'ফিরে এসো বাবা'

আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেন

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং এখন তাঁর কিডনি আর ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করছেন না। আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে তেমনটাই জানালেন তাঁর ছেলে সোহেল আরমান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাবার চিকিৎসার ব্যাপারে পুরোপুরি আশ্বাস দিলেও চিকিৎসকদের কাছ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখতে পারছি না। আমরা লাভ-ক্ষতি বুঝি না। আমরা চাই, তাঁর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। সেটা দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই হোক, তা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল। তিনি নিজের পরিবার বা সংসারের কথা ভাবেননি, সারাটা জীবন দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। তাঁর সেসব ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন চলচ্চিত্র, নাটক আর লেখালেখিতে। প্লিজ, তাঁর ত্যাগের কথা কেউ ভুলে যাবেন না।’

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের গুণী পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী আমজাদ হোসেনের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত রোববার তাঁকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চিকিৎসক প্রতিনিধিদল থেকে জানানো হয়, আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

সোহেল আরমান জানান, বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা পারিবারিকভাবে যোগাযোগ করেছেন। ব্যাংককের সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাঁরা আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার ব্যাপারে কিছুটা নিশ্চয়তা পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে যে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে, তাঁরা কী ভাবছেন, সেটা জানা যাচ্ছে না। ফলে আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসা এখন নির্ভর করছে এই চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর।

সোহেল আরমান নিজেও একজন নির্মাতা। আজ বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমজাদ হোসেনকে নিয়ে সোহেল আরমান লিখেছেন, ‘ফিরে এসো বাবা।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘যে মানুষটি এ দেশের গণমানুষের কথা বলতেন, অবক্ষয়ের কথা বলতেন, যারা নিপীড়িত, অনাহারী, অবহেলিত—তাদের কথা বলতেন। শ্রেণি সংগ্রামের কথা বলতেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের হয়ে প্রতিবাদ করতেন। “জীবন থেকে নেয়া” ছবিতে যে মানুষটির সংলাপ শুনে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। যে মানুষটির কলম এ বাংলার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। যে মানুষটির লেখা গান কোটি কোটি মানুষের ঘরে। এখনো কোনো যুবক গেয়ে ওঠে “জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো”। যে মানুষটির চলচ্চিত্র বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে “একটি আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র” হয়ে আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে এনেছে। যাকে নিয়ে বলে শেষ করা যায় না। এ যেন অফুরন্ত ট্রেন লাইন। বাবা, আর লিখতে পারছি না। তোমার এত এত সৃষ্টি, এ যেন এক বিশ্ববিদ্যালয়!’

সোহেল আরমান শেষে লিখেছেন, ‘মানুষটি মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে বাধাজনিত কারণে ছয় দিন ধরে হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাঁকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’

এদিকে আমজাদ হোসেনের অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার দুপুরে এই গুণী নির্মাতার দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তাঁদের কাছে আমজাদ হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে চান। সেখান থেকে বের হয়ে প্রথম আলোকে সোহেল আরমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, আমজাদ ভাইয়ের খবর পেয়েছি। তাঁর জন্য সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’