চুল পাকার আগে বিয়ে করবেন স্বরা ভাস্কর!

স্বরা ভাস্কর
স্বরা ভাস্কর

নিজের ভাই আর সোনম কাপুরের বিয়ের ধকল সামলে এখন স্বরা ভাস্কর নেমে পড়েছেন তাঁর পর্দার বিয়ের প্রচারে। আগামী ১ জুন মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ছবি ‘ভিরে দি ওয়েডিং’। এই ছবিতে এক নতুন স্বরাকে দেখা যাবে। সাহসী, আধুনিক, আত্মবিশ্বাসে ভরা এক মেয়ের চরিত্রে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে মেলে ধরেছেন। বলিউডের দাপুটে অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। এ আড্ডায় উঠে আসে তাঁর পর্দার বিয়ে থেকে বাস্তবের বিয়ের কথা।

বান্ধবী সোনমের বিয়ে নিয়ে তো খুব ব্যস্ত ছিলেন।
ওর বিয়েতে ভীষণ মজা করেছি। আনন্দ আহুজা দুর্দান্ত একটি ছেলে। সোনমের জন্য একদম উপযুক্ত। আমি তো পর পর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সোনমের বিয়ের আগে লক্ষ্ণৌতে আমার ভাইয়ের বিয়ে ছিল। ভাইয়ের বিয়ের পুরো দায়িত্ব ছিল আমার কাঁধে।

স্বরা ভাস্কর
স্বরা ভাস্কর

বান্ধবীর বিয়ে তো হয়ে গেল। আপনি কবে বিয়ে করছেন?
চুল পাকার আগে নিশ্চয়ই করব! আসলে আমি এবং আমার বয়ফ্রেন্ড হিমাংশুর সময়ের খুব অভাব। বিয়ে করার জন্য আমাদের হাতে এই মুহূর্তে কোনো সময় নেই। আমি এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকব। হিমাংশু এখন ‘জিরো’ ছবির শুটিংয়ের জন্য আমেরিকাতে আছে। জানেন, আমরা একই বিল্ডিংয়ে ওপর-নিচে থাকি। তা-ও আমাদের দেখা করার সময় হয় না।

‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবিতে আপনার যে চরিত্র, তাতে অভিনয় করতে ভয় হয়নি?
ছবির প্রযোজক রিয়া কাপুর বললেন, ছবিতে আমাকে নাকি বিকিনি পরতে হবে। শুনে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর আমাকে আরও কত কী করতে হয়েছে! এই যেমন শুরুতেই বাড়তি ওজন ঝরানোর চেষ্টা করি। তার জন্য মুম্বাইয়ের প্রায় সব বড় জিমেই নিজের নাম লিখিয়েছি। কার্ডিও, ইয়োগা, জগিং—কত কিছুই না করেছি। তিন রকমের ডায়েট মেনে চলেছি। চর্বি ঝরানোর জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ খেয়েছি। এ ছবিতে অভিনয়ের থেকে পোশাকের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবিতে আমাকে যাতে সুন্দর লাগে, মনের মধ্যে এই চাপ বেশি কাজ করেছে। আমার অন্য ছবিগুলোতে এই চাপ ছিল না।

স্বরা ভাস্কর
স্বরা ভাস্কর

সোনম তো বলিউডের ‘ফ্যাশন কুইন’। তাঁর থেকে ফ্যাশন-সংক্রান্ত কোনো টিপস নিয়েছেন?
সোনম কিন্তু আমাকে সব ছবির জন্যই সহযোগিতা করেছে। ওর মনটা বড়। বলিউডে চলার আদবকায়দা ওর কাছ থেকেই শিখেছি। আর এই ছবির জন্য সোনম আমার পোশাক থেকে মেকআপ—সব নিজে দেখাশোনা করেছে। বলা যায়, ও আমার পুরো দায়িত্ব নিয়েছিল।

সোনমের আর কোন গুণ আপনাকে আকৃষ্ট করে?
সোনম শুরুতেই আমার হৃদয় জয় করে। এত সুন্দর করে ‘হাই’ বলে। সোনম কত বড় মনের মানুষ, একটি ঘটনার কথা বললে তা বুঝবেন। সোনমের সঙ্গে তখনো আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। ‘রানঝানা’ ছবির শুটিংয়ের সময় একদিন আমার ভ্যানিটি ভ্যানে বিদ্যুৎ ছিল না। সোনম জানতে পেরে দুবার লোক পাঠিয়েছে আমাকে ডাকতে। ও বলেছে, আমি যেন ওর ভ্যানিটি ভ্যানে গিয়ে মেকআপ করি এবং পোশাক বদল করি। কিন্তু আমার অস্বস্তি হয়। আমি যাইনি। এরপর ও নিজেই আমাকে ডাকতে চলে আসে। তখন আর না করতে পারি না। ‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবিতে ও চেয়েছে যাতে আমাকে সুন্দর লাগে। তার জন্য সোনম কত কিছুই না করেছে। আমাদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, তার পুরো কৃতিত্ব ওর। সোনম সব সময় আমার সঙ্গে দেখা করার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘রানঝানা’ ছবিতে আমার অভিনয়ের প্রশংসা ও সবার কাছে করেছে। যেকোনো অনুষ্ঠানে সোনম অন্য অভিনেত্রীদের ব্যাপারে খোলা মনে প্রশংসা করে।

স্বরা ভাস্কর
স্বরা ভাস্কর

বলিউডে দুই নায়িকার মধ্যে বন্ধুত্ব তেমন দেখা যায় না।
এই ইন্ডাস্ট্রির দুই নায়িকার মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব দেখেছি। তবে আগের প্রজন্মে এটা বেশি দেখা যেত। এখন কম। দেখুন বন্ধুত্ব মানেই একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা থাকবে না, তা নয়। আর এটাই তো স্বাভাবিক। শুধু নায়িকা কেন, নায়কদের মধ্যেও এই প্রতিযোগিতা চলে। আর সিনেমার জন্য তা খুব ভালো ফল দেয়।

কারিনা কাপুরের সঙ্গেও আপনার বন্ধুত্ব হয়েছে?
কারিনা দারুণ মেয়ে। কারিনা আমাদের সঙ্গে এত সহজে মিশেছে যে কখনো মনে হয়নি এত বড় একজন তারকা। সবাইকে নিয়ে চলার ক্ষমতা ওর আছে। যাকে বলে ভালো টিম প্লেয়ার। কারিনার সঙ্গে সময় কাটানো আমার এক পরম প্রাপ্তি। কাজের প্রতি ওর ভীষণ নিষ্ঠা। আর কারিনা নিয়মের মধ্যে চলে। এই সবকিছু ওর কাছ থেকে শেখার মতো। আর কারিনার একটা বিশেষ গুণ, ও খুব সুন্দর করে গল্প বলে। ওর গল্প শুনলে মনে হবে হিন্দি ছবি দেখছি। কারিনা সেটে সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকত। কারিনা আমাকে ‘থিঙ্কিং অ্যাক্টর’ বলত। কারিনা সেটে ঠিক সময় পৌঁছে যেত। আমি ওকে অপেক্ষা করিয়ে রাখতাম।

স্বরা ভাস্কর ও সোনম কাপুর
স্বরা ভাস্কর ও সোনম কাপুর

কারিনার ছেলে তৈমুরের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন?
সেভাবে হয়নি। কারণ কারিনা সেটে তৈমুরকে নিয়ে আসেনি। তবে ওই ছোট্ট শিশুর জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। তৈমুরকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের যে উন্মাদনা, তা আমার একদম অপছন্দ। ওকে ওর মতো করে থাকতে দেওয়া হয় না।

‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবিতে প্রথম বিকিনি পরলেন। অস্বস্তি হয়েছে?
আমি যখন প্রথম অভিনয় জগতে আসি, আমাকে এক নাট্যকার বলেছিলেন, অভিনয় করতে এলে সব লজ্জা, কুণ্ঠা সব বিসর্জন দিয়ে আসতে হবে। কিন্তু প্রথমে একটু অস্বস্তি হয়েছিল। আমি তো সে ধরনের অভিনেত্রী নই যে প্রথমে সব হ্যাঁ বলব, আবার সেটে গিয়ে নানা ঝামেলা পাকাব। বিকিনি পরার জন্য নিজের ফিগার ঠিক করি। আমি চরিত্রের খুব কাছাকাছি যেতে পছন্দ করি। এই ছবির ক্ষেত্রে তা-ই করেছি। সত্যি বলতে, ‘নীল বাত্তি সান্নাটা’, ‘আনারকলি’ ছবি দুটি করার পর আমার নজরটা অনেক উঁচু হয়ে গেছে।

‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবির পোস্টার
‘ভিরে দি ওয়েডিং’ ছবির পোস্টার

আপনার একটা ঘরানা আছে। এই ঘরানার বাইরে বের হওয়ার কারণ কী?
একজন অভিনেতাকে কখনো একই ঘরানায় বেঁধে রাখতে নেই। আর আমাদের কমফোর্ট জোন বলে কিছু হয় না। আমি আমার কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পেরেছি। ভবিষ্যতে ছেলের চরিত্রে কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। কেউ যেন না বুঝতে না পারে আমি একটা মেয়ে।