অপেক্ষা নতুন নেতৃত্বের?

ডিরেক্টরস গিল্ডের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক
ডিরেক্টরস গিল্ডের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক

দুই বছর পার করল টেলিভিশন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে শিশু একাডেমীতে আয়োজন করা হয়েছিল সাধারণ সভার। এই সংগঠন আবার দুই বছর মেয়াদি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে।

গতকালের সাধারণ সভায় যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তা নিয়ে কথা হয় সংগঠনটির সভাপতি গাজী রাকায়েত ও সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিকের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশন ও আপিল বিভাগ নামে দুটি কমিটি হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমজাদ হোসেন। তাঁর সঙ্গে কমিশনার হিসেবে থাকবেন মামুনুর রশীদ ও কাওসার চৌধুরী। আপিল বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন সৈয়দ হাসান ইমাম। সদস্য হিসেবে থাকবেন আবুল হায়াত ও সাইদুল আনাম টুটুল। দুই মাসের মধ্যেই নির্বাচনের সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।

গত দুই বছরে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাফল্য কী, জানতে চাওয়া হয়েছিল সভাপতি গাজী রাকায়েতের কাছে। তিনি বললেন, ‘প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করলাম। দুই বছরে আমরা অনেক কাজ করেছি। পিকনিক আয়োজন থেকে শুরু করে পয়লা বৈশাখ—সবই আমরা করেছি। একই সঙ্গে তিনটি সংগঠন মিলে অফিস নেওয়া, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা, বিভিন্ন সেক্টরে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংবর্ধনাসহ অনেক কাজই আমরা করেছি। এটা ঠিক, আরও অনেক কিছু করার ছিল। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ পাই, তবে করব।’

গাজী রাকায়েত জানান, সংগঠন থাকার বড় সুবিধা হলো কোনো অনিয়ম হলে অন্তত বলার জায়গা তৈরি হয়। এ রকম কিছু অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফল হয়েছে সংগঠনটি।

সভাপতির মতো সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারে শুটিং করার ফি কমিয়েছি। আগে যেখানে ১০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন সেটা ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। এটা ডিরেক্টরস গিল্ডের অর্জন। এ ছাড়া সংগঠনের সদস্যদের চিকিৎসা–সুবিধা দিতে একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, আরেকটি প্রক্রিয়াধীন।’

এদিকে ২০১৬ সালের শেষ দিকে ডিরেক্টরস গিল্ডসহ টেলিভিশন নাটক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ১৩টি সংগঠন মিলে গড়ে তোলে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও), যে সংগঠনের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত। বিদেশি ধারাবাহিক বন্ধসহ বেশ কিছু দাবিতে ২০১৬ সালের শেষ দিকে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি। কিন্তু সেই আন্দোলন ফলপ্রসূ হয়নি বলেই অনেকের ধারণা। গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এফটিপিও গঠন করে আমরা ওই সময় একটা আন্দোলনের মুখে পড়েছিলাম। তবে এফটিপিওর মাধ্যমে আমরা একটা সুপারিশমালা তৈরি করেছি। সেই সুপারিশমালা বাস্তবায়ন যে কারণে ঝুলে আছে, সেটা হলো অ্যাটকো (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) ও এফটিপিও একসঙ্গে বসছে না। বসলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতাও দরকার বলে মনে করেন সভাপতি। ‘আমরা পারিনি কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে রেখেছি,’ এমনটাই বলেন তিনি।

তবে শিল্পীদের নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেও সেটা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অভিনয়ের আগে চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করে নাটক নির্মাণের কথা থাকলেও সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি বলে স্বীকার করেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক। তিনি বলেন, ‘এটা এত দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি গত মেয়াদে সভাপতি পদে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমি সেভাবে যুক্ত ছিলাম না। বাংলাদেশের নাটকের অবস্থা দেখলেই বোঝা যাবে ডিরেক্টরস গিল্ড কী করেছে বা করেনি। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বা পিকনিকের পাশাপাশি নাটকের জন্যও তাদের কিছু করা খুব জরুরি বলে আমি মনে করি।’

তবে গত দুই বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব করবেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্যরা। হিসাব শেষেই নির্বাচিত করবেন সেরা নেতৃত্ব। সংগঠনের সবার অপেক্ষা সে রকমই।