তারকার বন্ধু তাঁরা

>

তারকারা শুধু লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের মধ্যেই থাকেন না। তাঁদেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে। সেই জীবনে আছে বন্ধু। আমরা হয়তো তারকাদের চিনি। কিন্তু তাঁদের বন্ধু? চেনা গণ্ডির বাইরের বন্ধুদের নিয়ে বলেছেন তারকারা। গ্রন্থনা: হাবিবুল্লাহ সিদ্দিক

সাইদুর রহমান, জাহিদ হাসান
সাইদুর রহমান, জাহিদ হাসান

ওকে ডাকি ‘বাল্য’ বলে
জাহিদ হাসান, অভিনেতা

আমার বন্ধুর নামটা অনেকেই জানেন। সাইদুর রহমান। ডাকনাম বাচ্চু। তবে আমি ওকে ডাকি ‘বাল্য’ বলে। ও আমাকে একই নামে ডাকে। আমার ছোটবেলা কেটেছে সিরাজগঞ্জে। ছোটবেলার আমার যাবতীয় দুষ্টুমি, আনন্দসহ সবকিছুর সঙ্গী ছিল এই বাল্য। ছোটবেলায় সেই আবেগ আমরা বড় হয়েও ধারণ করে চলেছি। এখনো আমরা ভালো বন্ধু। আমি সিরাজগঞ্জ গেলেই বন্ধু চলে আসে। ওর যত ব্যস্ততাই থাকুক, আমাকে সময় দেয়।

আমার বন্ধু সম্পর্কে দুটো ঘটনা বলতে পারি। একটা খুব ছোটবেলার ঘটনা। আমাদের টাইগার বয়েজ ক্লাব নামে একটা ক্লাব ছিল। সেখানে খেলার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলোয়াড় আনা হতো। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়দের দিতে হতো এক শ থেকে দেড় শ টাকা। একবার এনে বিপদে পড়ল বাচ্চু। টাকা দিতে পারছে না। আমিও চিন্তায় পড়ে গেলাম। বন্ধু না জানি বিপদে পড়ে! যেহেতু ও-ই খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়ে এসেছে। আমি চিন্তা করছিলাম কী করা যায়। এর ঠিক কদিন আগে আমার বাবা আমাকে একটা নতুন হাতঘড়ি কিনে দিয়েছিলেন। বেশ সুন্দর হাতঘড়িটা। বন্ধুকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে ১৫০ টাকায় সেই হাতঘড়িটাই বেচে দিলাম। পরে সেই টাকা নিয়ে দিলাম বাল্যকে। এটা তো ছোটবেলার ঘটনা। যখন কলেজে পড়ি, তখনো আমরা দুজন দুই রাজনৈতিক দলের হয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতাম। কলেজে প্রায়ই মারামারি হতো। মজার ব্যাপার হলো, মারামারির সময় দেখা যেত আমার বন্ধু হয়তো আমাদের দলের সবাইকে মারছে কিন্তু আমাকে মারছে না। আবার হয়তো থানায় আমার নামে মামলা হয়েছে এবং মধ্যরাতে পুলিশ আসবে ধরতে, সেটা বাচ্চু আগেই জেনে গিয়ে আমাকে সতর্ক করতে আসত। এই হলো আমার বাল্য।

তরুণ সরকার, চঞ্চল চৌধুরী
তরুণ সরকার, চঞ্চল চৌধুরী

তরুণের গল্পটা একটু আলাদা
চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা

১৯৯২-৯৩ সালের কথা। ওই সময় আমি গ্রাম থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তি হই। আমরা যারা গ্রাম থেকে এসে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলাম, তারা একসঙ্গে থাকি। তো এ রকম আমরা ছিলাম পাঁচজন। আমি চন্দ্রজিৎ, তরুণ, মিথুন ও জাহিদ। এর মধ্যে তরুণের গল্পটা একটু আলাদা। ওর সঙ্গে আমার একটু আলাদা সম্পর্ক ছিল। বরিশালের গৌরনদীর ছেলে তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থাকত জগন্নাথ হলে। আমার পরীক্ষার সময়, বিশেষ করে থিওরি পরীক্ষার সময় আমি হলে থাকতাম। তরুণের রুমে। আমরা ওই পাঁচজন মিলে ওর রুমে নোট লিখতাম। মধ্যরাতে যেতাম চানখাঁরপুলে ডিম-পরোটা খেতে। খেয়ে এসে জগন্নাথ হলের মাঠে বসে আড্ডা মারতাম। কখন ভোর হয়ে যেত। তরুণের সঙ্গে আমার চুক্তি ছিল, আমি ওর হলে বা চানখাঁরপুলে যেখানেই খাই, আমার খাবারের বিল দেবে তরুণ। বিনিময়ে শুক্রবার আমার বাসা তিলপাপাড়ায় গিয়ে থাকবে এবং খাবে। ওখানে আমরা ব্যাচেলররা থাকতাম। কিন্তু শুক্রবারে আমার ভাই ও বোনেরা আসতেন। ভালো ভালো রান্না হতো ওই সময়। আমি তরুণকে মজা করে বলতাম, ‘তোর ১২ টাকার খাবারের সঙ্গে এইটা কেমনে মেলাবি। এটার দাম তো অনেক।’ তরুণ ছিল আমাদের বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী। কয়েক বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছে। বিয়েও করেছে। যদিও বিয়ে নিয়ে ওকে অনেক জ্বালাতন করেছি। বলতাম, ‘তোর কপালে আর বিয়ে নাই।’ বিয়ে করায় আর এই অপবাদ দেওয়া যাচ্ছে না। তো আমার সেই সব সময়ের ‘তরুণ’ বন্ধুর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। দেখাও হয়।

যুক্তি লাহেজা, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী
যুক্তি লাহেজা, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী

ভুলেই গিয়েছিলাম লাহেজাকে
মেহ্জাবীন চৌধুরী, অভিনেত্রী

আমার ছোটবেলা কেটেছে ওমানে। তাই স্কুলের বন্ধুদের কথাই বলব। এখন যদিও আমার পেশাগত বন্ধুবান্ধব অনেক আছে। তবু আজ আমার ছোটবেলা এক বন্ধুর কথা বলব। আমি তখন ওমানে ভারতীয় স্কুল সোহারে পড়াশোনা করি। যে সময়টার কথা বলছি, তখন চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি মনে হয়। আমাদের ক্লাসে এসে ভর্তি হয় যুক্তি লাহেজা নামের একটি মেয়ে। ওর বাড়ি ভারতের মধ্যপ্রদেশে। তখন ওর সঙ্গে আমার টুকটাক কথা হতো। গল্প হতো। এতটুকুই। কিন্তু এক্কেবারে ‘কলিজার টুকরা’ বন্ধু নয়। তারপর তো দেশে এসে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হয়ে কাজ শুরু করি। ফেসবুকও তখন ছিল না। ভুলেই গিয়েছিলাম লাহেজাকে। কিন্তু বন্ধুত্বের টান আমাকে ভুলতে দেয়নি। প্রায় ১০ বছর পর ২০১৪ সালের দিকে ফেসবুকে খুঁজে পাই লাহেজাকে। তারপর নতুন করে যোগাযোগ হয়। এখন আমরা প্রচুর গল্প করি। আমার যেকোনো খারাপ লাগা, ভালো লাগা ওর সঙ্গে শেয়ার করি। ছোটবেলায় আমরা ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ না হলেও এখন আত্মার বন্ধু। ওর মতো বন্ধু পাওয়া আনন্দের। অনলাইনে ওর সঙ্গে দারুণ সময় কাটে। ওকে বলেছি আমাদের দেশে আসার জন্য। ছোটবেলায় ওর সঙ্গে একটা ছবি তোলা ছিল। এটা আমরা প্রায়ই দেখি এবং হাসাহাসি করি। আমরা দেখতে কত্ত কিউট ছিলাম!

তানজিনা আহমেদ, ঐশী
তানজিনা আহমেদ, ঐশী

অনেকে ওকে আমার ছোট বোন বানিয়ে ফেলে
ঐশী, সংগীতশিল্পী

আমার সেরা বন্ধুর কথা যদি বলি, তবে আমার মায়ের কথা বলতে হবে। কিন্তু এখানে তো সেটা বলার সুযোগ নেই। তাই আমার ক্যাম্পাসের একটা বন্ধুর গল্প বলি বরং। আমার বন্ধুটির নাম তানজিনা আহমেদ। সবাই ডাকে তোফা নামে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মেয়েটিকে দেখতাম। খুব বেশি কথা বলত না। ক্লাসে আসত, চলে যেত। তারপর একবার গ্রুপ স্টাডি করার সময় ওর সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়। সেদিনই মূলত পরিচয়। নানা ধরনের গল্প চলতে থাকে ওই দিন। তারপর অনেক দিন গেছে। আমরা একসঙ্গে ক্লাস করেছি, পড়াশোনা করেছি। আমার উপলব্ধি হয়েছে, মেয়েটা আমাকে বোঝে। আমাদের ঠিকঠাক বন্ধনটা হয়ে উঠছে। মজার ব্যাপার হলো, ও বয়সে আমার চেয়ে এক বছরের বড়। কিন্তু অনেকে ওকে আমার ছোট বোন বানিয়ে ফেলে। আমার বেশির ভাগ কনসার্টে ওকে নিয়ে যাই। অনেকে আসে, কথা বলে। অনেকে ওর সঙ্গেও ছবি তোলে। ও খুব মজা পায়। একবার তো এক মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমি ঢাকায় একটা কনসার্টে গিয়েছি। বেশ কিছু ভক্ত এসেছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। অটোগ্রাফ নিল, ছবি তুলল। তারপর যাওয়ার সময় একজন তোফাকে দেখিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, উনি কি আপনার মেয়ে?’ আমি তো হেসে খুন। এ রকম মজার মজার অভিজ্ঞতা হয় ওকে নিয়ে বেরোলে। ও এবং আমি দুজনই খুব উপভোগ করি ব্যাপারটা।