অজিত রায়ের স্মরণে কাঁদলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী

জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের শিল্পীরা। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের শিল্পীরা। ছবি: প্রথম আলো

গুণী শিল্পী প্রয়াত অজিত রায়কে স্মরণ করতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই কাঁদলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বললেন, অজিত রায় তাঁর গান শোনারও রুচি তৈরি করেছেন। একদম ছেলেবেলা থেকে পরিচয় অজিত রায়ের সঙ্গে। নীলফামারীতে মাসে এক দিন আসাদুজ্জামান নূরদের বাড়িতে তিনি যেতেন গান শেখাতেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুজ শিল্পী অজিত রায়কে স্মরণ করতে গিয়ে আপ্লুত হন প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীও। তাঁর স্মৃতিচারণায় আসে স্বাধীনতার আগে গণসংগীত এবং পরে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অজিত রায়ের নানা কীর্তির কথা। বললেন, ‘গত শতকের ষাটের দশক থেকে যত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে, তার সহায়ক শক্তি হিসেবে অজিত রায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সারা দেশে তিনি ছুটে গেছেন। ভরাট উদাত্ত কণ্ঠে গণসংগীত গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। ষাটের দশক থেকেই তিনি “আমার সোনার বাংলা” গানটি গেয়ে তা জনসাধারণের কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন।’ কামাল লোহানী জানান, তিনি যখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি করতেন, তখন দিনের পর দিন অজিত রায় ‘জাতীয় সংগীত প্রশিক্ষণ’-এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিনা পয়সায়।

গত ২৯ জুন ছিল প্রয়াত এই সংগীতজ্ঞের ৮০তম জন্মদিন। দিনটিকে উপলক্ষ করে গান আর কথামালায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রয়াত শিল্পী অজিত রায়কে স্মরণ করল তাঁর হাতে গড়া সংগঠন অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘তুমি আমার অহংকার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় অজিত রায়ের মেয়ে শ্রেয়সী রায়ের গানের সুরে। শ্রেয়সীর কণ্ঠে গীত হয় ‘তুমি গাও তুমি গাও হে’। গান শেষে ছিল অজিত রায়কে নিবেদিত বিশিষ্টজনদের আলোচনা। এ পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, চল্লিশ দশকের গণসংগীতের উত্থানের সময়কালের শেষ প্রতিনিধি ছিলেন অজিত রায়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাঁর সুরারোপিত উদ্দীপনামূলক গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী বর্তমান সময়ে অজিত রায়ের মতো গুণী মানুষের বড় বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সুমন বসাক।

অজিত রায়কে স্মরণ করে বক্তৃতা দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অজিত রায়কে স্মরণ করে বক্তৃতা দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে সংগীতায়োজনের শুরুতে মঞ্চে এসে অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অজিত রায়ের মেয়ে শ্রেয়সী রায়। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় অজিত রায়কে। রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে অজিত রায়ের সুরারোপিত গানের সুরে সাজানো ছিল এ পর্ব। একক ও সম্মেলক সুরে এগিয়ে যায় আয়োজন। সূচনায় অভ্যুদয়ের শিল্পীরা পাঁচটি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। একক ও অভ্যুদয়ের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানগুলোর শিরোনাম ‘মহারাজ, এ কি সাজে’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’, ‘গভীর রজনী’, ‘দাঁড়িয়ে আছো’ ও ‘তোমায় গান শোনাবো’। এ পর্বে একক কণ্ঠে দুটি গান গেয়েছেন প্রাচী চক্রবর্তী ও চন্দ্রিমা ভৌমিক।

দ্বিতীয় পর্বে অজিত রায়ের সুর করা গানে উঠে আসে জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্য, মাইকেল মধুসূদন ও শামসুর রাহমানের বাণী। দলীয় কণ্ঠে গীত হয় ‘হে মহামানব, এবার ফিরে, শুধু একবার চোখ মেলো’। একক কণ্ঠে এলড্রিন গেয়ে শোনান ‘এই তো এই দেশ’, ঝুলন কুমার শুনিয়েছেন ‘মুখে মধুর বাংলা গান’, প্রিয়ম বিশ্বাস গেয়েছেন ‘ঐ চকচকে কালো’ ও সংগীতা তালুকদারের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘সুখ তুমি কি’। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানগুলোর শিরোনাম ছিল ‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে’, ‘কার আদরের’, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’, ‘আজি সপ্তসাগর’, ‘কপোতাক্ষ নদী’ ও ‘স্বাধীনতা তুমি’।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ শিল্পীই এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হওয়া অনুষ্ঠানটিতে যেমন ছিল যত্নের ছাপ, তেমনি দর্শকেরাও দারুণ উপভোগ করেছেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলছিলেন, যাঁরা আসেননি আজকের আয়োজনে, তাঁরা মিস করেছেন!