নতুন 'ফারেনহাইট ৪৫১' ছবি নিয়ে খুশি নন সবাই

ফারেনহাইট ৪৫১ ছবির দৃশ্যে মাইকেল শ্যানন ও মাইকেল বি জর্ডান
ফারেনহাইট ৪৫১ ছবির দৃশ্যে মাইকেল শ্যানন ও মাইকেল বি জর্ডান


রে ব্রাডবেরির তুমুল আলোচিত উপন্যাস এবং ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর ততোধিক আলোচিত ফিল্ম ‘ফারেনহাইট ৪৫১’ নতুন করে নির্মাণ করেছেন রামিন বাহরানি। কেব্ল টিভি এইচবিওর কল্যাণে এই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের সবাই খুশি হয়েছেন বলা যাবে না।

ব্রাডবেরির ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত উপন্যাসের পটভূমি ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর আমেরিকা। শীতল যুদ্ধের শুরু, কমিউনিস্টবিরোধী ম্যাকার্থিবাদের গমগমা সময়। এই রাজনৈতিক বহিরঙ্গের সঙ্গে যুক্ত ছিল সদ্য আবিষ্কৃত টেলিভিশন। সবাই বইপত্র ছেড়ে টিভি নিয়ে মেতে উঠেছে, কানের মধ্যে রেডিও। সরকারি নির্দেশে সেন্সরহীন বই প্রকাশ নিষিদ্ধ। সব বইতেই থাকবে এক কথা, ভিন্নমত প্রকাশ করা চলবে না। সব অগ্নিনির্বাপকের কাছে কড়া নির্দেশ ছিল, ‘ঘরে অথবা লাইব্রেরিতে যে বই আছে, তা পুড়িয়ে ফেলো।’ তাদের কাজ আগুন নেভানো নয়, আগুন শুরু করা।

একই ঘটনা একুশ শতকের পটভূমিতে নির্মাণ করতে গিয়ে বাহরানি টিভির বদলে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াকে সময়ের নতুন বিকার বলে নির্ধারণ করেছেন। মানুষ বই পড়ার বদলে সারাক্ষণ ইন্টারনেটের স্ক্রিনে। এখানেও ফায়ার ফাইটারদের কাজ বই পোড়ানো। তবে শুধু বই নয়, ক্ষতিকর বিবেচিত এমন সব ফিল্ম, এমনকি গান পর্যন্ত ধ্বংস করা হোক, তাঁদের ওপর এই নির্দেশ।

ব্রাডবেরির উপন্যাসের এই নবায়নে জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধই শান্তি।’ এখানে দেয়ালের ইলেকট্রনিক লিখন থেকে আমরা জানতে পারি, এই সময়ের নতুন মন্ত্র, ‘মুক্ত হওয়ার চেয়ে সুখী হওয়া অনেক বেশি জরুরি।’ ব্রাডবেরির উপন্যাসে বলা হয়েছিল, বই মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, এর ফলে মানুষের মনে দেখা দেয় নানা মত। অতএব, পোড়াও বই। এখানেও দেখি সরকারের নির্দেশে পোড়ানো হচ্ছে বই। মাত্র তিনটি বই সরকারিভাবে অনুমোদিত-বাইবেল, ভার্জিনিয়া উলফের টু দ্য লাইট হাউস ও মেলভিলের মবিডিক।

যে রাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে ফিল্মটি নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে, তার প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করা যায় না। ট্রাম্প আমলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ ঘটছে প্রতিদিন। সত্যের বদলে এখন চল হয়েছে ‘বিকল্প সত্যের’। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারণে বই উধাও হচ্ছে, সংবাদপত্র বন্ধ হচ্ছে, সেটাও পরিচিত সত্য। অধিকাংশ সমালোচক বাহারানির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন না। তাঁদের আপত্তি, যে ইঙ্গিতময়তা ব্রাডবেরির গ্রন্থটিকে অথবা এমনকি ত্রুফোর ফিল্মটিকে ভিন্নতা দিয়েছিল, বাহারানির ফিল্মে তা নেই।

যেমন নিউইয়র্ক টাইমস-এর জেমস পনিউজিক বলেছেন, ‘ছবিটিতে পাইরো টেকনিক বা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে বিস্তর, “আগুন ও ক্রোধ” তারও কমতি নেই। কিন্তু নতুন যে বাস্তবতার প্রতিফলন তার লক্ষ্য, তা নিয়ে নতুন কোনো আলোকপাতই হয়নি।’