এক হলে মুক্তি, চলচ্চিত্রে নতুন সংকট

মাতাল ও বেপরোয়া ছবির পোস্টার
মাতাল ও বেপরোয়া ছবির পোস্টার

১২ অক্টোবর ‘মেঘ কন্যা’ ও ‘আসমানী’ নামে দুটি নতুন চলচ্চিত্র মুক্তির কথা। চলচ্চিত্র দুটির পরিচালকও নতুন। প্রায় তিন মাস আগে এ দিনটিতে চলচ্চিত্র দুটি মুক্তির জন্য প্রযোজক সমিতিতে নিবন্ধন করা হয়েছে। হঠাৎ করেই ‘নায়ক’ ও ‘মাতাল’ নামে দুটি নতুন চলচ্চিত্র কথিত পুরোনো চলচ্চিত্র হিসেবে একই দিনে মুক্তির ঘোষণা করা হয়। তাদের কথা, চলচ্চিত্র দুটি একটি করে প্রেক্ষাগৃহে আগেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এতে মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া মেঘ কন্যা ও আসমানী চলচ্চিত্র দুটির প্রযোজকেরা তাঁদের চলচ্চিত্র মুক্তি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।

প্রযোজক সমিতির নিয়ম, ঈদ উত্সব ছাড়া একই দিনে সর্বোচ্চ দুটি নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া যাবে। তবে একই দিন নতুন চলচ্চিত্রের সঙ্গে একাধিক পুরোনো চলচ্চিত্র মুক্তিতে বাধা নেই। নিয়মানুযায়ী, চারটি চলচ্চিত্র (দুটি পুরোনো ও দুটি নতুন) একই সময়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হলে তাতে সমস্যা নেই। তবে নতুন চলচ্চিত্র পুরোনো বানানোর কৌশলটি প্রশ্নবিদ্ধ। তা ছাড়া দেশে বর্তমান প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা আড়াই শর মতো। তার মধ্যে শতাধিক হলে চলচ্চিত্র দেখার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। একই দিন চারটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে হল পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন প্রযোজকেরা। একটি প্রেক্ষাগৃহে এক দিনের জন্য নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়ে পুরোনো বানিয়ে আবার মুক্তি দেওয়ার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের মতে, চারটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে দর্শক ভাগাভাগি হয়ে যাবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো চলচ্চিত্র থেকেই বিনিয়োগ উঠে আসবে না। তা ছাড়া আগেই মুক্তির জন্য নির্ধারণ করা নতুন পরিচালকের চলচ্চিত্র দুটি প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়বে।

এ ব্যাপারটিকে চলচ্চিত্রশিল্পকে ক্ষতি করার আরেকটি নতুন অপকৌশল বলে মনে করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, দুটি চলচ্চিত্র আগে থেকেই তারিখ নিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই দুটি নতুন চলচ্চিত্র পুরোনো দেখিয়ে একই দিনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এতে আগে থেকে মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া চলচ্চিত্রগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। এই অশুভ কৌশল বন্ধ হওয়া দরকার। এসব চলচ্চিত্র আদৌ একটি হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। এ ব্যাপারে প্রযোজক সমিতিকে কঠোর হতে হবে।

প্রযোজক খোরশেদ আলম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার জন্য মেঘ কন্যা চলচ্চিত্রটির মুক্তি আগে তিনবার পিছিয়েছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রযোজক সমিতির নতুন কমিটি নেই। কমিটি হলে এই অরাজকতা থাকত না।’

মাতাল একটি নতুন চলচ্চিত্র। কিন্তু একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেখিয়ে পুরোনো হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে এটি। এই চলচ্চিত্রের প্রযোজক শরিফ চৌধুরীর দাবি, ৫ অক্টোবর ভোলার রূপসী প্রেক্ষাগৃহে মাতাল মুক্তি দিয়েছেন। এখন নতুন করে ১২ অক্টোবর দেশজুড়ে মুক্তি দিচ্ছেন। যদিও কৌশলটি চলচ্চিত্রের জন্য ভালো নয় বলে স্বীকার করেন এই প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘৫ অক্টোবর নেকাব চলচ্চিত্রটির এই কৌশলের কারণে আমি হল পাইনি। ফলে আমিও নতুন কৌশল নিয়ে এভাবে মুক্তি দিচ্ছি। আমার তো কিছু করার নেই।’

তবে রূপসী প্রেক্ষাগৃহে মাতাল ছবি মুক্তি পায়নি বলে জানিয়েছেন এর মালিক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার হলে মাতাল নামে কোনো চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। এখনো নেকাব চলছে এখানে।’ এরপর প্রযোজক শরিফ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল ধরেননি। মেঘ কন্যা চলচ্চিত্রের প্রযোজক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘মাতাল ও নায়ক চলচ্চিত্র দুটি চক্রান্ত করে ১২ অক্টোবর মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে আর পিছু হটব না। প্রচুর লোকসান হবে, তারপরও যে কয়টা হল পাব, মুক্তি দেব।’

এদিকে একই তারিখে নায়ক ও মাতাল মুক্তি পাওয়ায় ১২ অক্টোবর আসমানী মুক্তি দেবেন না বলে জানান চলচ্চিত্রটির পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন। এর আগে জাজ মাল্টিমিডিয়ার চলচ্চিত্র বেপরোয়া একই কৌশলে একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিয়ে রেখেছে। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক জানিয়েছেন, শিগগিরই আবার মুক্তি দেবেন চলচ্চিত্রটি।