একজন অনন্যসাধারণ বরডেইন

অ্যান্থনি বরডেইন
অ্যান্থনি বরডেইন

ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন অ্যান্থনি বরডেইন। যদিও শেফ বা রন্ধনবিদ তবু টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবেই মানুষ তাঁকে চিনতেন। মনে করে দেখুন, চীনের রাস্তার ধারে তেলাপোকা ভাজা বা বারাক ওবামার সঙ্গে ভিয়েতনামে ছোট এক রেস্তোরাঁয় প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে নুডলস খাচ্ছেন তিনি, যা দেখে ভক্তরা কখনো অবাক, কখনো আনন্দিত হয়েছে। সেই অ্যান্থনি বরডেইন গত শুক্রবার মারা গেলেন ফ্রান্সের কেইসারবার্গ বিগনোবল শহরে।

সিএনএনের ‘পার্টস আননোউন’ সিরিজে বরডেইন তুলে ধরেছেন এমনই সব অনন্য গল্প, যা দেখার জন্য প্রবল আগ্রহ নিয়ে টিভি চ্যানেলের দিকে চোখ রাখতেন দর্শক। সেই গল্প কখনো খাবার নিয়ে, কখনো রন্ধনশিল্পীকে নিয়ে, কখনো খাবারের সংস্কার নিয়ে বা কখনো তার বৈচিত্র্য নিয়ে। এর আগে অ্যান্থনি বরডেইন ট্রাভেল চ্যানেলে ‘নো রিজারভেশনস, দ্য লেওভার ও ফুড নেটওয়ার্কে আ কুকস ট্যুর’ নামের তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজ উপস্থাপনা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে থাকা বিশাল খাদ্যভান্ডারের গল্প ও প্রণালি তিনি পৌঁছে দিয়েছেন উৎসুক দর্শক-শ্রোতার কাছে।

নিউইয়র্কের ব্র্যাসারি লে আল রেস্তোরাঁয় কাজের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বরডেইনের রান্নার ক্যারিয়ার। লে আল রেস্তোরাঁয় চাকরিরত অবস্থায় তিনি জেনেছিলেন রেস্তোরাঁর পেছনের গল্প। সেই অভিজ্ঞতাই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন তাঁর বই কিচেন কনফিডেনশিয়াল: অ্যাডভেঞ্চারস ইন দ্য কালিনারি আন্ডারবেলিতে। তিনি একাধারে ছিলেন দুর্দান্ত শেফ, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটক ও অসাধারণ কথক। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে কখনো শেফ, কখনো টিভি ব্যক্তিত্ব, কখনো পর্যটক, কখনো লেখক হিসেবে তিনি পৌঁছেছেন তাঁর ভক্তদের ঘরে ঘরে।

বাবা পিয়ারে বরডেইন ছেলেকে শিখিয়েছিলেন একটি খাবারের সবচেয়ে বড় গুণ তার স্বাদে নয় বরং তৃপ্তিতে। যখনই কেউ প্রিয়জনদের সঙ্গে তৃপ্তিভরে কিছু খায়, তখনই সেই খাবার হয়ে ওঠে সুস্বাদু। সেই বার্তাই বরডেইন পৌঁছে দিয়েছেন সবার কাছে।

ডিজাইনার কেট স্পেডের আত্মহত্যার এক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যান্থনি বরডেইন আত্মহত্যা করলেন। অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব অ্যান্থনি বরডেইনের এমন সিদ্ধান্ত সবাইকে নির্বাক করেছে। যে মানুষ আনন্দ করতে শিখিয়েছেন, ঝুঁকি নিতে শিখিয়েছেন বা কোনো রকম অহং বা সংস্কারের ঊর্ধ্বে ওঠে সাধারণকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন, সেই অ্যান্থনি বরডেইনের মনের ভেতর যে এত ঝড় বইছিল, তা কি কেউই বুঝতে পারেনি আগে?