কলকাতায় আশা ভোঁসলে গাইলেন 'যেতে দাও আমায় ডেকো না'

আশা ভোঁসলের হাতে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাননা তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
আশা ভোঁসলের হাতে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাননা তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি


কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে গতকাল সোমবার কলকাতায় এসেছিলেন। বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। সেখানে প্রখ্যাত এই শিল্পীর হাতে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ তুলে দেওয়া হয়। এই সম্মাননা প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের দেশের গর্ব আশা ভোঁসলের মতো এক প্রথিতযশা শিল্পীর হাতে এই সম্মাননা তুলে দিতে পেরে আমরা গর্বিত। বাংলার সঙ্গে রয়েছে আশা ভোঁসলের আত্মার সম্পর্ক। কত অসাধারণ বাংলা গান গেয়েছেন তিনি! আমরা আশা করব, আশাজি এই অনুষ্ঠানে একটি গান গেয়ে শোনাবেন।’

মমতার আবদার ফেরাতে পারেননি আশা ভোঁসলে। পুরস্কার গ্রহণ করে যখন ‘যেতে দাও আমায় ডেকো না’ গানটি ধরেন, তখন মিলনায়তনের হাজারো দর্শক করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। দাঁড়িয়ে সবাই আশা ভোঁসলের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান।

আশা ভোঁসলে বলেন, ‘কলকাতা আমার খুব প্রিয় শহর। কত সুন্দর এই শহর। সেই ১৯৫২ সালে প্রথম কলকাতায় আসি। সেদিন আমি যে কলকাতাকে দেখেছিলাম, ৬৬ বছর পর সেই একইভাবে দেখছি। কলকাতাকে দেখার স্মৃতি, কলকাতাকে ভালোবাসার স্মৃতি এতটুকু মলিন হয়নি। কলকাতা অনেক বদলে গেছে। সুন্দর হয়েছে। কিন্তু কলকাতার প্রতি আমার ভালোবাসার টানে এতটুকু ঘাটতি হয়নি। আজ কলকাতা কত সুন্দরভাবে সেজেছে! পুরোনো দিনের সেই রাস্তা আর খানাখন্দ নেই। ঝকঝকে। ছবির মতো সাজানো। এসবই জাদু! তাই তো মমতার ডাক আর ফেরাতে পারিনি। চলে এসেছি।’

এই অনুষ্ঠানে আরও সাতজনকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চিত্রতারকা প্রসেনজিৎ, সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, রাজবংশী ভাষার গবেষক গিরিজা শংকর রায়, অলচিকি ভাষার গবেষক সুহৃৎকুমার ভৌমিক, হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শ্যামল কুমার সেন, সাবেক ফুটবলার মহম্মদ হাবিব ও সুব্রত ভট্টাচার্য। ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মাননা দেওয়া হয় তিনজনকে—শিল্পী অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাচিক শিল্পী পার্থ ঘোষকে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘আমরা এই সম্মাননা দিতে চাই প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকে। তিনি অসুস্থ, তাই আমরা তাঁকে আনতে পারিনি। তিনি যখন রাজি হবেন, তখনই আমরা তাঁর হাতে তুলে দেব বঙ্গবিভূষণ সম্মাননা।’

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সম্মাননা দেওয়া শুরু করে ২০১১ সাল থেকে। ইতিমধ্যে এই ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে সুচিত্রা সেন, মান্না দে, মহাশ্বেতা দেবী, সুপ্রিয়া দেবী প্রমুখকে। গত ২৯ এপ্রিল কলকাতার প্রখ্যাত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান পিসি চন্দ্র গ্রুপ ‘পিসি চন্দ্র স্মারক সম্মান’ দেয় আশা ভোঁসলেকে। আর সেই স্মারক আশা ভোঁসলের হাতে তুলে দেন আরেক বলিউড তারকা শর্মিলা ঠাকুর।

আশা ভোঁসলের বয়স এখন ৮৪। ১৯৮০ সালে তিনি বিয়ে করেন প্রখ্যাত বাঙালি সুরকার, সংগীত পরিচালক ও শিল্পী আর ডি বর্মনকে।