জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে

৮ জুলাই প্রদান করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। সে সময় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাও বলেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁদের অনুভূতি ও সেসব কথামালা।
ফরিদুর রেজা সাগর, এস এম কামরুল আহসান, মোজাম্মেল বাবু
ফরিদুর রেজা সাগর, এস এম কামরুল আহসান, মোজাম্মেল বাবু

ফরিদুর রেজা সাগর
প্রযোজক, অজ্ঞাতনামা
আমাদের ফজলুর রহমান বাবু খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। তিনি অজ্ঞাতনামার জন্য কোনো পুরস্কার পাননি। আমি পুরস্কার নিতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, অজ্ঞাতনামা নিয়ে কিছু বলার নেই? তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন,‘আমি ছবিটি দেখেছি।’ জানতে চাইলাম, কেমন হয়েছে? বললেন, ‘ভালো’। তখন আমি ফজলুর রহমান বাবুকে বললাম, শোনেন, আপনার দুঃখ পাওয়ার কোনো কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নিয়ে কী বলছেন শোনেন। প্রধানমন্ত্রী একটু বলবেন, অজ্ঞাতনামায় ফজলুর রহমান বাবু কেমন অভিনয় করেছেন? তিনি বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘অসাধারণ। খুব ভালো কাজ করেছ তুমি!’ তখন বাবুকে বললাম, এরপর আপনার আর কোনো পুরস্কার পাওয়ার দরকার আছে?

আসলে আমরা তো পুরস্কারের জন্য ছবি বানাই না। আমরা চেষ্টা করি, সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে ভালো পরিচালক ও কলাকুশলী দিয়ে ছবি বানানোর। সেটারই ফলাফল পুরস্কার।

এস এম কামরুল আহসান
পরিচালক, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ঘ্রাণ
আমার ঘ্রাণ ছবিটি সবাই খুব পছন্দ করেছে। দেশে-বিদেশে পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু এই পুরস্কার আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এটা সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র। পুরস্কারটি নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি বলেছি, এটা আপনাদের ছবি। তিনি তাতে বেশ খুশি হয়েছেন।

মোজাম্মেল বাবু
প্রযোজক, জন্মসাথী
পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আমরা একটা নিউজ চ্যানেল, আমরা তো ফিচার ফিল্ম বানাই না। আমরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করি। তিনি খুশি হলেন। আসলে জন্মসাথী একাত্তর মিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রযোজনা করেছে। পুরস্কারপ্রাপ্তি আমাদের জন্য একটা দারুণ আনন্দের খবর। একাত্তর পুরো বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করে। এ কারণে এই পুরস্কার আমাদের বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

অমিতাভ রেজা চৌধুরী, চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা
অমিতাভ রেজা চৌধুরী, চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা

অমিতাভ রেজা চৌধুরী
শ্রেষ্ঠ পরিচালক, আয়নাবাজি
যেকোনো পুরস্কারই কাজকে অনুপ্রাণিত করে। সেভাবেই জাতীয় পুরস্কার আমাকেও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আয়নাবাজির জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার ছিল দর্শকের প্রতিক্রিয়া। তাঁরা ছবিটি দেখেছেন, পছন্দ করেছেন। বিজ্ঞ জুরি এ ছবিটিকে দেখে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করেছেন, এটাও একটা বড় প্রাপ্তি। আমার খুশির আরও দুটি কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো, শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পাশাপাশি চিত্রগ্রহণ, অভিনেতা, শব্দমিশ্রণসহ আরও যেসব বিভাগে পুরস্কার পেয়েছি আমরা, সেগুলো আমাদের দলের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রত্যাশা ছিল হয়তো শিল্প নির্দেশনা বিভাগেও পুরস্কার পাবে আয়নাবাজি। কারণ এ ছবিতে শিল্প নির্দেশনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে যা-ই হোক, বিজ্ঞ জুরির প্রতিটি বিবেচনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার আনন্দের আরেকটি কারণ হলো, আমার মা-বাবা। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ায় তাঁদের যে আনন্দ আমি দেখেছি, এর সঙ্গে আর কিছুর তুলনা হয় না। যেকোনো পুরস্কারের চেয়েও বড় অর্জন মা-বাবার এই হাসিটা। যেকোনো সন্তানের জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর হয় না।

চঞ্চল চৌধুরী
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রধান চরিত্র), আয়নাবাজি
এবার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে গিয়ে মজার ঘটনা ঘটেছে। মঞ্চের সামনে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসতে হাসতে ‘চঞ্চল ভাই’ ‘চঞ্চল ভাই’ বলে আমাকে সম্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি। পরক্ষণেই পুরস্কার দিতে দিতে এর ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। ‘আমার ববির (শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি) দুই ছেলে তোমার খুব ভক্ত। তোমার নাটক দেখে আর সারাক্ষণ চঞ্চল ভাই চঞ্চল ভাই বলে।’ এর আগে তিনি আমার মনপুরা ছবিটি দেখেছেন। এবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আয়নাবাজি তিনি দেখেছেন কিনা। তিনি জানালেন সময়ের অভাবে দেখা হয়নি। মঞ্চ থেকে নেমে পুরস্কারের ক্রেস্টটি ছেলে শুদ্ধের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। পুরস্কার হাতে ছেলের সে কী উত্তেজনা! আমাকে বলে, বাবা পুরস্কারটি এত ভারী কেন?

নুসরাত ইমরোজ তিশা
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, অস্তিত্ব
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সামনে আরও ভালো ভালো কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন। আমার খুব ভালো লাগছে। শিশুশিল্পী হিসেবে এই পুরস্কার একবার পেয়েছিলাম। এবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে।

কুসুম শিকদার, আলীরাজ, ফজলুর রহমান বাবু
কুসুম শিকদার, আলীরাজ, ফজলুর রহমান বাবু

কুসুম শিকদার
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, শঙ্খচিল
এই পুরস্কার শঙ্খচিল ছবির এপার বাংলার দুজন প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও হাবিবুর রহমান খান এবং ছবির ওপার বাংলার প্রযোজক প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও পরিচালক গৌতম ঘোষের নামে উৎসর্গ করলাম। কারণ তাঁদের কারণেই শঙ্খচিল, পুরস্কার ও আমি। পুরস্কারটি গ্রহণ করার পর থেকে কাজের প্রতি বেশি দায়িত্ব ও ভালো কাজের আকাঙ্ক্ষা মাথায় কাজ করছে।

আলীরাজ
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্ব চরিত্র), পুড়ে যায় মন
৩৫ বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি। এবারই প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম। পুরস্কার প্রদানের দিন আমার স্ত্রী দর্শক আসনে বসে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে এসে স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি। এরপর বাসায় ফিরে তো এলাহীকাণ্ড! বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে—সবাই মিলে বেলুন ফুটিয়ে, ফুল ছিটিয়ে আমাদের দুজনকে গ্রহণ করেছে। মনে হচ্ছিল আমরা যেন বিশ্বজয় করে ফিরেছি। সত্যি কথা কী, আমাদের মতো শিল্পীদের এ ধরনের পুরস্কার পরিবারের কাছে দারুণ সম্মানিত করে।

ফজলুর রহমান বাবু
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্ব চরিত্র), মেয়েটি এখন কোথায় যাবে
দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করা অত্যন্ত সম্মানের। পুরস্কার নেওয়ার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি যে প্রশংসা পেয়েছি, ধন্য আমি। পুরস্কারটি গ্রহণ করার আগে আমি যখন তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াই তখন আমার উদ্দেশে বললেন, ‘তুমিই সেরা অভিনেতা’। আর কী লাগে। এরপর আমাকে পুরস্কার দেওয়ার সময় পাশে দাঁড়ানো তথ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আমার উদ্দেশে আবারও বললেন, ‘ও খুব ভালো অভিনয় করে। ওর অজ্ঞাতনামা ছবিটি বিমানে বসে দেখেছি।’ সে সময় এত ভালো লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না।

তানিয়া আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি
তানিয়া আহমেদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি

তানিয়া আহমেদ
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পার্শ্ব চরিত্র), কৃষ্ণপক্ষ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ পুরস্কার পাওয়াটা অনেক বেশি সম্মানের। এ পুরস্কার আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে যখন আমার িপ্রয় মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে তা তুলে িদয়েছেন। আমি খুবই আনন্দিত।

শহীদুজ্জামান সেলিম
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা, অজ্ঞাতনামা
২০১২ সালে চোরাবালি চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম, এবারও পেলাম। দুবারই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হলো। এবার নিতে যাওয়ার পর পাশে দাঁড়ানো তথ্যমন্ত্রী বলছিলেন, ‘ও তো খুবই ভালো অভিনয় করে।’ এটা শুনে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি জানি তো, ভিলেনের অভিনয় ভালো করে। কিন্তু ও এত মিষ্টি করে হাসার পর ভিলেনের অভিনয় কীভাবে এত ভালো করে!’ তারপর হেসে ফেললাম দুজনই। আমি তাঁকে বললাম, আপনি দেখার সময় পান? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তোমার অভিনয় দেখেছি।’ আসলে অজ্ঞাতনামা নিয়ে দর্শকেরা আমাকে এত প্রশংসা করেছেন যে তখনই আমার পুরস্কার পাওয়া হয়ে গেছে। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিটা ভালো লেগেছে।

আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী, শঙ্খচিল
পুরস্কার নিতে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘আমি তোমার সিনেমাটি দেখেছি। অনেক ভালো অভিনয় করেছ তুমি।’ এটা শুনে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি আরও ভালো ভালো কাজ করতে চাই। পাশাপাশি পড়াশোনাও ঠিকমতো করতে চাই।

ইমন সাহা, সৈয়দ ওয়াকিল আহাদ, মেহের আফরোজ শাওন
ইমন সাহা, সৈয়দ ওয়াকিল আহাদ, মেহের আফরোজ শাওন

ইমন সাহা
শ্রেষ্ঠ সুরকার ও শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক
মেয়েটি এখন কোথায় যাবে
পুরস্কার নিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, কেমন আছেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আর বলো না, সংসদে দেরি হয়ে গেল। তোমরা সবাই বসে আছ, কেমন লাগে বল?’ তাঁর কথায় মনে হলো, ঘরের মানুষ কথা বলছেন। দ্বিতীয়বার যখন পুরস্কার নিতে গেলাম তখন বললেন, ‘বাহ্‌বা, তুমি আবারও!’ আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা তো দেশে নেই। বড় ভাই বন্ধু আজম ভাইয়ের মুঠোফোনে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করার পর সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমার সহকর্মীদের অনেকে যে খুশি হয়েছেন, তা মন্তব্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আমার অনুভূতি ছিল ভীতিকর। আমার চেয়ে অনেক গুণী মানুষের ভাগ্যেও এতবার জাতীয় পুরস্কার জোটেনি। সেদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান।

সৈয়দ ওয়াকিল আহাদ
শ্রেষ্ঠ গায়ক, দর্পণ বিসর্জন, গান: অমৃত মেঘের বাড়ি…
পুরস্কার পাওয়ার দিন আমি আমার মায়ের অভাব বোধ করেছি। তিনি বেঁচে নেই। তিনি থাকলে আমার এই অর্জনে খুব খুশি হতেন। আমি পুরস্কার নিতে মঞ্চে ওঠার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও এ কথাটি বলেছি। বলেছি, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন।’ আমি মঞ্চে উঠতেই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছিলেন, ‘ছেলেটি খুব ভালো গান করে। যে গানের জন্য পুরস্কার পেয়েছে সেটা খুব ভালো গেয়েছে।’ এটা শুনে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘এমন ভালো ছেলেদেরই তো আমরা চাই এগিয়ে আসুক।’ এই কথাটি আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরার পর আমার পরিবারের উচ্ছ্বাস আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। এ অর্জন আমার পরিবারের সবার। সামনে এখন আমি আরও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে কাজ করার সাহস পেয়েছি। সামনে আমি শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই।

মেহের আফরোজ শাওন
শ্রেষ্ঠ গায়িকা, কৃষ্ণপক্ষ, গান: যদি মন কাঁদে…
এই গানটির সঙ্গে অনেক আবেগ জড়িত। গানটি শ্রোতারা খুব পছন্দ করেছিলেন। এখন স্বীকৃতি পাওয়ায় ভালো লাগছে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার, তৌকীর আহমেদ, অনম বিশ্বাস
গাজী মাজহারুল আনোয়ার, তৌকীর আহমেদ, অনম বিশ্বাস

গাজী মাজহারুল আনোয়ার
শ্রেষ্ঠ গীতিকার, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে
গান: বিধিরে ও বিধি বিধি...
মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা সবাই-ই এক। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে আমার আগেই জানাশোনা আছে। পুরস্কার নেওয়ার সময় আমরা দুজন দুজনের খোঁজ খবর নিয়েছি। এতটুকুই। যেকোনো কাজের স্বীকৃতির প্রাপ্তি অত্যন্ত আবেগের। আমি যখন মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণ করি তখন অতিথিদের সারিতে আমার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতনি উপস্থিত ছিলেন। সারা জীবন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে পরিবারের মানুষদের অনেক সময় বঞ্চিত করেছি। তাই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারের আনন্দ দিয়ে তাদের পুষিয়ে দিতে চেয়েছি। মঞ্চ থেকে নেমে আমার দীর্ঘ পথচলার সঙ্গী স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছি পুরস্কারটি। আমার স্ত্রী সেই পুরস্কার ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনির হাতে তুলে দিয়েছেন।

তৌকীর আহমেদ
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার, অজ্ঞাতনামা
একটি ভালো চলচ্চিত্র টিকে থাকে তার গুণে, সময়কে অতিক্রম করে। মানুষের ভালোবাসাই একটি চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার। অজ্ঞাতনামা দর্শকের সেই পুরস্কার পেয়েছে অনেক আগে। পাশাপাশি এ-ও বলতে চাই, চলচ্চিত্রের এই সর্বোচ্চ পুরস্কারের সেশনজট দূর করা দরকার। ২০১৬ সালের পুরস্কার ২০১৮ সালে না হয়ে ২০১৭ সালের মধ্যে হলেই ভালো হতো। তা না হলে আনন্দ যেমন ফিকে হয়, একই সঙ্গে দর্শকের কাছেও এর গুরুত্ব কমে।

অনম বিশ্বাস
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, আয়নাবাজি
এটা আমার প্রথম লেখা একটা লম্বা চিত্রনাট্য। সে জায়গা থেকে এটা আমার জন্য সত্যি খুব আনন্দের। আমি এতটা আশা করিনি। আসলে ছবিটা যে এত মানুষ পছন্দ করেছে, তাঁদের কাছাকাছি গিয়েছে এটাই অনেক বড় পাওয়া। তার ওপর পুরস্কার আমার জন্য বাড়তি পাওনা। আর আমার মা অনেক খুশি হয়েছেন।

গাউসুল আলম শাওন, সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন, ইকবাল আহসানুল কবির
গাউসুল আলম শাওন, সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন, ইকবাল আহসানুল কবির

গাউসুল আলম শাওন
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, আয়নাবাজি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে গলায় মেডেলটা পরিয়ে দেওয়ার পর ক্রেস্টটা নিয়েই চলে যাচ্ছিলাম। তারপর তিনি সার্টিফিকেট ও চেকটা হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘এগুলি কি আমি বাসায় নিয়ে যাব?’ আমিও হেসে বললাম, ‘না, আমাকেই দিন।’ আমার প্রথম ছবির চিত্রনাট্য লিখেই পুরস্কার পেলাম। এটা একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। খুব ভালো লাগছে। আমার সন্তানেরা খুব খুশি।

সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা, আন্ডার কনস্ট্রাকশন
আমি খুবই খুশি। স্বীকৃতি কাজের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়ায়। এই অর্জন আমার পরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে গতি এনে দেবে। চিকিৎসকের পরামর্শে আমাকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের দিন স্বশরীরে থাকতে পারিনি। এ নিয়ে কিছুটা দুঃখবোধ রয়েই গেল।

ইকবাল আহসানুল কবির
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, আয়নাবাজি
এটা আমার প্রথম পুরস্কার। স্বাভাবিকভাবে এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের খবর। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরা খুব খুশি। পুরস্কার নিতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুব ভালো লেগেছে।

উত্তম গুহ, রাশেদ জামান, রিপন নাথ
উত্তম গুহ, রাশেদ জামান, রিপন নাথ

উত্তম গুহ
শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক, শঙ্খচিল
পুরস্কার তো বরাবরই ভালো লাগে। যতবার পুরস্কার পাই ততবারই দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। এ কারণে পরের কাজে পরিশ্রম বেশি করতে হয়। পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কবার হলো?’ আমি বলেছি সাতবার। শঙ্খচিল চলচ্চিত্রের পরিচালক গৌতম ঘোষ সেটটা দেখে প্রশংসা করেছিলেন। এটাও আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার।

রাশেদ জামান
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, আয়নাবাজি
অ্যাওয়ার্ড মানে তো একটা স্বীকৃতি। আমার জন্য আনন্দের খবর হলো, আমি জীবনের প্রথম কোনো অ্যাওয়ার্ড পেলাম। এই প্রথম অ্যাওয়ার্ডটা যখন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পেলাম তা আমার জন্য সত্যি বিশাল ব্যাপার। মা-বাবা খুব খুশি হয়েছেন।

রিপন নাথ
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, আয়নাবাজি
খুবই ভালো লাগছে। এটা নিয়ে আমার দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি। তাই আনন্দটাও দ্বিগুণ। তবে পুরস্কার মনে হয় কাজের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।

সাত্তার, ফারজানা সান, মানিক
সাত্তার, ফারজানা সান, মানিক

সাত্তার
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা, নিয়তি
অনেক খুশি। আমার বাড়ির সবাই খুব খুশি হয়েছেন। আমার জন্য অনেক আনন্দের খবর এটা। সত্যি খুব ভালো লেগেছে।

ফারজানা সান
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা, আয়নাবাজি
আমরা যারা চলচ্চিত্রে পোশাক ও সাজসজ্জার কাজ করি তাদের একটা নাম আছে কস্টিউম ডিজাইনার। কিন্তু এই কাজের শতভাগ স্বীকৃতি আমরা পাই না। কিন্তু যখন পুরস্কারটা পেলাম তখন মনে হলো, এটা একটা বড় অর্জন আমার জন্য। আমাদের পরিবারের সবাই সরকারি চাকরি করেন। তো তাঁরা কখনোই আশা করেননি আমি চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকব। একমাত্র মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আসা। এ কারণে আমার মা দারুণ খুশি।

মানিক
শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান, আন্ডার কনস্ট্রাকশন
কাজের স্বীকৃতি চায় প্রতিটা মানুষ। সেটা পেলে মন আনন্দে ভরে ওঠে। জাতীয় পর্যায়ের এই অর্জনের আনন্দ ভাষায় করতে পারব না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমি পৌঁছেছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন আমাকে ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। যে চলচ্চিত্র আমাকে এমন সম্মাননা এনে দিয়েছে সেখানে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।

গ্রন্থনা: আনন্দ প্রতিবেদক

  • পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নামের ক্রম সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী করা।