কবিতা থেকে নাটক নিঃসন্দেহে দুরূহ

মহুয়ার মায়া নাটকের দৃশ্যে ইন্তেখাব দিনার ও সুমাইয়া শিমু
মহুয়ার মায়া নাটকের দৃশ্যে ইন্তেখাব দিনার ও সুমাইয়া শিমু

এ সপ্তাহে টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে নজরুল জন্মজয়ন্তী। ২৫ মে রাত ৯টা ৫ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হলো নজরুলের ‘আপন পিয়াসি’ কবিতা অবলম্বনে বিশেষ নাটক মহুয়ার মায়া। নাটকটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন গোলাম সোহরাব দোদুল। অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার, সুমাইয়া শিমু, প্রসূন আজাদ প্রমুখ। নাটকে দেখানো হয়েছে, অস্থির মতির দিনার পেশায় একজন কবিরাজ। তার স্ত্রী শিমু অত্যন্ত সংসারী ও স্বামী অন্তঃপ্রাণ। তবু দিনার বনে-বাগানে ছুটে বেড়ায় এক অলীক মায়ার পেছনে, মনের শান্তির অন্বেষণে। খুঁজে বেড়ায় মায়াময় আশ্রয়। কিন্তু কোথাও পায় না সে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও মায়া। অবশেষে স্ত্রী শিমু একদিন গভীর আস্থা নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, এই বুকেই তোমার জন্য লুকানো আছে মহুয়ার মায়া। তখন সে বিশ্বাস করে এবং স্ত্রীকে বুকে টেনে নেয়। খুঁজে পায় কাঙ্ক্ষিত মায়া।

প্রথমেই বলব, কবিতা থেকে নাটক নির্মাণ নিঃসন্দেহে একটি দুরূহ কাজ। আকর্ষণীয় কোনো গল্প ছিল না নাটকটিতে। তার কারণও খুব সংগত, নাটকটি নির্মিত হয়েছে কবিতা অবলম্বনে। যে কারণে গল্প বলতে যা বোঝায়, তা হয়েছে অনেকটা কবিতার মতোই। চিত্রনাট্য এবং সংলাপেও সর্বত্র ফুটে উঠেছে কবিতার ছায়া। নাটকটিতে শক্তিশালী গল্প না থাকায় নির্মাতা চেষ্টা করেছেন চিত্রনাট্য ও সংলাপ দিয়ে সে অভাব পূরণ করতে এবং বলা যায় তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। নাটকটি তাঁর মৌলিক সৃষ্টিই মনে হয়েছে। লোকেশন এবং অভিনয় দুটোই ছিল আকর্ষণীয়। নজরুলের নাটক উপযোগী গল্প যেহেতু সীমিত, সে কারণে নজরুল জন্মজয়ন্তীতে অনেকে আগেও কবিতা অবলম্বনে নাটক নির্মাণ করেছেন। পুরো নাটকটি দেখার পর মনে হয়েছে, নির্মাণে ছিল যথেষ্ট যত্ন ও পরিশ্রমের ছাপ। পরিশ্রম করলে যে ভালো কিছু হয়, নাটকটি তার উদাহরণ হতে পারে।

পরদিন ২৬ মে রাত ৯টায় রুমানা মালিক মুনমুনের উপস্থাপনায় বাংলাভিশনে প্রচারিত হলো সেলিব্রেটি শো ‘আমার আমি’। এ দিন অতিথি ছিলেন নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল ও ফেরদৌস আরা। সহজেই বোঝা গেল নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষেই তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে। দুজনের কাছেই শুনলাম তাঁদের বেড়ে ওঠার গল্প, কীভাবে গানের জগতে এলেন, তাঁদের বর্তমান ব্যস্ততা ইত্যাদি। শিল্পী শাকিল দেশের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। আর ফেরদৌস আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স, এমএ করেছেন, কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত তাঁদের শিক্ষামূলক বৃত্তিতে অগ্রসর হননি। তাঁরা ডুবে আছেন গানের জগতেই। বর্তমানে নজরুলসংগীত চর্চা সম্পর্কে দুজনই অনেক উঁচু মন্তব্য করেছেন এ অনুষ্ঠানে। তাঁদের একটি মন্তব্য ছিল, ‘অতীতে এতটা যত্ন নিয়ে নজরুলসংগীত চর্চা ও রেকর্ড করা হতো না, যা বর্তমানে হচ্ছে।’ আমরা জানি না এ কথা কতটা সত্য, কেননা এ ক্ষেত্রে শ্রোতা-দর্শকদের রয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত মত ও ভিন্ন উপলব্ধি।

শেষে উপস্থাপনা সম্পর্কে বলব, অনেকটাই গতানুগতিক ও একঘেয়ে। শুরু থেকে একই ধারায় চলে আসছে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একসময় অভিনেত্রী অপি করিম অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করতেন, ওই সময় থেকেই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমান উপস্থাপিকা মুনমুন সেই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন বলা যায়। দীর্ঘদিন পর এখন অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় কিছুটা বৈচিত্র্য বা অভিনবত্ব আনা যায় কি না, এটাই এখন দর্শকের প্রত্যাশা।

২৪ মে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে এশিয়ান টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হলো একক সংগীতানুষ্ঠান ‘এশিয়ান মিউজিক’। শিল্পী ছিলেন পলাশ। তিনি একটানা প্রায় ৩ ঘণ্টা গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে। নিজের গানের পাশাপাশি অন্যের জনপ্রিয় গান, লোকগান ও বিভিন্ন ধারার গান গেয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল ‘আমি কেমন করে দেব মাটি তোমার কবরে’, ‘তুমি নীরব রাতের জোনাকি’, ‘আজ বৃষ্টি এসেছে আমার শহরে’। অন্যের জনপ্রিয় গানের মধ্যে কিশোর কুমারের ‘আমি একা বড় একা আমার আপন কেউ নেই’, মান্না দের ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি কি সেই আগের মতোই আছ’, লাকী আখান্দের ‘এই নীলমণি হার এই স্বর্ণালি দিনে’ ইত্যাদি। সব গানেই তাঁর পারদর্শিতা ছিল প্রশংসনীয়। তাঁর কণ্ঠ সুরেলা ও মিষ্টি। স্বরের উঁচু ও নিচু পর্দায় তাঁর কণ্ঠ ছিল বেশ সাবলীল। মূলত আধুনিক গানের শিল্পী হলেও এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধারার গান গেয়ে অনুষ্ঠানকে করেছেন বৈচিত্র্যময় এবং শ্রোতাদের করেছেন মুগ্ধ। তিনি সংগীতে যাত্রা শুরু করেছিলেন ব্যান্ড সংগীত দিয়ে। তাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কয়েকটি ব্যান্ডের গানও গেয়েছেন। অন্যের গানের পাশাপাশি তিনি নিজের গান দিয়েও যে দর্শকহৃদয় জয় করতে পেরেছেন, আমরা মনে করি এটাই তাঁর সাফল্য। তিনি যে দর্শকদের কাছে কতটা পরিচিত ও জনপ্রিয়, তা-ও বোঝা গেছে দর্শকদের ফোনালাপের মাধ্যমে। তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।