ঈদের অনুষ্ঠান নির্মাণে তাড়াহুড়োর ছাপ

নূরুল আলমের বিয়ে নাটকের দৃশ্যে আফজাল হোসেন ও সুর্বণা মুস্তাফা
নূরুল আলমের বিয়ে নাটকের দৃশ্যে আফজাল হোসেন ও সুর্বণা মুস্তাফা

এ সপ্তাহে টিভি চ্যানেলগুলোতে চলেছে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এসব বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মাঝে অধিকাংশই নাটক, টেলিফিল্ম ও সংগীতানুষ্ঠান। ঈদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে এক কথায় বলব, প্রায় ক্ষেত্রেই যেন ছিল তাড়াহুড়োর ছাপ। এত এত অনুষ্ঠানের মাঝে আমরা বেছে নিয়েছি তিনটি চ্যানেলের তিন ধারার তিনটি বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রথমেই সংগীতানুষ্ঠান। বৈশাখী টিভি ঈদের দিন থেকে পরপর ৭ দিন বেলা ১১টায় প্রচার করছে ‘সোনালি দিনের স্বর্ণালি গান’। ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনায় ৭ দিনব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে অনুষ্ঠানটি। ১৭ জুন এ অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন সালমা ও আশিক। আর উপস্থাপক ছিলেন দিঠি আনোয়ার। দুজন পালাক্রমে প্রায় দেড় ঘণ্টা গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে। দুজনেরই গানের নির্বাচন ছিল আকর্ষণীয়। তাঁদের পছন্দের সেরা গানগুলোই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।

সালমার পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘ও মোর বানিয়া বন্ধু রে’, ‘আমি চাইলাম যারে পাইলাম না তারে’, ‘কইলজার ভেতর গাঁথি রাখুম তোঁয়ারে’ ইত্যাদি। সালমার কণ্ঠের বিশেষত্বই শ্রোতা-দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ। তিনি অধিকাংশই নিজের গান গেয়েছেন, এটিও উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে শিল্পী আশিকের পরিবেশিত গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘বন্ধুরে কই পাব বলো রে’, ‘আমার কলিজাতে দাগ লেগেছে’, ‘দে দে পাল তুলে দে, মাঝি হেলা করিস না’ ইত্যাদি। আশিকের পরিবেশনাও ছিল বেশ আন্তরিক। তাঁর কণ্ঠ কিছুটা হালকা হলেও বেশ সুরেলা এবং গায়কিও আকর্ষণীয়। অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা যায়, পরিকল্পনা ভালো ছিল, তবে এটি সরাসরি সম্প্রচারিত হলে হয়তো আরও বেশি আকর্ষণীয় ও আন্তরিকতাপূর্ণ মনে হতো। দিঠি আনোয়ারের উপস্থাপনা সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে যতটা প্রাণবন্ত মনে হয়ে, এখানে ঠিক তেমনটা মনে হয়নি।

১৭ জুন বেলা ২টা ৪০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হলো ঈদের বিশেষ টেলিছবি শেষ পর্যন্ত। রচনা ও পরিচালনা করেছেন শিহাব শাহীন। অভিনয়ে অপূর্ব, জাকিয়া বারী মম, মাজনুন মিজান প্রমুখ।

টেলিছবির গল্পটি সংক্ষেপে এ রকম, অপূর্বর বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হলো তার প্রেমিকা মমর বড় বোনের। এরপর ঘটনাক্রমে জানাজানি হয়ে গেল অপূর্ব ও মমর সম্পর্কের কথা। ভাই–ভাবি দুজনেই ক্ষিপ্ত হলো। দুই পরিবার থেকেও সাফ জানিয়ে দিল, তাদের এ সম্পর্ক মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তারপর শুরু হলো তাদের বোঝানো। দুজনের জন্য অন্যত্র পাত্র-পাত্রী খোঁজা। ইত্যাদি নানা ঘটনা ও নাটকীয়তার পর শেষে সবাই মেনে নিল অপূর্ব ও মমর সম্পর্ক। অতঃপর তাদের বিয়ে হলো।

প্রথমেই বলব, গল্পটি পুরোপুরি বাস্তবসম্মত হয়নি। কেননা আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে এখন ছেলেমেয়েদের সম্পর্ককে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে এমন বাধা বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া খালাতো ভাইবোনের মধ্যে সম্পর্ক এবং বিয়ে তো আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। কাজেই টেলিছবিতে এটি নিয়ে যে নাটকীয়তা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। আর মম এবং অপূর্বর যে বিরহ দেখানো হয়েছে, তা–ও কখনো কখনো মনে হয়েছে হাস্যকর। কেননা, ব্যক্তিস্বাধীনতার এ যুগে এবং সেলফোন ও ইন্টারনেটের এত সহজপ্রাপ্যতার মাঝে এমন বিরহ বেমানান। তবে সবার অভিনয়ে এবং টেলিছবিটির নির্মাণে পরিচালকের যত্ন ও আন্তরিকতার ছাপ ছিল, এটুকু বলা যায়।

১৭ জুন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো ঈদের বিশেষ নাটক নূরুল আলমের বিয়ে। রচনা করেছেন বদরুল আনাম সৌদ, পরিচালনা আরিফ খানের। আর অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, আফজাল হোসেন প্রমুখ।

নাটকের গল্পটি হলো, নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তির অন্বেষণে নূরুল আলম বৃদ্ধ বয়সে বিয়ের জন্য ঘটক সুবর্ণার শরণাপন্ন হয়। ঘটকের চেষ্টা চলতে থাকে অবিরাম। সুবর্ণা তাকে নিয়ে রিকশায় ঘুরে ঘুরে এ মেয়ে সে মেয়ে দেখায়, কিন্তু কোথাও ঠিকমতো মেলে না। শেষে একটি মেয়ে নূরুল আলমকে বিয়ে করতে সম্মত হয়, কথা এগিয়েও যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নূরুল আলমই সেটা না করে দেয়। তারপর নূরুল আলমরূপী আফজাল একদিন সুবর্ণার বাসায় এসে উপস্থিত হয় এবং জানায় সে ঘটক সুবর্ণাকেই বিয়ে করতে চায়। মেজাজি এবং দেমাগি সুবর্ণা অতঃপর নানা ছলাকলার পর রাজি হয়ে যায়। এই হলো গল্প।

প্রথমেই বলব, অনেক দিন পর দর্শক আফজাল–সুবর্ণা জুটির একটি নাটক দেখার সুযোগ পেল। নাটকের গল্প, সংলাপ, অভিনয় সবই ছিল বেশ মজার। ঈদের নাটক হিসেবেও ছিল যথোপযুক্ত। নির্মাতা আরিফ খানের যত্নের ছাপ ছিল পুরো নাটকে। কিন্তু তারপরেও কেন জানি মনে হয়েছে, নাটকের শেষ পরিণতিটি দর্শক আগেই বুঝতে পারছিলেন। সেটা নানা কারণেই হতে পারে। আফজাল–সুবর্ণা জুটির কারণেও হতে পারে।