তাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ

অলোক নাথ, গৌরাঙ্গ দোশি, জুলফি সৈয়দ ও কৈলাশ খের
অলোক নাথ, গৌরাঙ্গ দোশি, জুলফি সৈয়দ ও কৈলাশ খের

যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন বলিউডের অনেক বড় ব্যক্তি। চলচ্চিত্রপাড়া ছাড়িয়ে এখন টেলিভিশন জগতের লোকজনও রোমহর্ষ যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করছেন। গতকাল পর্যন্ত হয়রানির অভিযোগ উঠেছে অভিনেতা অলোক নাথ, সংগীতশিল্পী কৈলাশ খের, মডেল জুলফি সৈয়দ, কমেডিয়ান উৎসব চক্রবর্তী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক গৌরাঙ্গ দোশির বিরুদ্ধে। কমেডিয়ান উৎসবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জের ধরে ভারতের জনপ্রিয় কমেডি গ্রুপ ‘এআইবি’ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এর প্রধান ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তন্ময় ভাট।

গত সপ্তাহ থেকে নারীর ওপর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বলিউড। শুরুতে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ তোলেন, ২০০৮ সালে অভিনেতা নানা পাটেকর দ্বারা তিনি হয়রানির শিকার হন। এত বছর পর আবার উঠে আসা সেই ঘটনা নিয়ে ভারতের বিনোদনমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন পরিচালক বিকাশ বেহেল ও অভিনেতা রজত কাপুর।

কৈলাশ বললেন ‘দুঃখিত’
হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কৈলাশ খেরের বিরুদ্ধেও। নারী আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক নাতাশা হেমরাজানি অভিযোগ তুলেছেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কৈলাশ নাকি স্কার্টের নিচ দিয়ে তাঁর ঊরুর ওপর হাত রেখেছিলেন। অবশ্য এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেননি কৈলাশ। গতকাল এক বিবৃতিতে কৈলাশ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনাই আমার মনে নেই। আমি কখনো সজ্ঞানে এমনটি করেছি বলে মনে হয় না। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, আমি সব সময় নিজের জগতেই আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করি। তবে এরপরও আমার কোনো আচরণে কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তাতে আমি দুঃখিত।’

মডেল জুলফির বিরুদ্ধে সাংবাদিকের অভিযোগ
ওই একই নারী আলোকচিত্রী ভারতীয় মডেল জুলফি সৈয়দের বিরুদ্ধেও গুরুতর হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। টুইটারে সেই সাংবাদিক লেখেন, ‘এক প্রমোদতরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি হোটেল রুমে জুলফি আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেন। পরদিন তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে আমি দারুণ ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।’ নাতাশা বলেন, ‘ওই সময় আমি সংবাদপত্রে এই বিষয় নিয়ে লিখতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সহকর্মীরা বলেছিলেন, এসব বিষয় পত্রিকা কখনো প্রকাশ করবে না। তাই আমি চুপ হয়ে যাই।’

নির্যাতনের শিকার ‘স্ত্রী’ ছবির অভিনেত্রী
শুধু যৌন হয়রানি নয়, মারাঠি অভিনেত্রী ফ্লোরা সাইনি শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক গৌরাঙ্গ দোশির বিরুদ্ধে। তা–ও প্রমাণসহ! গত সোমবার রাতে ফেসবুকে নিজের ভাঙা চোয়ালের দুটি ছবি দিয়ে ২০০৭ সালের রোমহর্ষ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন স্ত্রী ছবির ‘স্ত্রী’ চরিত্রের অভিনেত্রী ফ্লোরা। বলেন, অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার অভিনীত ২০০২ সালের ব্যবসাসফল ছবি আঁখের প্রযোজক গৌরাঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। সে সময় প্রায়ই নানাভাবে ফ্লোরাকে মারপিট করতেন গৌরাঙ্গ। ক্যারিয়ারের কথা ভেবে এত দিন মুখ খোলেননি। যখন ২০০৭ সালে মেরে ফ্লোরার চোয়াল ভেঙে দেন গৌরাঙ্গ, সে সময়ই সম্পর্ক ভেঙে যায় তাঁদের। কিন্তু এরপর থেকে বলিউডে আর অভিনয়ের সুযোগ পাননি এই মারাঠি অভিনেত্রী। দীর্ঘ সময় আড়ালে থাকার পর বছর কয়েক আগে অভিনয়ে ফেরেন ফ্লোরা।

এআইবি থেকে তন্ময়ের অব্যাহতি
এদিকে কমেডি গ্রুপ এআইবির সাবেক সদস্য উৎসব চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক নারী। বেশির ভাগই বলেছেন, উৎসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের বিবস্ত্র ছবি পাঠিয়ে নারীদের কাছ থেকে তাঁদের ছবি চাইতেন। এ বিষয়ে অনেকে এআইবির প্রধান তন্ময় ও গুরসিমরান খাম্বার কাছে বিচার চেয়ে অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু সে সময় বিষয়টি আমলে নেননি তন্ময় কিংবা গুরসিমরান কেউই। তাই নতুন করে যৌন হয়রানির বিষয়টি আবার আলোচনায় আসায় এখন ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে এআইবি। নিজের দোষ স্বীকার করে তন্ময় টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি জানতাম যে উৎসব এসব করছিল। তাকে জেরা করার পর সে বলেছিল বিবস্ত্র ছবিগুলো ভুলে পাঠিয়েছে। কিন্তু আমি এরপর শুনেছি যে উৎসব সেই মেয়েকে সে হুমকিও দিয়েছে। আমি সে সময় কোনো পদক্ষেপ নিইনি। এরপরও আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি লজ্জিত আমার কৃতকর্মের জন্য। আমার আরও শক্ত হওয়া উচিত ছিল।’ একই কথা বলে এআইবি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন গুরসিমরানও।

প্রডিউসার্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার বিবৃতি
গতকাল নারীর ওপর যৌন হয়রানি ঠেকাতে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের চলচ্চিত্র প্রযোজকদের সংগঠন ‘প্রডিউসার্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া’। তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, কর্মক্ষেত্র ও শুটিং সেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিগগিরই নতুন নিয়ম আরোপ করতে যাচ্ছে সংগঠনটি।
বিবিসি, এনডিটিভি ও ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে