তানিয়ার দিকে বন্দুক তাক করার কিছু নেই: বাপ্পা

বাপ্পা মজুমদার
বাপ্পা মজুমদার
>বাপ্পা মজুমদার বলছেন চাঁদনীর সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। চাঁদনীর দাবি, তিনি এখনো বাপ্পার স্ত্রী। তালাকের কাগজপত্র নাকি তিনি হাতে পাননি। তিনি আরও দাবি করেছেন, বাপ্পা তাঁকে ভরণপোষণ দিয়ে যাচ্ছেন। চাঁদনীর যত অভিযোগ বাপ্পার হবু স্ত্রী অভিনয়শিল্পী ও উপস্থাপিকা তানিয়া হোসাইনের দিকে। আসলে কী? সব বিষয়ে জানার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাপ্পা মজুমদারের মগবাজারের স্টুডিওতে হাজির হন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। অনেক অনুরোধের পর বাপ্পা মজুমদার এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন।

চাঁদনী দাবি করছেন, আপনি এখনো তাঁর স্বামী।
চাঁদনীকে তালাকের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি গত বছর ৯ অক্টোবর। এটা কার্যকর হয়েছে এ বছর ৯ জানুয়ারি। আমি তালাকের নোটিশ ইস্যু করেছি, সেটা সে জানে। না জানলে চিঠি রিসিভ করল কীভাবে! তিন মাসের মধ্যে তালাকের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়। ৯ জানুয়ারি থেকে অফিশিয়ালি তালাক কার্যকর হয়েছে।

কিন্তু তাঁর কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, আপনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তিনি তা জানেন না।
এটা পুরোপুরি ভুল তথ্য। অবশ্যই সে অবহিত। আমি যে কাগজগুলো ইস্যু করেছি, সে কাগজগুলো যেহেতু তাঁরা গ্রহণ করেছেন, এই বিষয় নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নাই।

আপনারা কত দিন আলাদা ছিলেন?
এক বছরের বেশি সময়। সংসারজীবন চলার একপর্যায়ে আমাদের মধ্যে ছন্দপতন হয়। একটা সংসার চালিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব উপাদান থাকা দরকার, তা আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। সম্পর্কে অনেক ঘাটতি ছিল।

এই ঘাটতি কবে থেকে তৈরি হয়?
আমাদের কিন্তু ২০১৩ সালে একবার ডিভোর্স হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে আমি সিদ্ধান্ত পাল্টাই। তারপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত সংসার চলছিল জোড়াতালি দিয়ে।

জোড়াতালি দিয়ে কেন চালিয়ে নিতে চেয়েছিলেন?
যেকোনো সম্পর্ক মানুষ টিকিয়ে রাখতে চায়। সেই ইচ্ছাটা আমাদের ছিল, তা না হলে ২০১৩ সালের পর এতটা সময় তো আমরা চালিয়ে নিতে পারতাম না। কিন্তু ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছি, আমাদের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। সম্পর্কটা ঠিক জায়গায় নাই। এটা কিন্তু চাঁদনীও বুঝত। ওর তরফ থেকে অনেকবার বলেছে, সে ডিভোর্স চায়। তবে এটা বলে রাখা ভালো, আমাদের এবারের আনুষ্ঠানিক তালাকের যে বিষয়টা, তা আমার তরফ থেকে গেছে।

কিন্তু তালাকের বিষয়টা তিনি স্বীকার করছেন না।
আমিও বিভিন্ন মাধ্যমে তেমনটাই শুনছি। এ নিয়ে ২১ মে রাতে চাঁদনী আমাকে ফোন করেছিল।

কী বলেছিলেন?
ফোন করে তালাকের খবর প্রকাশিত হওয়াতে আমাকে দোষারোপ করে। চাঁদনী বারবার বলছিল, আমাকে লোকজন ফোন করছে, আমি কী বলব? আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করছে, আমাদের (বাপ্পা মজুমদার ও চাঁদনী) ডিভোর্স হয়েছে কি না? তালাকের এত দিন পর চাঁদনীর কাছ থেকে এই প্রশ্ন খুব অবান্তর লেগেছে। ডিভোর্স হয়েছে কি না, এই প্রশ্ন সবাই তাঁকে করছে, কিন্তু সে নাকি উত্তর দিতে পারছে না! আমি বলেছি, উত্তর দিতে না পারার তো কিছু নাই। তুমি জানো, আমাদের তালাক হয়ে গেছে। তখন চাঁদনী পাল্টা বলেছে, আমি এ সবকিছুর মুখোমুখি হতে পারব না। এরপর বললাম, ঠিক আছে, যাঁরা তোমাকে প্রশ্ন করছে, তাঁদের বলো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে, আমি তাঁদের জানাচ্ছি। সেখানে এখন যদি বলে কিছু জানে না, তাহলে আমার কিছু বলার নাই।

বাপ্পা মজুমদার ও চাঁদনীর বিয়ের ছবি
বাপ্পা মজুমদার ও চাঁদনীর বিয়ের ছবি


তালাকের বিষয়ে আপনাদের দুই পরিবারের লোকজন সবকিছু জানে?
চাঁদনী আর আমার পরিবার তো অবশ্যই জানেন। চাঁদনী ভুল তথ্য দেওয়াতে আমি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। আমাকে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো ভিত্তি নাই। আমি আমার ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছি, সেখানে তালাকের পুরো বিষয় জানিয়েছি। এরপর আমাদের তালাক নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার কথা না। আমি এখন শুনছি, আমি নাকি কিছু বিষয় লুকাচ্ছি, ভুল তথ্য দিচ্ছি। আমার যদি লুকানোর কিছু থাকত, ফেসবুকে নিশ্চয় কোনো পোস্ট দিতাম না। আমি আমার অবস্থান থেকে একদম পরিষ্কার, তাই সবাইকে একসঙ্গে জানিয়েছি।

তার মানে আপনার আর চাঁদনীর তালাক নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার অবকাশ নেই?
তালাকের বিষয়ে কিছু মন্তব্য দেখছি, যা আমাকে বিব্রত করছে। চাঁদনী কিছু ভুল বার্তা দিচ্ছে, যার কারণে। এসবের সঠিক উপস্থাপনে গণমাধ্যমকেও সাবধান হওয়া উচিত। সরাসরি বলতে চাই, চাঁদনীর সঙ্গে তালাকের বিষয়ে আর কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই।

আপনাদের তালাক অনেক আগেই হয়েছে। কিন্তু আপনার সঙ্গে তানিয়ার আংটিবদলের পর চাঁদনীকে কথা বলতে শোনা গেছে।
আমি সবাইকে বলতে চাই, ক্রমাগতভাবে তানিয়াকে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, এটা মোটেও ঠিক না। আমাকে সম্মান দেখিয়ে তানিয়াকে অসম্মান করা কিন্তু আমাকেই অসম্মান করা। কারণ, তাঁর সঙ্গে আমার বাগদান হয়েছে। সে আমার হবু স্ত্রী। আমার কাছে কেউ ভালো সাজতে গিয়ে তানিয়াকে অসম্মান করা মোটেও ভালো না। আমি সরাসরি বলতে চাই, সমস্ত তির যে তানিয়ার দিকে তাক করানো হচ্ছে, এই বিষয়ে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। কারণ, চাঁদনীর সঙ্গে তালাকের বিষয়ে তানিয়ার দিকে বন্দুক তাক করার কিছু নেই। তানিয়া একেবারে আলাদা একটা সত্তা। চাঁদনীর ও আমার মাঝখানে কিন্তু তানিয়া ইনসার্ট হয়নি। তানিয়া আমার বন্ধু ছিল। সেই বন্ধুত্বের সূত্র ধরে চাঁদনীর সঙ্গে তালাকের পর আমি তানিয়াকে সম্প্রতি আমার ইচ্ছে আর ভালো লাগার কথা জানিয়েছি।

অনেকে বলছে, বাপ্পাকে চাঁদনীর কাছ থেকে আলাদা করেছে তানিয়া।
এটা পুরোপুরি ভুল তথ্য। এখানে তাঁকে দোষারোপ করার কোনো পথ নেই। তানিয়াকে কোনোভাবে যদি ছোট করা বা দোষারোপ করা হয়, পক্ষান্তরে সেটা আমাকেই করা হয়।

আপনি চাঁদনীকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন?
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের তালাকের পর আমি কিন্তু চাঁদনীকে তাঁর সব পাওনা পরিশোধ করে দিয়েছি। এরপর কয়েক মাস একেবারেই আমার মানবিক জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি ওকে সাহায্য করতে। আপনারা হয়তো আরও জানবেন, আমার তিনটা পোষা প্রাণী আছে, এগুলো চাঁদনীর কাছেই থাকে। এদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক একটা খরচ আছে। এই খরচ আমি পাঠাই।

বাপ্পা মজুমদার ও তানিয়া হোসাইন
বাপ্পা মজুমদার ও তানিয়া হোসাইন


আপনি আর তানিয়া সংসার শুরু করছেন কবে?
আমরা দুজন যখন মনে করব, সংসার শুরু করা উচিত, তখনই করব। এটা একান্তই আমাদের দুজনের সিদ্ধান্ত।

চাঁদনীর সঙ্গে তালাকের ব্যাপারে আপনার বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ নেই। সব অভিযোগ দেখছি তানিয়ার দিকে। কেন?
তানিয়ার সঙ্গে আমার চমৎকার বন্ধুত্ব। ওকে তো বহু আগে থেকেই চিনি, ব্যক্তিগতভাবে। সেটা নিখাদ বন্ধুত্বের জায়গা। সম্প্রতি আমরা একসঙ্গে সংসার শুরুর সিদ্ধান্ত নিই। এই প্রস্তাব আমি আগে দিয়েছি। তানিয়াকে দোষারোপ করার কোনো জায়গা নেই। তানিয়াকে দোষারোপ করার বিষয়টি আমাকে অনেক বেশি আহত করছে।

ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
গানের জগতের অনেক বন্ধু, সহকর্মী নানা আমাকে উপদেশমূলক কথা বলছেন—আমি এবং তানিয়া অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তা গ্রহণ করছি। আমাদের ভালোর জন্য যেসব কথা তাঁরা বলছেন, আমি অবশ্যই সেটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করছি। ভক্তদের উদ্দেশে এতটুকুই আমার বলা, আমার মূল কাজ হচ্ছে গান, সেখানে সবার সহযোগিতা এত দিন পেয়েছি, সামনেও আপনারা পাশে থাকবেন। আমি আপনাদের সব সময় পাশে চাই। আর প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবন আছে, সেখানে টানাপোড়েন আছে। আমিও সাধারণ একজন মানুষ, আমার জীবনেও নিশ্চয় টানাপোড়েন আছে। হয়তো থাকবে। সেগুলো যেন সামলে উঠতে পারি।