আমি কখনোই চাপে বিপথগামী হইনি: বাঁধন

বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
যে ছবিতে অভিনয়ের জন্য ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, ১৮ কেজি ওজন কমিয়েছেন, বাইক চালানো শিখেছেন; সেই ‘দহন’ ছবিতে বাঁধনের আর অভিনয় করা হচ্ছে না। এই ছবিতে অভিনয়ের কথা শোনা যাচ্ছে পূর্ণিমার। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ছবিটি ছেড়ে দেওয়ায় শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত আলোচনা, সেই বাঁধন বলছেন, ব্যক্তিগত কারণে ছবিটি ছেড়েছেন। কী সেই ব্যক্তিগত কারণ?—আজ শনিবার দুপুরে এসব জানার চেষ্টা করা হয় তাঁর কাছ থেকে।


আপনি নাকি বিয়ে করছেন, তাই ছবিটি ছেড়ে দিয়েছেন?

কিছুদিন আগে আমি আর আমার মেয়ে একটা ভয়াবহ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছি। আমার সাবেক স্বামী এরই মধ্যে আবার বিয়ে করেছেন। এটা শোনার পর আমার মেয়ে কষ্ট পেয়েছে। প্রতিটি বাচ্চা চায় তার বাবা-মা আর সে একসঙ্গে থাকবে। আমার যদিও ডিভোর্স হয়ে গেছে, তারপরও আমরা স্বাভাবিক ছিলাম। মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাসায় যেতাম। হঠাৎ কী হয়ে গেল! আমি বাচ্চাকে কখনোই এই ভয়াবহতা বুঝতে দিতে চাইনি। আমি আর আমার মেয়ে দুর্ভাগা। তা না হলে আমাদের দুজনকে কেন এই ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার বাচ্চাকে হয়তো শারীরিকভাবে কোনো সংগ্রাম করতে হয়নি, কিন্তু মানসিক সংগ্রাম সে ঠিকই করেছে। আমি আপাতত বিয়ের কোনো সিদ্ধান্তে যাব না। সেই পরিস্থিতিও নেই। আমি আর আমার মেয়ের মানসিক প্রস্তুতির দরকার আছে, আমাদের জীবনে আরেকজনকে চাই। এটাও সত্যি, আমার মেয়ে এখনো অত কিছু বোঝে না, তবে সেও একটা পরিবার চায়। নিজেকে আরও গুছিয়ে সিদ্ধান্তটা নিতে চাই।

বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত



ছবির কাজ ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই?
একদমই নেই। আমি ব্যক্তিগত কারণে ছবিটি ছেড়েছি। আপনারা দেখবেন, আমি কিন্তু ওই সময় কোনো শুটিং করব না। যদি কোনো শুটিং করি, তখন অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন।

ব্যক্তিগত কারণটা কী?
ব্যক্তিগত বিষয়টা ব্যক্তিগতই থাক। ওটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।

যাঁরা আপনার বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
কয়ে কমাস আগে আমি যখন ফটোশুট করা ছবি ফেসবুকে দিই, আমার বদল দেখে অনেকে চমকে যান। তখন অনেকে বলেছেন, আমি ছবিতে অভিনয় করব, নাকি বিয়ে করব?

ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারটি তো মিলে গেছে।
তা অবশ্য ঠিক।

বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত



ছবির মতো করে বিয়ের ব্যাপারটিও তাহলে মিথ্যা হবে না।

সবার মধ্যে এমন চিন্তা আসা কিন্তু খুব স্বাভাবিক। আমি চার বছর ধরে সিঙ্গেল। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটা মেয়ে ডিভোর্সের পর চার বছর একা থাকা অসম্ভব মনে করা হয়। আর সে যদি নায়িকা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। আমি একাই সংগ্রাম করছি, একাই সবকিছু করছি। আমাকে অনেকে বলেন, বিয়ে করার চিন্তা করছি না কেন? আমি আসলে চিন্তা করার সময় পাইনি। তবে বিয়ে হতেও পারে, নাও পারে। বিয়ের জন্য মনের মতো মানুষও তো পেতে হবে। এটা ঠিক, বিয়ের জন্য অনেকে প্রস্তাব দিয়েছেন।

আপনার কথা থেকে কিন্তু বিয়ের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বিয়ে হতেই পারে। ছেলেরা ১০টা বিয়ে করলেও কিছু হয় না, আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যত সমস্যা। দেখুন, আমার জীবনটা এত সহজ না। আমার সন্তান আছে। কেউ বিয়ে করতে চাইলে হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। যে আমার জীবনসঙ্গী হবে, তাঁকে অনেক কঠিন হতে হবে। ওই মানসিকতার মানুষ খুঁজে পেতে হবে। আমার এটা তো সাধারণ বিয়ের মতো না। তবে আমাদের মানসিক বিপর্যয় সামলাতে আরও সময় লাগবে।

ঈদে ছোটপর্দার কোনো অনুষ্ঠানে থাকবেন?

কোনো নাটকে আপাতত অভিনয় করতে চাইছি না। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও দেখা যাবে না। আমি সর্বশেষ নাটকে কাজ করেছিলাম মাসুদ সেজানের। ধারাবাহিকটির নাম ‘খেলোয়াড়’। তা ছাড়া আমার ইদানীং যে উপলব্ধি হয়েছে, তা হলো বেশি কাজ করে কী হবে?

তাহলে কী করবেন?

কাজ তো করব, তবে আমি মনে করি, একজন মানুষের জন্য একটা সুশৃঙ্খল জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন যদি সুশৃঙ্খল না হয়, তাহলে কোনো কিছু অর্জন করে ধরে রাখা সম্ভব না। আমি কাজ করি রুটি-রুজির জন্য ঠিক আছে, কারণ এটা আমার ভালো লাগার জায়গা। আমাদের কিন্তু বোঝারও ভুল আছে, সবকিছুর আগে সবাইকে পেশাকে বেছে নিতে হয়। তাই বলে এটা ঠিক নয়, জীবনকে বিশৃঙ্খল করে ফেলব। প্রত্যেক সফল মানুষ কিন্তু তাঁর জীবনে অনেক সুশৃঙ্খল, আর এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে দেখবেন, অনেক নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা আর অভিনেতা-অভিনেত্রী উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করেন, আর সাধারণ মানুষ মনে করেন, এটাই বুঝি আদর্শ, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। মানুষকে বোঝাতে হবে, জীবনে সুশৃঙ্খলতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমার উপলব্ধি। আমি সব সময় একটা সুশৃঙ্খল জীবন মেনে চলার চেষ্টা করেছি, অনেক বিপদেও পড়েছি।

বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত
বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত



সেটা কেমন?

‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর আগে থেকে আমার জীবনের সংগ্রাম শুরু, যখন আমার প্রথম বিয়ে হয়। আমার জীবনের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য সবকিছু উতরে গেছি। চারপাশে অনেককে দেখেছি, চাপের মধ্যে পড়ে বিপথগামী হয়ে যায়। আমি কখনোই চাপে বিপথগামী হইনি। অসৎ পথে যাইনি। আমাকে পরিবারের কাছ থেকেও শুনতে হয়েছে, বাঁধন, জীবনে চলার পথে তুমি এত নীতি মানতে পারবা না। আমি কিন্তু নীতিতে থাকার ফল পেয়েছি। চাপে থাকলে বিপথে যাওয়া সমাধান না। আমার ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তাতে অনেকে চেয়েছিল বিপথগামী করতে। কিন্তু পারেনি। আমার যে অনেক ক্ষমতা ছিল, তা কিন্তু না। তবে আমার সততার শক্তি ছিল। মনের একটাই জোর ছিল, আমি সৎ।

এবার ‘দহন’ প্রসঙ্গ। আপনার ছেড়ে দেওয়া ছবিতে এখন পূর্ণিমার কাজ করার কথা শোনা যাচ্ছে।
‘দহন’ ছবিতে যে-ই কাজ করুন, তাঁর জন্য আমার শুভকামনা। কারণ ছবিটি আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমাকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার আজিজ ভাই এবং ‘দহন’ টিম অনেক সাপোর্ট করেছে। আমি চাই, ছবিটি ভালো হোক। ছবিটি সবার পছন্দের হোক।