বাস্তবতার প্রতি নির্মাতাদের উদাসীনতা আছে

আজ পুতুলের জন্মদিন নাটকে আফরান নিশো ও সাফা কবির
আজ পুতুলের জন্মদিন নাটকে আফরান নিশো ও সাফা কবির

এটিএন বাংলার সেলিব্রেটি শো ‘সেন্স অব হিউমার’ নিয়ে আগেও লিখেছি। ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের উপস্থাপনায় পুনঃপ্রচারিত হলো অনুষ্ঠানটি। বর্তমান সেলিব্রেটি শোগুলোর মধ্যে এ অনুষ্ঠানটি নানা দিক থেকে ব্যতিক্রম। ওই দিন অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ। এই অনুষ্ঠানে সাধারণত বিনোদন জগতের তারকারাই আসেন। তাই গোড়াতেই সন্দেহ ছিল এ দিন অনুষ্ঠানটি তার বৈশিষ্ট্য ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে কি না? শুরুতে কিছুটা সমস্যা মনেও হচ্ছিল, কিন্তু উপস্থাপক জয়ের কৌশলী উপস্থাপনা ও সেন্স অব হিউমার অল্প সময়েই সেই দ্বিধা কাটিয়ে দিয়েছে। পলক মন্ত্রিত্বের খোলস ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। তিনি অকপটে উত্তর দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কীভাবে মেয়ে ভক্তদের সামাল দেন, কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও ঘর-সংসারে নিজের অবস্থান অটুট রাখেন। কীভাবে পদ-পদবি ও ক্ষমতা উপভোগ না করে দায়িত্ব হিসেবে পালন করেন। সবচেয়ে উপভোগ্য হয়েছে উপস্থাপক জয়ের সঙ্গে তাঁর মজার খেলায়, অভিনয়ে, গানে ও নাচে অংশগ্রহণের দৃশ্যগুলো। মোটকথা, উপস্থাপক জয় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন এ দিনের অনুষ্ঠানে এবং তিনি সফল হয়েছেন।

এবারে আরেকটি সেলিব্রেটি শো ‘আমার নায়ক’ প্রচারিত হলো এস এ টিভিতে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে। উপস্থাপনা করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এ দিন তাঁর নায়ক হয়ে এসেছিলেন চিত্রনায়ক রোশান। অনুষ্ঠানে পরীমনি তাঁর সহশিল্পী নায়ক হিসেবে রোশানকে কেমন দেখেছেন, কীভাবে তাঁদের প্রথম পরিচয় হয়, তারপর একসঙ্গে শুটিং, পারস্পরিক ভাব আদান-প্রদান, সমঝোতা-সব একে একে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। বেপরোয়া চলচ্চিত্র থেকে দুজনের একটি গানের দৃশ্য নিয়ে নাচও উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। চেষ্টা করেছেন অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় করার। পরীমনির উপস্থাপনা সম্পর্কে বলা যায়, যেটা তাঁর গুণ আবার সেটাই তাঁর দোষ। তাঁর উপস্থাপনা অকৃত্রিম, এটি তাঁর গুণ। কিন্তু এমনই অকৃত্রিম যেন কথা বলতে বলতে ভুলেই যান যে তিনি একটি টিভি স্টুডিওতে বসে আছেন।

১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হলো মাঝ দুপুরের টেলিছবি স্বপ্নের উড়ান। পরিচালনায় সাইফুল আলম, অভিনয়ে আজাদ আবুল কালাম, ইমন, প্রমুখ। ছবিতে দেখানো হয় কুচক্রী চরিত্রে অভিনয় করা আজাদ কালাম গ্রাম্য শোষক। তিনি চক্রান্ত করে নিঃস্ব কৃষক আরিফ মিয়ার কিশোরী কন্যাকে বিয়ে করেন ও নির্যাতন করেন। পিতা-মাতার মৃত্যুর সংবাদ শুনেও কিশোরী মেয়েটিকে বাড়ি যেতে দেন না। ঘরে বন্দী করে রাখেন ও নির্যাতন করেন। অতঃপর বাড়ির লজিং মাস্টার চরিত্রে অভিনয় করা ইমন, কুচক্রী চরিত্রে অভিনয় করা আজাদ কালামের মুখোমুখি হয়ে এর প্রতিবাদ জানান ও মেয়েটিকে মুক্তি দেন।

এককথায় বলা যায় টেলিছবিটি গতানুগতিক গল্পেরই দুর্বল উপস্থাপনা। বিষয়বস্তু যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও চিত্রনাট্য, সংলাপ ও অভিনয়ের দুর্বলতার কারণে টেলিছবিটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। দৃশ্যের পর দৃশ্যে যে ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে, তা আরোপিত মনে হওয়ায় হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। আবার বিশ্বস্ততাও অর্জন করতে পারেনি। যেমন শেষ দৃশ্যে ইমনের হঠাৎ সাহসী হয়ে ওঠা এবং মুক্তিযুদ্ধ টেনে আনা নিতান্তই আরোপিত মনে হয়েছে। আর অভিনয়ের কথা বললে, আজাদ কালাম ও কৃষক আরিফ মিয়ার চরিত্র ছাড়া আর কারও অভিনয়ই মনে দাগ কাটতে পারেনি।

২১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হলো একক নাটক আজ পুতুলের জন্মদিন। গল্প মারুফ রেহমান, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, অভিনয়ে আফরান নিশো, সাফা কবির, সাবেরী আলম, সোহেল খান প্রমুখ। নাটকের শুরুতেই স্ত্রী পুতুলের জন্মদিনের দিন মোটর মেকানিক নিশো দুর্ঘটনায় পঙ্গু ও শয্যাশায়ী হন। তারপর শুরু হয় নিশোর স্ত্রী ও মায়ের জীবনসংগ্রাম। একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী পুতুল ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে ইংরেজি শিখে চাকরি পান এবং বসের সহায়তায় অগ্রিম বেতন নিয়ে স্বামীর জন্মদিনে কেকসহ বাড়ি ফেরেন। নিশোকে জানান, তাঁরও চাকরি হবে। তিনি হুইলচেয়ারে বসেই কাজ করতে পারবেন। এই হলো গল্প।

বলা যায়, জটিল গল্পের সরল পরিসমাপ্তি। কিন্তু বাস্তবে তো এমন সরল সমাধান হয় না। তবু ভালো লেগেছে পরিচ্ছন্ন নির্মাণ এবং যথোপযুক্ত চিত্রনাট্য ও সংলাপের জন্য। তবে মোটর মেকানিক ও পঙ্গু নিশোর সাজানো ঘরদোর ও উন্নতমানের আসবাব মোটেও বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। বর্তমান নাটক ও টেলিছবির ক্ষেত্রে বড় সমস্যাটিই হলো, বাস্তবতার প্রতি নির্মাতাদের উদাসীনতা।

সবশেষে বিটিভিতে সরাসরি প্রচারিত সংগীতানুষ্ঠান ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় প্রচারিত হলো অনুষ্ঠানটি। শিল্পী ছিলেন তানজিন রুমা। ‘ভাষার জন্য আর কোনো জাতি দেয়নি এত প্রাণ’ গানটি দিয়ে তিনি শুরু করেছেন। তারপর তাঁর পরিবেশিত গানের মধ্যে ছিল ‘ভালোবাসা কোনো অঙ্ক তো নয়’, ‘আমার মনে আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’, ‘আওলাদে রসুল মদিনার ফুল’ ইত্যাদি।

এককথায় বলা যায়, তাঁর কণ্ঠ মিষ্টি কিন্তু পরিচর্যার অভাব মনে হয়েছে। আর উপস্থাপনায় মনে হয়েছে, তিনি যেন গান গাইতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু ও শ্রুতিকটু হয়েছে তাঁর কাশি। গানের ফাঁকে এবং কথা বলার ফাঁকে বারবার তিনি কাশি দিচ্ছিলেন। আর সে কাশির শব্দ চলে আসছিল মাইক্রোফোনে। এমন শারীরিক অবস্থায় সরাসরি প্রচারিত গানের অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ না করলেই ভালো করতেন। পাশাপাশি বলব, বিটিভিতে কী লিপটাচ মাইক্রোফোন নেই? লিপটাচ মাইক্রোফোন হলে তো শিল্পীর এই কাশির শব্দ মাইক্রোফোনে আসার কথা ছিল না। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।