ফেসবুক লাইভে মঞ্চনাটক 'মহাস্থান'

‘মহাস্থান’ নাটকের একটি দৃশ্য
‘মহাস্থান’ নাটকের একটি দৃশ্য

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’। মহাস্থানগড়ের ভাসুবিহার থেকে নাটকটি সরাসরি দেখা যাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ফেসবুক পেজে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাঁরা নাটকটি দেখতে যেতে পারবেন না কিংবা মঞ্চমুখে বসার আসন পাবেন না, তাঁদের জন্য এ ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ভাসুবিহারে মহাস্থান নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। নাটকটি লিখেছেন সেলিম মোজাহার এবং নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। এতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৩ শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী। আগামীকাল উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর শনিবার একই স্থানে নাটকটির আরও একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

মহাস্থান নাটকে উঠে আসবে বাঙালির জাতিসত্তার ইতিহাস। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন ইতিহাসের পরম্পরায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত সময়কে। এর ভেতরে থাকবে শিকারের যুগ, বৈদিক যুগ, আদিবাসী পর্ব। থাকবে রামায়ণের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, সুফিসামা, বৈষ্ণব পদাবলি, ব্রাহ্মসংগীত, লোকগান, ব্রতচারীদের গান, পঞ্চকবির গান। বাদ যাবে না ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ।

মহাস্থানগড়ে রয়েছে নানা সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান ছিল পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকদের প্রাদেশিক রাজধানী। পরে হিন্দু সামন্ত রাজারাও এ স্থানকে নিজেদের রাজ্যের রাজধানী করেন। মহাস্থান প্রত্ননাটকের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ের শাসন-শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই স্থান একসময় ধর্মীয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়। নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক লিয়াকত আলী বলেন, এ নাটকে ইতিহাসকে শিল্পে রূপ দেওয়া হয়েছে। মহাস্থানের গৌরবোজ্জ্বল আখ্যানের ভেতর দিয়ে দেখানো হয়েছে সমগ্র বাংলার মহাস্থান হয়ে ওঠার গল্প। নাট্যকার সেলিম মোজাহার বলেন, ‘বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী পুন্ড্রনগরের মহাস্থানকে কেন্দ্রভূমিতে রেখে গৌতম বুদ্ধের সময় থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কে এ আখ্যানে বলার চেষ্টা করেছি। বাঙ্গালা অঞ্চলের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পট ও তার পরিবর্তনের ইতিহাসের ‘জানা ও জনপ্রিয়’ গল্পপ্রবাহ এ নাটকের আখ্যানভাগ।

কারিগরি মঞ্চায়নে ‘মহাস্থান’ নাটকের দৃশ্য
কারিগরি মঞ্চায়নে ‘মহাস্থান’ নাটকের দৃশ্য

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে নাটকটি মঞ্চায়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, শিবগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীর প্রমুখ।

নাট্য প্রযোজনার অংশ হিসেবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছিল ‘প্রত্ন আর্ট ক্যাম্প-২০১৮’। দিনব্যাপী মহাস্থানগড়ের ১০টি স্থানে এ আর্ট ক্যাম্পে যোগ দেন ১০ জন চিত্রশিল্পী। শিল্পীরা মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থাপনার ক্যানভাস পেইন্টিং ও স্কেচ করেন।

ভাসুবিহারে ‘মহাস্থান’ নাটকের দৃশ্য
ভাসুবিহারে ‘মহাস্থান’ নাটকের দৃশ্য

বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নিয়ে আগেও প্রত্ননাটক করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দেবাশীষ ঘোষের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় দেশের প্রথম প্রত্ননাটক ‘সোমপুর কথন’। পরে ওই বছরের ৬ জুন নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরের আড়াই হাজার বছরের পুরোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে উপজীব্য করে মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘উয়ারী-বটেশ্বর’।

মহাস্থান নাটকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, নাট্যজন আবদুস সেলিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূইঞা বিপিএম প্রমুখ।