শেষ হলো উদীচীর নৃত্য উৎসব

উদীচীর নৃত্য উৎসবের শেষ দিনে পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ‘সিধু-কানুর পালা’র একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো
উদীচীর নৃত্য উৎসবের শেষ দিনে পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ‘সিধু-কানুর পালা’র একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো

প্রথমবারের মতো নৃত্য উৎসবের আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে নৃত্যকে আরও বেশি করে কাজে লাগানোর প্রত্যয় নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হলো দুই দিনের এ উৎসব।

‘নৃত্যে-ছন্দে ভাঙি পাথর-সময়’ স্লোগান নিয়ে গতকাল ছিল উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। এদিন শুরুতেই ছিল আলোচনা পর্ব। এতে অংশ নেন নৃত্যগুরু আমানুল হক, মিনু হক ও শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্য দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খানের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ।

আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় নৃত্য পরিবেশনা পর্ব। শুরুতেই পরিবেশিত হয় সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে নির্মিত নৃত্যনাট্য ‘সিধু-কানুর পালা’। নৃত্যনাট্যটি নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নৃত্য গবেষক, শিক্ষক ও পরিচালক মহুয়া মুখার্জি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অমর পুরুষ সিধু-কানুর বীরত্বগাথাকে নতুন করে সবার সামনে উপস্থাপন করাই এ নৃত্যনাট্যের উদ্দেশ্য।

এ ছাড়া আবহমান বাংলার নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ নৃত্যশৈলী নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত নৃত্য সংগঠন ও দল। কামরুল হাসান ফেরদৌসের পরিচালনায় কাদামাটি নৃত্য দল পরিবেশন করে নোয়াখালী অঞ্চলের লোকনৃত্য ‘ডাই’। এরপর কত্থক নৃত্য সম্প্রদায় পরিবেশন করে ‘তারানা’। উদীচী বরিশাল জেলা সংসদের শিল্পীরা মঞ্চে নিয়ে আসেন নৃত্যনাট্য ‘সোনাই মাধব’। অনীক বসুর পরিচালনায় স্পন্দনের শিল্পীরা মঞ্চে নিয়ে আসেন ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানের সঙ্গে নাচ। সবশেষে দিনাজপুর উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন বিভিন্ন গানের সমন্বয়ে রচিত বিশেষ নৃত্য কোলাজ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে গত বুধবার বিকেলে দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজশাহীর বরেণ্য নৃত্যগুরু বজলুর রহমান। প্রথম দিন ছিল গণসংগীতের প্রবাদপুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অমর সৃষ্টি ‘শঙ্খচিল’ গানের সঙ্গে উদীচীর নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। এ ছাড়া উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ, উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, বিশিষ্ট নৃত্যগুরু লায়লা হাসান এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা নৃত্য গবেষক, শিক্ষক ও পরিচালক মহুয়া মুখার্জি। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহসভাপতি অধ্যাপক এ এন রাশেদা। স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। এ পর্বে অতিথিদের সঙ্গে উৎসব স্মারক তুলে দেন উদীচী নেতারা।

দুই দিনের উৎসবে আমন্ত্রিত দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের হাতেও উৎসব স্মারক তুলে দেওয়া হয়।