রাশিয়ার মেয়েটি

ভিক্তোরিয়া লাপিরেভা
ভিক্তোরিয়া লাপিরেভা

মেয়েটাকে চিনতে পারছেন না তো? কী করে চিনবেন? পশ্চিমা দুনিয়ায় কি রুশ মডেল বা মিস রাশিয়াকে নিয়ে অত লেখালেখি হয়? আমাদের দেশে পশ্চিমা বিশ্ব নিয়ে যে মাতামাতি হয়, তাতে অবধারিতভাবেই বাদ পড়ে যায় রাশিয়া। ভিন্ন ভাষার কারণে চাইলেই কেউ রাশিয়া সম্পর্কে অতটা জানতে পারেন না। এখন এই বিশ্বকাপের মৌসুমে রাশিয়ায় আবর্তিত হচ্ছে গোটা বিশ্ব। আর তাই আমাদের এই মেয়েটাও উঠে এসেছে আলোচনায়।

ভিক্তোরিয়া লাপিরেভা ‘মিস রাশিয়া’ হয়েছিলেন ২০০৩ সালে। সে সময় ফুটবল দুনিয়া তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তিনি খুব চাইতেন ফুটবলের কাছাকাছি থাকতে। মিস রাশিয়া হওয়ার পরপরই তাঁকে টেলিভিশনের উপস্থাপক হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে কাজই করছিলেন। কয়েক বছর পর, ২০০৮ সালে তিনি রাশিয়ার প্রথম নারী হিসেবে ফুটবলের ওপর টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন। কাজটা তাঁর জন্য খুব সহজ ছিল না। সাধারণভাবে রুশ দর্শক এ ধরনের অনুষ্ঠানে পানীয় ও চিপস হাতে পুরুষ উপস্থাপককে দেখেই অভ্যস্ত। অথচ বলা নেই কওয়া নেই, মিস রাশিয়া ফুটবল নিয়ে কথা বলছেন—এটা দর্শকেরা কীভাবে নেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু একেবারে নতুন ধরনের উপস্থাপনা হওয়ায় অনুষ্ঠানটি সাফল্য পেয়েছিল।

আচ্ছা, আমরা হঠাৎ করে ৩৪ বছর বয়সী ভিক্তোরিয়া বা ভিকাকে নিয়ে কথা বলছি কেন? যোগসূত্র তো একটা আছেই—তিনি ২০১৭ সাল থেকে ফিফার শুভেচ্ছাদূত। যখন তিনি শুনলেন, তাঁকে শুভেচ্ছাদূত হতে হবে, তখন তাঁর আর খুশির সীমা রইল না। সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারায় ভিকা খুব ভালো আছেন। এ কারণেই তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এটা এক দারুণ ব্যাপার। সমাজের প্রতি দায়বোধ থেকেই এ দায়িত্ব পালন করছি আমি। আমাদের দেশকে আমি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করছি। যখন প্রথম প্রস্তাবটি পেয়েছি, তখনো বুঝতে পারিনি কত বড় দায়িত্ব এটি।’ এ দায়িত্ব পালন করতেই তিনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মরক্কো, তুরস্ক ও মিসর সফর করেছেন। আর মডেল হিসেবে তো রুশদের হৃদয় জয় করেছেন আরও অনেক আগে।

২০০৩ সালে মিস রাশিয়া ভিক্তোরিয়া লাপিরেভা
২০০৩ সালে মিস রাশিয়া ভিক্তোরিয়া লাপিরেভা

ভিক্তোরিয়া জাতিসংঘেরও শুভেচ্ছাদূত।

রাশিয়ায় হচ্ছে বিশ্বকাপ। তাই এবার সারা পৃথিবী রাশিয়াকে অন্য চোখে দেখবে—এমনটাই আশা ভিকার। তাই তো তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কত জাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। নানা সংস্কৃতির মিলন ঘটেছে এখানে। খাবারদাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। সারা বিশ্বের মানুষ এসে আমাদের এই সংস্কৃতির শক্তি উপলব্ধি করতে পারবে।’

খেলাধুলা মানুষে মানুষে মিলন ঘটায়—এটা বিশ্বাস করেন ভিক্তোরিয়া। ‘ফুটবল শুধু খেলাই নয়, এটা একধরনের সুখকর জীবনযাপন, সারা বিশ্ব যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তখন ফুটবল সারা বিশ্বের মানুষকে কাছে টেনে নিচ্ছে। এখানে কার গায়ের রং কেমন, কে কোন ধর্মের মানুষ তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। যে ভালো খেলছে, তাকেই অভিবাদন জানাচ্ছে সবাই। এটাই ফুটবলের শক্তি।’ বলেন ভিকা।

নিজ দেশে এখন ভিক্তোরিয়ার অনেক ভক্ত। অনেকেই তাঁর জীবনদর্শনের সঙ্গে নিজের জীবন মিলিয়ে নিয়েছেন। ভিকা যেমন বলেন, ‘ফিফার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমার মূল বার্তা হলো, “আসলে সীমান্ত বলে কিছু নেই। সীমান্ত আমরা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছি। যদি সত্যিই তুমি কিছু করতে চাও, যদি সত্যিই তোমার মনে কোনো কিছু করার ব্যাপারে তৃষ্ণা জাগে, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জেনে রাখো, যেখানেই থাকো না কেন—তুমি পারবে।’”

রাশিয়ার জাতীয় দল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে, এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। তবে ভিক্তোরিয়া বলেন, ‘আমি রুশি মানুষ, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি আমার জাতীয় দলকেই সমর্থন দিয়ে যাব।’

তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট