বোল পাল্টালেন ভারতীয় প্রযোজক

আবদুল আজিজ, শাকিব খান, অশোক ধানুকা
আবদুল আজিজ, শাকিব খান, অশোক ধানুকা

বাংলাদেশে যৌথ প্রযোজনায় একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি করে আর্থিক ক্ষতি, জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার এক দিন পর বোল পাল্টালেন ভারতীয় প্রযোজক অশোক ধানুকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অহেতুক মন্তব্য করে চাপের মুখে পড়ে বোল পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা।

অশোক ধানুকা তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আসলে যৌথ প্রযোজনার সব ছবি লস হয়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে প্রায় সব কটি প্রকল্পে আমরা সফল। সম্প্রতি শাকিব খানের সঙ্গে নতুন প্রকল্প করার চিন্তা করি। সে ৬০ লাখ রুপি পারিশ্রমিক চেয়েছিল। আমার পক্ষে এই বাজেট নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তাই আমি এই প্রজেক্ট থেকে সরে আসি। শাকিব তারকা, সে পারিশ্রমিক চাইতেই পারে। ভবিষ্যতে ব্যাটে–বলে মিললে শাকিবকে নিয়েই আমি নতুন প্রজেক্ট করব।’

অশোক ধানুকা ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘বাংলাদেশে সিনেমা বানাতে এবং মুক্তি দিতে গেলে নানা বাধা আসে। এত সমস্যার মধ্য দিয়ে আমার পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। বর্তমানে কলকাতার বাজারে কোনো বাণিজ্যিক ছবি চলছে না। কোনো হিরোর ছবিই ব্যবসা করতে পারছে না! এখানে আর্ট ফিল্মের দর্শক রয়েছে। এই ছবিগুলো ব্যবসা করছে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে বাংলাদেশে আপাতত প্রযোজনা করছি না। শাকিব খান আমার ছেলের মতো। তার সঙ্গে আমার বেশ ভালো সুসম্পর্ক। আমরা তার কাজে অনেক হ্যাপি।’

এদিকে পোস্ট দেওয়ার পর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে অশোক ধানুকা বলেন, ‘এখন আমি খাচ্ছি।’ এরপর কোনো কিছু না বলেই তিনি ফোনের লাইনটি কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। বারবারই তিনি লাইনটি কেটে দেন।বাংলাদেশে ছবি না বানানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রথম আলেকে অশোক ধানুকা বলেছিলেন, ‘ইচ্ছে ছিল, বাংলাদেশের ছবির বাজারটা বিকশিত করতে আমরা ভূমিকা রাখব। কারণ সেখানে বাংলা ছবির বাজারটা ভালো। ভাবলাম, যদি ভালো ছবি দেওয়া যায়, তাহলে কাজ হতে পারে। এরপর দেখলাম, ঢাকায় মানুষের মধ্যে লোভ ঢুকে গেছে। এত সস্তা কাজ করছিল, তাই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’

বাংলাদেশে এসকে মুভিজ প্রথম ছবি বানানো শুরু করে ৯০ দশকের শেষ দিকে। টানা চারটি ছবি বানিয়ে এরপর আর বানাতে পারেনি। ২০১৪ সাল থেকে আবার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবি বানানো শুরু করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বাধার কারণে ছবি বানানো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ১৩টি ছবি যৌথ প্রযোজনায় বানিয়েছেন এবং চারটি ছবি আমদানি করেছেন বলে জানান অশোক ধানুকা।

‘শিকারি’ ছবির পোস্টারে শাকিব খান
‘শিকারি’ ছবির পোস্টারে শাকিব খান

দ্বিতীয় দফায় যৌথ প্রযোজনায় যেসব ছবি বানিয়েছেন, কোনো ছবিরই ফসল ঘরে তুলতে পারেননি বলে প্রথম আলোকে বুধবার জানান অশোক ধানুকা। তিনি বলেন, ‘কোনো ছবি তৈরির সব নিয়ম মানার পরও মুক্তি দিতে পারিনি। মুক্তি দিলেও টাকা তুলে আনতে পারি না। আর ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির সময় দেখলাম নতুন নিয়ম, কোনো উৎসবে ছবি মুক্তি দিতে পারব না। এতই যখন সমস্যা, তাহলে ওখানে সিনেমা করে কী লাভ? সিনেমা হল ১৮০ টাকায় টিকিট বিক্রি করবে, আমি টাকা পাব ৩৫ টাকা! বাকি টাকা প্রেক্ষাগৃহের মালিক পাবে। সব জায়গায় সমস্যা।’

বিরতির পর জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করেছিল ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজ। তিন বছর পর বাংলাদেশি সেই প্রতিষ্ঠানকে ‘লোভী’ বলে আখ্যায়িত করলেন অশোক ধানুকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ সাহেবের লোভ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে অশোক ধানুকা বলেছেন, ওখানে মানুষদের খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। পরচর্চাই যেন কাজ। কোনো কাজ নেই, বসে আড্ডা মারা আর অন্যের বিরুদ্ধে কিছু একটা বলা!

এসকে মুভিজের ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির পোস্টার
এসকে মুভিজের ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির পোস্টার