ছবিটি। দুই হাত জোড় করে চোখ বুজে থাকা বিবি রাসেলের সাদাকালো ছবির নিচে লেখা, দেশীয় ঐতিহ্যের নিপুণ নকশা দিয়ে তিনি লড়ে যাচ্ছেন দারিদ্র্য বিমোচনে। তাঁর কাজের এ ধরনকে অনুসরণ করছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা।

প্রদর্শনী ঘুরতে ঘুরতেই বেজে যায় দেড়টা। শুরু হয়ে যায় কানের মেয়রের বিশেষ ভোজসভা। তাতে যোগ দেন উৎসবে কর্মরত বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসবের প্রতিযোগী বিভাগের জুরিরা।

নিরাপত্তা তল্লাশির পর অতিথিদের বরণ করে নিচ্ছিলেন শহরের বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দারা। পরনে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক। ‘বঁজু’ বলে হাসিমুখে বরণ করে নিচ্ছেন অতিথিদের। পাইপার, ট্রাম্পেট ও ড্রাম বাজিয়ে অর্কেস্ট্রাদল অতিথিদের স্বাগত জানায়।

খোলা আকাশের নিচে চেয়ার-টেবিল সাজানো। প্রথমেই বিলানো হলো স্থানীয় উপকরণ দিয়ে বানানো জলপাই তেল। কানের মেয়রের বিশেষ উপহার। পুরো কাস্ত্রে স্কয়ার অতিথিরা ভরিয়ে তুললে হাজির হলেন উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরি সদস্যরা। জুরিপ্রধান অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেটের নেতৃত্বে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, লিয়া সেদু, অভিনেতা চ্যাং চেন, পরিচালক ডেনি ভিলনভ, অ্যাভা দুভার্নে, আন্দ্রেই জ্ভুয়াগিনৎসেভ, রবের গেদিগিও আর সংগীতশিল্পী কাজা নিন। শুরু হলো ভোজপর্ব।

প্রতিটি কান উৎসবেই গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এর আয়োজন করেন কানের মেয়র। প্রতিটি খাবারে কানের স্বাদ। সাগরপারের এ শহরে সামুদ্রিক মাছে তৈরি খাবার। খাদ্যতালিকায় ছিল ৪৮ ঘণ্টা মজিয়ে তারপরে ভাপানো কড মাছ। তার সঙ্গে জলপাই তেল মাখানো সেদ্ধ সবজি, আর সেদ্ধ ডিম।

মূল খাবারের আগে বিচিত্র ধরনের পিৎজা। একেক পিৎজায় একেক ধরনের পনির। সঙ্গে নানা ধরনের পানীয়। সবশেষে পেস্ট্রি দিয়ে মিষ্টিমুখ। সেসব পেস্ট্রির নানা রকমের পুর-অ্যাপ্রিকট, পিচ, বাদাম, মিষ্টিকুমড়া, স্ট্রবেরি, ব্লু বেরি।

ভোজ শেষ হলো বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। কাজে ফিরে গেলেন সবাই। তবে জিব পেরিয়ে মনে লেগে রইল কানের স্বাদ, গন্ধ আর সৌন্দর্য।