গুণী শিল্পীর প্রতি গুণী শিল্পীর শ্রদ্ধা

কৌশিক শংকর দাশের উপস্থাপনায় ‘তোমায় গান শোনাব’ অনুষ্ঠানে সুজিত গাইছেন মোস্তফা
কৌশিক শংকর দাশের উপস্থাপনায় ‘তোমায় গান শোনাব’ অনুষ্ঠানে সুজিত গাইছেন মোস্তফা

আলোচনা শুরু করব দুটি চ্যানেলের সৌন্দর্যচর্চাবিষয়ক দুটি অনুষ্ঠান দিয়ে। ১৯ অক্টোবর রাত ৮টা ৩০ মিনিটে নাবিলা ইসলামের উপস্থাপনায় মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত হলো রূপচর্চাবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘রূপকথা’। অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রী সানজিদা তন্ময়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থাপিকা অতিথির রূপচর্চাবিষয়ক নানা ভাবনা তুলে ধরেন। বিশেষ করে মুখ ও চুলের যত্নে অভিনেত্রী সানজিদা নিজে কী করেন, স্বাস্থ্য সচেতনতায় তাঁর ভাবনা ও অভ্যাস কী—এগুলো একে একে নানা প্রশ্নের মাধ্যমে তুলে আনেন উপস্থাপক নাবিলা। এরপর রূপবিশারদ রহিমা সুলতানা রিতা রূপচর্চাবিষয়ক বিভিন্ন টিপস দেন। যেমন দুধ, লেবু ও জাফরান দিয়ে ন্যাচারাল ক্লিনজার তৈরি করে মুখে দিলে কী সুফল পাওয়া যায়, তা বর্ণনা করেন দর্শকের সামনে। আর শেষে দেখানো হয় সুস্থতার জন্য নিয়মিত ইয়োগাচর্চার উপকারিতা।

দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় বাংলাভিশনে ১৮ অক্টোবর রাত ৯টা ৫ মিনিটে। অনুষ্ঠানের নাম ‘সৌন্দর্য কথা’। উপস্থাপনা করেন অভিনেত্রী নোভা। এ অনুষ্ঠানেও অতিথি হিসেবে ছিলেন অভিনেত্রী সুষমা সরকার। শুরুতেই ফ্যাশন ফোকাসে দেখানো হয় এবারের পূজার ফ্যাশন। সেখানে এবার পোশাকে কী ধরনের রং ও কী ধরনের নকশা প্রাধান্য পেয়েছে, তা জানতে পেরেছেন দর্শকেরা। এরপর গয়না সম্পর্কে অভিনেত্রী সুষমার নিজের পছন্দ ও ভাবনা উঠে আসে তাঁর কথায়। পাশাপাশি রূপবিশারদ সায়মা রোজার একটি পূজার মেকওভার দেখানো হয়। শেষে দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও চুল কীভাবে কালো রাখা যায়, তার ওপর একটি টিপস দেন উপস্থাপিকা।

দুটি অনুষ্ঠানেরই ধরন–ধারণ ও বিষয়বস্তু প্রায় একই। দুটি অনুষ্ঠানেই তুলে ধরা হয়েছে মেয়েদের সৌন্দর্যচর্চার কথা। দেখে মনে হয়েছে, এটা গতানুগতিক। ছেলেদের সৌন্দর্যচর্চার বিষয়টি এখানে উপেক্ষিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অনুষ্ঠানে ছেলেদের ফ্যাশন ও ছেলেদের সৌন্দর্যচর্চাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

সম্প্রতি আরেকটি বিষয় সব চ্যানেলেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান। ১৯ অক্টোবর সকাল ১০টায় আরটিভিতে প্রচারিত হলো তেমনি একটি অনুষ্ঠান ‘হ্যালো ডাক্তার’। এ দিনের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘স্পাইন অপারেশন ও ব্রেন টিউমার অপারেশন’। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের স্পাইনাল সার্জন ডা. নূরুজ্জামান ও ব্রেন সার্জন ডা. ওয়াদুদ। দুজনই তাঁদের নিজ নিজ বিষয়ে চিকিৎসার অগ্রগতি ও সাফল্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে স্বদেশেই আজ এ চিকিৎসা যে যথেষ্ট আস্থা অর্জন করেছে, তা জানিয়ে দেন সব দর্শককে। এককথায় বলব, গণমাধ্যমে এ ধরনের অনুষ্ঠান সত্যিই অত্যন্ত মূল্যবান।

এবারে দুটি গানের অনুষ্ঠান। প্রথমটি শিল্পী চম্পা বণিকের উপস্থাপনায় পূজা উপলক্ষে ১৮ অক্টোবর রাত ১০টায় একুশে টিভিতে প্রচারিত হলো ‘আনন্দময়ী’। শিল্পী ছিলেন অনিমা রায় ও দেবলীনা সুর। তিনজনই সংগীতশিল্পী এবং গানও করেছেন তিনজনই। বেশির ভাগ পরিবেশনা ছিল পূজা ঘিরে। যেমন দেবলীনা গাইলেন ‘মা গো ডাকি তোমায় সারা বছর ধরে’, অনিমা গাইলেন ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’ আর চম্পা গাইলেন ‘শিশিরে শিশিরে শারদ বাতাসে ভোরের আগমনী’ ইত্যাদি। পূজার আড্ডা হিসেবে অনুষ্ঠানটি বেশ আকর্ষণীয়ই ছিল। তবে অনুষ্ঠানে তিনজনই মেয়ে শিল্পী না রেখে একজন ছেলে শিল্পী রাখলে হয়তো কিছুটা বৈচিত্র্যময় হতো। হয়তো আরও ভালো লাগত।

দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি কৌশিক শংকর দাশের উপস্থাপনায় সরাসরি প্রচারিত হলো মাছরাঙা টিভিতে ১৮ অক্টোবর রাত ১১টায় ‘তোমায় গান শোনাব’। এ দিন অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট নজরুলসংগীতশিল্পী সুজিত মোস্তফা। তিনি একাধারে প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেছেন এ অনুষ্ঠানে। শুরু করেছেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

উল্লেখ্য, তিনি নজরুলসংগীতশিল্পী হয়েও এ দিন প্রায় নজরুলের কোনো গানই করেননি। শুরু করেছেন ‘এত সুর আর এত গান যদি কোনো দিন থেমে যায়’ গানটি আইয়ুব বাচ্চুকে উৎসর্গের মাধ্যমে। তারপর একে একে গেয়েছেন ‘যারা ডাকে তারা ভুলে যায় আমি নেই তো এখানে আর’, ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’, ‘নাই–বা ঘুমালে প্রিয় রজনী এখনো বাকি’ ইত্যাদি। শেষে আবার আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে গাইলেন ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে’। একজন গুণী শিল্পীর প্রতি আরেকজন গুণী শিল্পীর অনুভূতি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ যে কেমন হওয়া উচিত, শিল্পী সুজিত মোস্তফা তা সুন্দর করে তুলে ধরলেন তাঁর কথায় ও গানে।

নানা দিক থেকে এ দিনের অনুষ্ঠানটি ছিল বৈচিত্র্যময় ও ব্যতিক্রম। তার মাঝে অন্যতম তাঁর গানের নির্বাচন। তাঁর কণ্ঠশৈলীর কারণে কেউ কেউ যে তাঁকে বলেছেন বাংলাদেশের মানবেন্দ্র, এ দিনের গানগুলো শুনে তা যথার্থ মনে হয়েছে। অনুষ্ঠানের আরেকটি আকর্ষণের দিক ছিল গান নিয়ে তাঁর কথোপকথন। সব মিলিয়ে এ দিনের অনুষ্ঠানটি দর্শক–শ্রোতার জন্য মনে হচ্ছিল উপভোগ্য, আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয়।

২০ অক্টোবর রাত ৯টায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো বিশেষ নাটক কালো চিঠি। রচনা মাসুম শাহরিয়ার, পরিচালনা চয়নিকা চৌধুরী। অভিনয়ে মাহফুজ আহমেদ, শমী কায়সার, আফসানা মিমি, অরুণা বিশ্বাস প্রমুখ। নাটকের গল্পে দেখা যায়, অভিনেতা মাহফুজ এক উড়ো চিঠির কারণে গভীর টেনশনে অভিনয় করতে পারছে না, শুটিং বাতিল করছে, মনোচিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে, পত্রিকায় নানা রটনা হচ্ছে ইত্যাদি। বিষয়টি যখন তার অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, তখন স্ত্রী শমী জানায়, সে–ই তার পার্শ্ব অভিনেত্রীর প্রতি সন্দেহবশত গোপনে এসব করেছে।

নাটকটির চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, নানা দিক দর্শকের জন্য ছিল আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য। আর গল্প সম্পর্কে বলব, মন্দ নয় আবার আকর্ষণীয়ও নয়। যে বিষয় নিয়ে গল্পে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে, তা পুরোপুরি যুক্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। একজন অভিনেতা শুটিংয়ে গিয়ে কোনো এক দিন বিলম্বে ফিরল, তা নিয়ে তার স্ত্রীর এত দীর্ঘমেয়াদি সন্দেহ বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। তবে পরিচ্ছন্ন নির্মাণ ও সফল নাটকীয় গুণ সৃষ্টির জন্য নির্মাতা প্রশংসার দাবিদার। আরও প্রশংসার দাবিদার, দীর্ঘদিন পর শমী, মিমি ও অরুণা বিশ্বাসকে এক নাটকে হাজির করার জন্য।