নতুন নীতিমালায় তৈরি হয়নি একটি ছবিও

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরোনো নীতিমালায় তৈরি ব্ল্যাক ও স্বপ্নজাল ছবির পোস্টার
যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরোনো নীতিমালায় তৈরি ব্ল্যাক ও স্বপ্নজাল ছবির পোস্টার

গত বছর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ছবিগুলো হলো নবাব, বস ২ ও ডুব। তিনটি ছবিই আলোচিত হয় দুই দেশে। এ বছর যৌথ প্রযোজনায় স্বপ্নজাল ও নূর জাহান নামে দুটি ছবি মুক্তি পায়। তবে ছবি দুটি যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরোনো নীতিমালা (২০১২) মেনে নির্মাণ করা হয়েছিল। অবাক করা তথ্য হলো, গত বছরের ডিসেম্বরে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন নীতিমালা পাস হওয়ার পর তা মেনে এখনো কোনো ছবি নির্মিত হয়নি।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা ঘোষিত হয়। তবে নতুন নীতিমালায় ছবি তৈরির জন্য গত ১০ মাসেও দুই দেশের প্রযোজকদের কাছ থেকে আশানুরূপ চিত্রনাট্য জমা পড়েনি। যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য যাচাই-বাছাই কমিটির হিসাবে গত ১০ মাসে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মাত্র দুটি চিত্রনাট্য অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বর্তমানে নতুন কোনো চিত্রনাট্যও জমা নেই তাদের কাছে।

যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য জমা নেন বিএফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (উত্পাদন) মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ বছরের এপ্রিলের পর নতুন কোনো চিত্রনাট্য জমা পড়েনি। তবে দু-এক দিন আগে একজন এসেছিলেন চিত্রনাট্য জমা দেওয়ার জন্য। এখনো দেননি।’

এদিকে যে দুটি চিত্রনাট্যের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে প্রেম আমার ২ ছবিটির কাজ শেষের দিকে। তবে এই ছবি শেষ নাগাদ যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি দেওয়া হবে কি না, এ ব্যাপারে অনেকটাই অনিশ্চিত এর প্রযোজকেরা। গত ১২ সেপ্টেম্বর ছবিটির বাংলাদেশ অংশের শুটিং শুরু হয় সিলেটে। ভারতের শিল্পীদের শুটিংয়ের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অনুমতি না থাকার অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন ছবির শুটিং আটকে দেয়। এখন ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক আবদুল আজিজ জানান, তিনি আর বাংলাদেশে ছবিটির শুটিং করবেন না। ভারতেই হবে পুরো ছবির কাজ। কিন্তু বাংলাদেশে শুটিং না করলে নীতিমালা অনুযায়ী ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় থাকবে কি না, এ ব্যাপারে আবদুল আজিজ বলেন, ‘এত বাধা, এত সমস্যা নিয়ে তো বাংলাদেশে শুটিং করা গেল না। শুটিং শেষ করে যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটিতে জমা দেব। অনুমতি দিলে মুক্তি দেব। না দিলে আমদানিতে আনতে হবে।’ এই প্রযোজক জানান, তিনি আর যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করবেন না। তাঁর অভিযোগ, এমনিতেই যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা কঠিন করা হয়েছে। এরপর আবার বিএফডিসিতে কয়েকটি সমিতি পদে পদে স্বাধীনভাবে কাজে বাধা দিচ্ছে, তাই সমিতিতে নতুন নেতৃত্ব এলে যৌথ প্রযোজনা নিয়ে ফেরার ইচ্ছা আছে।

এদিকে বালিঘর ছবিটিও যৌথ প্রযোজনায় আর নির্মিত হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ছবিটির চিত্রনাট্য যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের নীতিমালায় প্রাথমিক অনুমোদন পায়। এরপরও নতুন নীতিমালা মেনে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুধু ছবির শিল্পীদের কাজের অনুমতি নিতেই এক বছর পার হয়ে গেছে।

ছবির চুক্তিবদ্ধ অভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, ‘বালিঘর-এর কলকাতার পরিচালক অরিন্দম শীল আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কলকাতায় ছবিটি তৈরি হবে।’ এই অভিনেতা বলেন, শুধু অনুমতি নিতে গিয়ে সময়ক্ষেপণের কারণেই বাংলাদেশে প্রজেক্টটি আর হলো না। তবে ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ক্রিয়েশনস এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চায়নি।